কালার ইনসাইড

এ বছর যা শিক্ষা দিল সিনেমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/12/2018


Thumbnail

বাংলা সিনেমার গল্প মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেম, মন্দ লোকদের আক্রমন, প্রধান খলনায়কের বাধা এবং সবশেষ মারপিট করে নায়কের জয়। এই একই কাহিনীকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মানুষকে দেখানো হচ্ছে বহু বছর ধরে। অনেকটা পুরোনো মোড়কে নতুন লেভেল লাগিয়ে পণ্য বাজারজাত করার মতো। তবে সেই গল্পটাও হুবহু কপি পেস্ট। আর কতদিন এই ধারা চলবে?

আশার কথা হলো, গত কয়েক বছরে সিনেমার ধারা বদলাতে শুরু করেছে। ব্যাপক আকারে না হলেও সীমিত আকারে। কিছু কিছু পরিচালক পুরনো ধাঁচের গল্পের বাইরে গিয়ে মারদাঙ্গা, রগরগে দৃশ্য না রেখে বিষয়ভিত্তিক সিনেমা নির্মাণ করছেন। সেসব সিনেমা মানুষ দেখছেও, আলোচনায় আসছে, কিছু পেয়েছে ব্যবসায়ীক সফলতা। ‘খাঁচা’, গহীন বালুচর’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘আয়নাবাজি’, ‘হালদা’, ‘জান্নাত’,‘পোড়ামন ২’,‘দেবী’,‘দহন’- সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসব সিনেমার অনেকগুলোই ব্যবসা সফল। আবার কিছু সিনেমা আছে যেগুলো ব্যবসা সফল না হলেও আলোচনায় ছিল।

একটা সময়ে সিনেমার চলার জন্য স্টার আবশ্বম্ভাবী ছিল। সেটা খুব বেশি আগের কথা নয়। আবার আমাদের যখন সোনালী দিন ছিল। তখন স্টারই মূল বিষয় ছিল না। গল্পের প্রধান্য থাকা জরুরি ছিল। সেই ধারা আবার ফিরেছে। এখন প্রিয় নায়কের সঙ্গে ভালো গল্পও দেখতে চায় দর্শক।  

বাংলাদেশের বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া ইদানিং প্রচলিত গল্পের বাইরে গিয়ে কিছু বিষয়ভিত্তিক ছবি নির্মাণে আগ্রহী হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিও প্রথম দিকের কিছু সিনেমায় প্রচলিত ধারার সিনেমা প্রযোজনা করেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটির সিনেমার গল্পের বিষয়বস্তু বদলেছে।

অনেকের মতে, পুরনো গল্পে পড়ে থাকলে মানুষ সিনেমা দেখবে না। মধ্যবিত্ত মানুষদের হলমুখী করা প্রয়োজন। আগের মতো মারামারি, চার-পাঁচটা গান দেখতে মধ্যবিত্ত দর্শকরা হলে যাবে না। কারণ ওর চেয়ে অনেক ভালো অ্যারেঞ্জমেন্টের গান এখন অনলাইনে অহরহ মিলছে।

বিষয়ভিত্তিক সিনেমা ভালো ব্যবসা করলেও এধরনের গল্পে খুব কম সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। যারা সেই পুরনো ধাঁচের গল্পের সিনেমা নির্মাণ করছেন, বিভিন্ন কারণে সেই সব ছবি আশানুরুপ ব্যবসা করতে পারছে না।

বাংলাদেশের সিনেমার বিপ্লব ঘটাতে চাইলে শুধু গল্পের দিকে নজর না দিয়ে ভালো অভিনয়শিল্পীর দিকেও গুরুত্ত্ব দেয়ার দরকার। অনেকে বলেন, বাংলাদেশের সিনেমা এখন শুয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলানো আসল কথা। যারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে বদলাতে পারছেন তারা গল্প নির্ভর সিনেমা নির্মাণ করছেন। আর যারা নিজেকে বদলাতে পারেননি তারা সেই সস্তা কাহিনীর সিনেমায় পড়ে আছেন। সেসব সিনেমা কেউ দেখছে না। অথচ তারা নিজেকে আপগ্রেডও করছেন না।

বছরটা আমাদের শিক্ষা দিল ভালো গল্পই স্টার তৈরী করবে। ভালো গল্পের কাছে টেকনোলজি কিংবা স্টার কাস্টও কিছু নয়। ভারতে এ বছর ব্যবসাসফল প্রায় সব সিনেমাই চলেছে গল্পের জোরে। সেখানে ছিলেন না আহামরী কোন নায়ক।

কিছু ছবি নিয়ে বললে…

দেবী: হরর এন্ড জাম্পস্কেয়ারস। সিনেমাটিকে সাইকোলজিক্যাল হরর বলতে হবে। আর হরর বললেই যে একটা আক্ষেপ চলে আসে বাংলা সিনেমা নিয়ে সেটাও কিছুটা ঘুচানোর চেষ্টা করেছেন পরিচালক এখানে। রগরগে ও হিংস্র দৃশ্যগুলো মোটামুটি খোলামেলা ভাবেই দেখাতে পেরেছেন পরিচালক। অনেকেই এগুলো দেখাতে চান না। চিৎকার আর সাউন্ড ইফেক্ট দিয়ে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে বেশকিছু জাম্পস্কেয়ার ছিল বিশেষ করে একটা খুব সাদামাটা সিন যেখানে রানু বসে আছে ছাদে পাশে একটা প্যাঁচা ঘুরোঘুরি করছে। সে সিনটা পাঁচ-সাত সেকেন্ডের জন্য ফ্রেম ধরেছিল, প্রায় দুই-তিন সেকেন্ড লেগে গিয়েছিল সিনটার বিশেষত্ব ধরতে এবং যখন ধরতে পারলাম তখন যে শিহরণটা এল, একদম আত্মা কাপানো। এরকমটা আগে খুব কম হয়েছে।

দহন: কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে কেউ ক্ষমতায় যেতে পারে না,এটি একটি নিকৃষ্টতম কাজ।আপনাকে বারবার আপনার বিবেকের কাছে দংশিত হতে হবে,আপনার কৃতকর্মের জন্য। ‘দয়া করে আপনারা ক্ষমতায় যাওয়ার লাইগা মানুষ হত্যা করবেন না’- দহন সিনেমার মূল ম্যাসেজ ছিলো এই কথাটা।

অনেকগুলো উপকাহিনী নিয়ে দহন সিনেমার কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। সিনেমার প্রয়োজনে সত্যিকারের বাসও পোড়ানো হয়েছে। বিশাল আয়োজনের একটি সিনেমা এটি।

আয়োজন,ক্যামেরার কাজ,কালার গ্রেডিং দেখে মাঝে মাঝে বলিউডের সিনেমার স্বাদ ছিল। পলিটিক্যাল ও সমসাময়িক চিত্র নিয়ে এমন সিনেমা বাংলাদেশে খুব একটা হয় না। সেক্ষেত্রে এ বছর দহন আলাদা স্বাধ দিয়েছে।

এভাবেই এ বছর সিনেমায় কিছু অতিরিক্ত পাওয়া গেছে।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭