ইনসাইড আর্টিকেল

নির্বাচনী ইশতেহারে ‘যুদ্ধাপরাধ’ চলা না চলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/12/2018


Thumbnail

শেষ পর্যন্ত ইশতেহার ঘোষণা করলো বিএনপি। আর একদিন প্রায় একই সময় ঘোষিত হয়েছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারও। আগের দিন  ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্ট ও বিএনপির আলাদা নির্বাচনী ইশতেহার হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। আর বিএনপি ইশতেহার ঘোষণার পর একজন সাংবাদিক বন্ধু প্রশ্ন তুললো ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মার্কা একটাই ধানের শীষ,তাহলে ইশতেহার দুটি কেন?’ শুনে আরেকজন সাংবাদিক বলে উঠলেন ‘মহাজোটেরও তো আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আলাদা ইশতেহার দিয়েছে।’ অপর একটি প্রশ্ন হচ্ছে ‘তাহলে কি ২০ দলীয় জোট বা ১৪ দলীয় জোটগতভাবে আলাদা ইশতেহার ঘোষণা করবে?’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি এবং দেশের দুই বড় দল যেদিন ইশতেহার ঘোষণা করল , ভোটের তখন বাকী আছে মাত্র ১১ দিন। আর প্রচার-প্রচারনা শেষ হবে আরো একদিন আগেই। ফলে এই ইশতেহার প্রচারের সময়ও খুব বেশি নাই। বরং প্রশ্ন আছে যে ‘ভোটাররা কি ভোট দেযার আগে দলের নির্বাচনী ইশতেহার কোনো বিবেচনায় নেয়?’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও ফ্রন্টের শরিকদল বিএনপি ইশতেহারে তার কোনো উল্লেখ নাই। এখন তাই প্রশ্ন করতেই হয় যে যদি নির্বাচনের পরে ঐকফ্রন্ট জয়ী হয় তাহলে যুদ্ধাপরাধের বিচার কি হবে? জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ নতুন কমিটি নির্বাচনের ভোট ছিল। ফলে দুই দলের ঘোষিত ইশতেহার নিয়ে টেবিলে চায়ের কাপে ঝড় উঠলো ব্যপক তর্ক-বিতর্কে। এর সাথে আরো যুক্ত হলো যে হাইকোর্ট জামায়াত নেতাদের বিএনপিদলীয় প্রার্থী হওয়া নিয়ে রুলনিশির বিষয়টিও। কারণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে ঐক্যফ্রন্টের ‘জামায়াত অবস্থান’  জানতে গিয়ে সাংবাদিকরা শুনেছে‘ খামোশ’। তাই একদল বললো ধানের শীষ জয়ী হলে বিএনপি কামাল হোসেনকে ‘খামোশ’ বলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবে না। কিন্তু তাহলে আওয়ামী লীগের ইশতেহারেও তো যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য নাই কেন? জানতে চেয়েছিলাম আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠান কাভার করে আসা একজন রিপোর্টারকে। তিনি জানালেন ‘নেতারা ব্যাখ্যা দিয়েছে যে আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে কয়েকটি রায় কার্যকরও করেছে। বিচার চলমানও আছে ,তাই এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই।’

আলোচনায় আরো উঠে এলো যে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির ইশতেহারে প্রায় একইভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে ‘দুই মেয়াদের বেশি কোনো ব্যাক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। আবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে।’ একজন সমালোচক বললেন ‘ভোটে জিতলে ঐক্যফ্রন্টের কে প্রধানমন্ত্রী হবে তারই ঠিক নেই আর ক্ষমতার ভারসাম্য’। পাল্টা বললো একজন ‘আরে আওয়ামী লীগতো আর এমন সংস্কার করবে না ,বরং তৃতীয়বার জয়ী হলে নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী করে তার ক্ষমতা আরো বাড়ানো হবে।’ তবে ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ‘পুলিশ-সামরিক বাহিনী ছাড়া চাকরীতে বয়স সীমা থাকবে না’ বলে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে ব্যপক সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন ‘এটা একটি বাত কি বাত’। আবার অনেকের মত হচ্ছে ‘এটা হচ্ছে দলীয় লোক বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তদের ইচ্ছামত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া। আর যে সব তরুনরা চাকরীতে প্রবেশের বয়স সীমা বাড়ানোর আন্দোলন করছে,তাদের খুশী করা। কিন্তু যদি প্রথমটা হয় তবে দ্বিতীয়টি সম্ভব নয়। এটা পরস্পর বিরোধী বলেই মনে করছেন কেউ কেউ। তবে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন কতটুকু হয় তা নিয়ে যেমন অনেক সন্দেহ আছে, তেমনি ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে না পারলেতো আর দায়-দায়িত্ব থাকে না। তাই ইশতেহারে ঘোষণা দিতে অসুবিধা কি? আমাদের দেশেতো সংসদের বিরোধীদলতো আর ‘ছায়া সরকার’ করবে না। আমরা কিন্তু তা চাই। কারণ ধারাবাহিক জয় কোনো দলের জন্য বরং বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে, যদি তারা ভোটার তথা জনগনের কথতা ভুলে গিয়ে আত্ম অহংকারে ‘ফ্রাঙ্কেস্টাইন’ হয়ে ওঠে। 


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭