ইনসাইড আর্টিকেল

প্রার্থীর তালিকায় ব্যবসায়ী বেশী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/12/2018


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ কি ব্যবসায়ীদের ক্লাবে পরিণত হবে ? এমন একটি অস্বস্থিকর প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারন আগামী ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে যাদেরকে নির্বাচিত করবেন,সেই প্রার্থীদের শতকরা ৬১ শতাংশই পেশায় ব্যবসায়ী। এরপর শতকরা ১০ জন আইনজীবীরা। প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষন করে এমন তথ্য মিলেছে। পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিনিটি নির্বাচনেই বেড়েছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অংশ নেয়া।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক তিনজন সভাপতি এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। সালমান এফ রহমান ঢাকা-১ , ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন কুমিল্লা-৩ থেকে নৌকা নিয়ে লড়ছেন। উপনির্বাচনে আগেই খুলনা থেকে এমপি হয়েছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদি। এবার তিনি নৌকার প্রার্থী খুলনা-৪ আসন থেকে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাতলুব আহমেদের স্ত্রী এবং উইমেন চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সেলিমা আহমেদও এবার প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনিও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুমিল্লা-২ আসন থেকে। বিবিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুনশী আগেই এমপি হয়েছিলেন রংপুর-৪ আসন থেকে। এবারও প্রার্র্থী তিনি। এই সংগঠনের আরেকজন সাবে সভাপতি কাজী মনিরুজ্জমান এবার প্রাথী হলেন বিএনপি থেকে। তার নির্বাচনী এলাকা নারায়নগঞ্জ-১ ।

দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে এবার ক্ষমতাসীন দল থেকেই বেশী ব্যবসায়ী প্রার্থী হয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তবে ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস আইনজীবী নাকি মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। একই কথা বলা যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সম্পর্কে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি কি এখনো পূর্ণাঙ্গ রাজনীতিক হয়ে ওঠেননি?

প্রার্থী হিসেবে দেয়া হলফনামা থেকেই একজন রাজনীতিকের পেশা স্পষ্ট হয়। এখতো আর কেউ কমিউনিস্ট পার্টির মত ‘হোলটাইমার’ রাজনীতিক খুজে পাওয়া দায় । আর যারা নির্বাচন করেন, তাদের টাকা খরচ করতে হয় ,নির্বাচন কমিশনে দিতে হয় হিসেবও।

পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ক্রমশই বেড়েছে ব্যবসায়ীদের প্রার্থী হওয়ার হার।প্রথম নির্বাচনে প্রার্থীদের পেশা বিশ্লেষন করলে দেখা ঐ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি শতকরা ৩১ ভাগ ছিলেন আইনজীবীরা। কিন্তু এবার আইনজীবী প্রার্থি শতকরা ১৩ ভাগ। আর ১৯৭৩ সালে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাসায়ী ছিলেন শতকরা ১৮ ভাগ। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তা দাড়িয়েছে শতকরা ৫৯ ভাগে।প্রতি নির্বাচনেই বেড়েছে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহন। ১৯৭৯ সালে এই হার ছিল শতকরা ২৬ ভাগ,১৯৯১ সালে ৩৮ ভাগ,১৯৯৬ সালে ৪৩ ভাগ,২০০১ সালে ৫৮ ভাগ , ২০০৮ সালে ৫৭ ভাগ , ২০১৪ সালে ৫৯ ভাগ এবং এবার শতকরা ৬১ ভাগ।

সন্ধানী ইন্সুরেন্সের এমডি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটো টাঙ্গাইল-৬ আসনের প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ মিডল্যান্ড ব্যাংকের উদ্যেক্তা। তিনি ফরিদপুর-৪ আসনের প্রার্থী। রাজশাহী-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও বড় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তিনি দূরন্ত টেলিভিশনেরও মালিক। মিরপুর-১৪ এর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসলামুল হক মাইশা গ্রুপের প্রধান,আছে পাওয়ার প্লান্টের ব্যবসাও। একই ভাবে বিএনপি থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেনমুন্নু গ্রুপের এমডি আফরোজা খান রীতা, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে। একমির মালিকদের অন্যতম মিজানুর রহমান সিনহা মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী। সিলেট-৩ আসনে বিএনপি থেকে লড়ছেন আলবার্ট ডেভিডের এমডি শফি আহমদ চৌধুরী। আরকু মশলার মালিক আমিনুর রশীদ ইয়াসিন বিএনপির প্রার্থী কুমিল্লা-৬ আসন থেকে। এই তালিকা আরো অনেক লম্বা ,কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা রাজনিততে এলে ভালো নাকি রাজনীতিকরা এমপি হয়ে ব্যবসায় যোগ দিলে তা খারাপ? সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম নির্বাচনে এমপি হয়েই প্রথমে উপমন্ত্রী এবং পরে সারাবিশ্বের এমপিদের সংগঠন আইপিউএর প্রধান হয়েছিলেন। আবার প্রশাসনের সব্বোর্চ্চৃ পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রথমে প্রতিমন্ত্রী,পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকের ব্যবসা করতে গিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে অনিয়ম করে সেই পদ থেকে পদত্যাগেও বাধ্য হয়েছেন তিনি। এই উদাহরনের কোনটাকে সমর্থন করবো আমরা?

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭