ইনসাইড পলিটিক্স

যে কারণে ড. কামালদের চেয়েও জামাত গুরুত্বপূর্ণ বিএনপির কাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/12/2018


Thumbnail

কাগজে কলমে জামাতের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত দল হিসেবে এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারানোর মধ্য দিয়ে। কিন্তু ‘জামাত-বিএনপি একই মায়ের পেটের দুই ভাই’ এই কথার সত্যতা প্রমাণ দেওয়ার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে তারেক জিয়ার রিমোট কন্ট্রোলে চলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। নির্বাচনের যোগ্যতা হারানো জামাত স্বতন্ত্র হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ২২টি আসন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনও করছে।
    
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল বিএনপি এদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতাকারী এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত জামাতকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছে বহুকাল ধরে। ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নকে ভুলুণ্ঠিত করার যে ষড়যন্ত্রের বীজ উপ্ত হয়েছিল তার গোড়ায় পানি সার ঢেলে তরতাজা করেছিল সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান জামাতের গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে। এরপর একটু একটু করে জামাত এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছিল। মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত পেয়েছিল। বিভিন্ন নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধী জামাতের সঙ্গে জোট গড়েই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। সরকার গঠন করেছে জয়ী হয়ে। বেগম জিয়া জেলে, তার বড় ছেলে দশ বছর ধরে লন্ডনে পলাতক। সেখান থেকেই ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ড. কামাল হোসেনদের মাধ্যমে জামাতকে রক্ষার মিশনে নেমেছেন তারেক জিয়া।

ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল, আসম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকীদের চেয়েও জামাত কেনো বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তার কিছু যুক্তিপূর্ণ কারণও আছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ নির্বাচনে পরাজয়ের সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়ে গেলে বা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে জামাতের সঙ্গ ছাড়া কার্যসিদ্ধি করতে পারবে না বিএনপি। এসব কারণগুলো হলো-

১) আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একটি দল। ’৭০ এর নির্বাচনে জয়ী দলটির আহ্বানে সাড়া দিয়েই এ দেশের মানুষ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এদেশের স্বাধীনতাকামী প্রত্যেকটি মানুষই মুক্তিযুদ্ধে জামাতের ভূমিকাকে ঘৃণার চোখে দেখে। বিএনপি পাকিস্তানী ভাবাদর্শে বিশ্বাসী একটি দল। দু’দলের আত্মিক সম্পর্ক বজায় রেখে দেশকে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের দিকে নিয়ে যেতে বিএনপির প্রয়োজন জামাত সঙ্গ।     

২) মুক্তিযুদ্ধের একটি অন্যতম চেতনা ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর বার বার সামরিক শাসকরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতার চাদরে ঢাকতে চেয়েছে। এদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত হয়েছে, ‘বিসমিল্লাহ’ বসেছে বসার আগে। পাকিস্তানের পথে ফিরে যেতে স্বাধীনতার শক্তিকে ভুলুণ্ঠিত করতে বার বার এদেশের ওপর আঘাত এসেছে ধর্মবিদ্বেষের নামে। সেই পুরোনো পথেই হাঁটবে বিএনপি জামাত।      

৩) জামাতের রয়েছে প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী। ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রসংঘের ক্যাডাররা যেকোনো সময়ে এক মুহূর্তের নোটিসে দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর যার সক্ষমতা বিএনপির ছাত্রদলের নেই। এছাড়া জামাতের রয়েছে প্রশিক্ষিত কিলিং স্কোয়াড। জঙ্গি সম্পৃক্ততা তো আছেই। নির্বাচনের পূর্বে ও পরে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে এদের ব্যবহার করতে চাইবে বিএনপি।

৪) ভারত বিদ্বেষ এদেশের রাজনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেকোনো কিছুতেই এদেশের অনেক মানুষ ভারতের দুর্গন্ধ খুঁজে পায়। তার সবচেয়ে বড় ফায়দা লুটে নেয় বিএনপি ও জামাত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এমনটা দেখে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে ধর্মের নাম করে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভুল বোঝানো হয়েছিল স্বজাতির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, এবারও সেই পথেই হাঁটবে জামাত। সেই যুদ্ধ থেকে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর দমন, পীড়ন, নির্যাতন, গুম, খুন, ধর্ষণের তাণ্ডবলীলা চালাতে জামাতের জুড়ি নেই। এবারের নির্বাচনেও সেই পুরোনো অস্ত্র সংখ্যালঘু নির্যাতনের পথেই হাঁটবে তারা।  

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেই ইশতেহারে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে সকল জাতীয় বীরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করে স্কুল, কলেজে পড়ানো হবে এবং গবেষণা করা হবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানি মতাদর্শে বিশ্বাসী জামাত গোলাম আযম, সাঈদী, নিজামী, মুজাহিদদের মত স্বাধীনতা বিরোধীদের জাতীয় বীর মনে করে। যে কারণে বিএনপির ঘোষিত ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোন প্রতিশ্রুতি নেই।   

শেখ হাসিনা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচারকাজ চালু করেছিল, যা ছিল এদেশের স্বাধীনতাকামী আপামর জনসাধারণের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি তা নিয়ে ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। এখানে বলে রাখা ভালো, জিয়াউর রহমান সব কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক-দালালকে বিএনপিতে যোগদান করার সুযোগ দিয়েছিলেন। জিয়া সব প্রচারমাধ্যমে `পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী`র পরিবর্তে শুধুই `হানাদার বাহিনী` বলার নির্দেশ জারি করেছিলেন, ঘাতক-দালালদের বিচার সংক্রান্ত সব আইন বাতিল করে দেওয়ায় জেলে আটক প্রায় ১১ হাজার স্বাধীনতাবিরোধীকে আর বিচারের সম্মুখীন করা যায়নি। বরং সে সময় অনেক যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রীত্বসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়।      

ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে বিএনপি জামাতের ক্ষোভের আগুনে পুড়বে এদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ। জামাত তাদের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী নেতাদের শাস্তির প্রতিবাদে এদেশকে শ্মশানে পরিণত করবে। স্বাধীনতার স্বপ্ন ভুলুণ্ঠিত হবে। জাতির পিতাকে ’৭৫-র ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যে পাকিস্তানি ভাবাদর্শী রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট জামাতকে সেই সুযোগ করে দিবে। ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধাপরধারে দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ‘শহীদ’ উপাধি দিয়ে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একযুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি মরণ কামড় বসাবে জামাতের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে! সর্বোপরি, জাতির জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকর অশনী সংকেত।       

বাংলা ইনসাইডার/এসআর 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭