লিভিং ইনসাইড

মেয়ে যখন বয়ঃসন্ধিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/12/2018


Thumbnail

ঝিনুক এবার ক্লাস নাইনে উঠছে, পরীক্ষা শেষ, এখন বড় ছুটি। বাবা-মা তাকে নিয়ে সবসময়ই বেশ নিশ্চিন্তে। তাদের মেয়ে শান্ত, পড়ালেখার বিষয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস। টুকটাক গান শিখেছে, মনের মতো করে কখনো বা গানও গাইতে বসে। বাবা ঝিনুকের কাছে বন্ধুর মত, তার সঙ্গে সারাদিনের সব কথা বলা, হাসিঠাট্টা দেখলেও মন ভরে যায়। কিন্তু সময় গড়াচ্ছে। আস্তে আস্তে ঝিনুক কেমন যেন বদলে যাচ্ছে আজকাল। সেটা বাবা-মায়ের চোখেও পড়েছে। সেগুলো নিয়ে প্রসঙ্গ তুলতে গেলে সে হয় উত্তর দিচ্ছে না, নয়তো কথা কাটাকাটি শুরু হচ্ছে।

এটা ঝিনুকের বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময়ে তার বয়সী প্রতিটি ছেলেমেয়েই বদলায়। তাদের স্বভাবচরিত্র, আচার আচরণ, শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে। কারণ কৈশোর থেকে যৌবনে পা দেওয়ার একটা কঠিন সময় এটি। পুরো পৃথিবীটা এদের কাছে নতুন রূপে ধরা দেয়। শৈশব কৈশোরের বাৎসল্য থেকে বেরিয়ে সে পরিণত বয়সের দিকে এগোতে থাকে। এই সময়টা হার না মানার, নিজেকে স্বাধীন ভাবতে শেখা আর নিজেকে মেলে ধরার দুরন্ত চেষ্টা থাকে।

আর সবকিছুর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে এই বয়সী একটা মেয়ে অনেক সমস্যা-প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। এজন্য সবার আগে তার বাবা-মাকে তার বিষয়টি বুঝতে হয়। পরিবর্তনটাকে মেনে নিয়ে তার পাশে থাকতে হয় সবসময়।

অভিভাবকদের বুঝতে হবে, এই সময়ে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে শরীরে। একটি মেয়ে এসময় পূর্ণাঙ্গ নারী হয়ে উঠতে থাকে। কারণ তার ঋতুস্রাব শুরু হয়। এই বিষয়টি তাকে একই সঙ্গে লজ্জা, ভয়, ক্ষোভের মুখে ফেলে দেয়। সে নিজেকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। কোনো সমস্যার মুখে পড়লেও সেটা কাউকে বলতে চায় না। মন খারাপ করে বসে থাকে।

এদের মধ্যে অনেক সময় খুব গভীর ও তীব্র অনুভূতি দেখা দেয়। মেজাজ-মর্জির ঘন ঘন বদল হয়। কখনো মন ভালো থাকছে কখনো বা খারাপ। মানসিক দিক দিয়ে তারা সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এই সময়ে একটি মেয়ের মধ্যে অন্যের অনুভূতি জানার ও বোঝার দক্ষতার বিকাশ হতে থাকে। এই কারণে তারা অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তাই এই অবস্থা বুঝে বাবা-মার তার প্রতি সহনশীল হতে হবে। তাকে বুঝতে হবে। কারণে অকারণে তাকে বকাবকি, রাগারাগি করবেন না। তার পরিবর্তনটাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে তাকে তার সমস্যা আর সেগুলোর সমাধান নিয়ে বোঝান।

মেয়েরা এই সময়ে নিজেদের শারীরিক গঠন ও পরিবর্তন সম্পর্কে আত্মসচেতন হয়ে ওঠে। হঠাৎ করে বড় হওয়ার ফলে তার কাছে সব নতুন লাগে। ফলে শারীরিক পরিবর্তনগুলো সে সবার কাছে মেলে ধরতে চায়। বাবা-মায়ের সেটা বোঝা উচিৎ। তাকে একটু সামলে চলতে সাহায্য করুন। বন্ধুর মতো করে তার পাশাপাশি থাকুন।

এসময় ছেলে বা মেয়ে উভয়ের সঙ্গেই বাবা-মায়ের কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া হয়। ফলে সম্পর্ক খারাপের দিকে যায়, দূরত্ব বাড়তে থাকে। কারণ এসময় তাদের মতের মিল হয়না। মেয়েটি হয়ত স্বাধীনতা চাইবে। তার মত করে চলতে চাইবে। বাবা-মা তার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে সেটা সে মেনে নিতে পারবে না। বাবা-মায়ের কিছুটা স্বাধীনতা তাকে দিতে হবে। তাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জনের সুযোগ দিন। পরিবারের কিছু বিষয়ে তার মতামত নিন। দেখবেন সে স্বাধীনতার সুব্যবহার শিখবে। তবে সবই করবেন সাবধানে।

এই সময়েই তাদের মধ্যে প্রাইভেসি বোধ আসে। সে একটু নিজের মতো করে থাকতে চায়। তাকে অবশ্যই একটি আলাদা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করুন। ছোট-বড় ভাইবোনকে তার সঙ্গে না রাখাই ভালো। আবার হুটহাট করে তার ঘরে ঢুকে পড়াও আপনার সন্তানের পছন্দ নাও হতে পারে। তার মন খারাপ হলে তাকে সে বিষয়ে জোর করে কিছু জানতে চাইবেন না। তাকে সময় দিন। স্বাভাবিক হলে জানতে চান।

এই সময়ে আপনার মেয়ের ভালোমন্দ বন্ধু-বান্ধব থাকবে। অনেক বাবা-মাই তাদের মেয়ের বন্ধুবান্ধবকে মেনে নিতে পারেনা। তারা ভাবে এই বন্ধুই হয়ত তাকে খারাপ পথে নিয়ে যাবে, পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটাবে। কিন্তু এই বয়সে বন্ধু প্রয়োজন। বুঝেশুনে বন্ধুত্ব করতে দিন। আর পড়াশুনা নিয়ে তাকে কখনো জোর দেবেন না। গুরুত্ব বুঝে তাকে বোঝান।

আর এই বয়সে কাউকে ভালোলাগা, ভালোবাসার মতো ঘটনা ঘটতেই পারে। মেয়েরা তার সহপাঠী, বন্ধু বা আত্মীয়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। সেই অবস্থা থেকে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা অঘটন ঘটতে পারে। এটা জানলে অভিভাবকদের কখনো কঠোর না হওয়াই ভালো।

মোটকথা, এই বয়সটাই সংবেদনশীল। এটা ভুল করার সময়, ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। আপনারা যারা বাবা-মা, তারা সন্তানদের কাছাকাছি থাকুন। বন্ধুর মতো করে তাদের সঙ্গে চলুন। ভুল হলে সেটা নিয়ে কোনো রূঢ ব্যবহার না করে তাকে বোঝান। তাকে আপনাদের ভালোবাসা আরও বেশি করে বোঝান।

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭