যা আছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে

বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ তোলার পর তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে সম্পৃক্ত করার দিক-নির্দেশনা নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।’

ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানের শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে। পরে গত এক দশকে আওয়ামী লীগের শাসনমালের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরা হয় তথ্যচিত্রের মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক সাংসদ আব্দুর রাজ্জাকের স্বাগত বক্তব্যের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তারপর মঞ্চে এসে ইশতেহার ঘোষণা শুরু করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত দশ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে ৮০ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার।

২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে উন্নয়ন জংশনে মিলিত হওয়া, ২০৪১ সালে সোনার বাংলা, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে এ ইশতেহারে মূল লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

লিখিত ইশতেহারে বলা হয়, ‘আমরা বিভেদ, হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, অবরোধ বিশৃঙ্খলার রাজনীতি চাই না। চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি।’

আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের রায়ে আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতি নির্মূল করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সুসংহত করবে। সমাজের সকল পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়নে তারা বদ্ধপরিকর।

সেবামুখী দক্ষ জনপ্রশাসন ও জনহিতৈষী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তুলে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের জন্য শান্তিশৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধান করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলো হলো: আমার গ্রাম, আমার শহর- প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য নির্মূল, সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার যান্ত্রিকিকরণ, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু ইকোনোমি- সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ বলেন, ‘কাজ করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হতে পারে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা কাজ করতে গিয়ে যদি কোন ভুল-ত্রুটি করি তাহলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।’ প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ভবিষ্যতে এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন।

গত দশ বছরের আওয়ামী লীগের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের ইশতেহার প্রকাশের এই অনুষ্ঠানে।

বাংলা ইনসাইডার/বিকে/এমআর