নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 23/12/2018
অফিসে জরুরি একটা ফাইল জমা দেওয়ার কথা বসের কাছে, এবং সেটা আজই। কিন্তু কামরুল সাহেবের সেটা একদমই মনে নেই। ফাইল ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো। এখন তো মাথায় হাত। কাজ কিছুই শেষ করতে পারেননি ফাইলের। বসের ঝাড়ি খেতে হবে মনে হলেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আজকাল যে কী হয়েছে বুঝতে পারছেন না তিনি। অনেক কিছুই ভুলে বসে থাকছেন। বাসার জন্য কিছু কিনতে হবে, সন্তানদের কার কবে পরীক্ষা, কার কবে জন্মদিন- কিছুই মনে রাখতে পারছেন না। কেন এমন হচ্ছে তিনি কিছুই বুঝে উঠছেন না।
কামরুল সাহেবের বয়স ৫৮। বয়স বাড়ছে আর এমনটা বেশি হচ্ছে। এমন সমস্যা আমাদের মধ্যে অনেকেরই হয়। এই ভুলে যাওয়া রোগকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিমেনশিয়া বলে। মূলত ৬০-৬৫ বছর থেকে এই রোগ বেশিমাত্রায় শুরু হতে থাকে। আর ৮০ বছর পার হলে সেই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। ডিমেনশিয়া হলে মস্তিস্কের এমন অবস্থা হয় যে, আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু মনে রাখা কঠিন হয়। চিন্তাশক্তি লোপ পায়। এর প্রধান লক্ষণ স্মৃতি হারিয়ে ফেলা। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষগুলো স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না। বুদ্ধি খাটাতে সমস্যা হয়, ভেতরে বেশি আবেগ কাজ করে। মূলত বয়স বাড়তে থাকলে এই সমস্যা বাড়তে থাকে। তবে তুলনামূলক অল্প বয়সীদের মধ্যেও এই সমস্যা হতে পারে।
কি করে বুঝবেন ডিমেনশিয়া হলো কি না
১. আপনার স্মৃতিশক্তি যদি কমে যায়। এমনও হতে পারে কারো মুখের চেহারা বা নামও আপনি মনে রাখতে পারছেন না। আপনার পড়া কোনোকিছুর কথা মনে রাখতে পারছেন না।
২. কারো সঙ্গে যেকোনো কথা বলার সময়ে ধরুন সঠিক শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনি বুঝতে পারছেন যে এখানে কোন ধরনের শব্দ বলতে হবে, কিন্তু উপযুক্ত শব্দটা বলতে পারছেন না।
৩. আপনার যখন ভুলে যাওয়া রোগ হবে তখন দেখবেন অন্যের কথার মধ্যেও আপনি মন দিতে পারছেন না। এমনও হতে পারে আপনি অন্যের কথা ধরতে বা বুঝতে পারছেন না।
৪. দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে না পারা বা ভুলে যাওয়া। ধরুন কিছুদিন আগের কথাও আপনি ভুলে গেলেন। বা গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু যা আপনাকে অবশ্যই করতে হবে তা আপনি ভুলে বসে আছেন।
৫. কিছু ভুলে যাওয়া রোগ হলে আপনি খেয়াল রাখবেন যে আপনার ব্যক্তিত্ব আর মেজাজও পাল্টে যাচ্ছে। আপনি আগে যদি গম্ভীর থাকেন, ভুলে যাওয়া রোগের পর আপনি হুট করে হাসিখুশি হয়ে যেতে পারেন। আবার আবার এর উল্টোটাও হতে পারে।
৬. মনযোগ দিতে না পারা ও যুক্তি দানে অক্ষমতার মতো বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। মন অস্থির থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি কিছুতে মন দিতে পারবেন না। আবার কথার পিঠে কথা বলতে গিয়ে উপযুক্ত যুক্তি দিতে গিয়েও আপনি বিপদে পড়বেন।
৭. হতে পারে ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন। অর্থাৎ চোখের দেখাতেও আপনি পিছিয়ে পড়তে পারেন। মানে সামনে যা কিছু দেখছেন, তাতে আপনি মন দিতে পারবেন না বা দেখে কিছু বুঝতে পারবেন না।
৮. যেকোনো বয়সেই আপনার মধ্যে আবেগ-অনুভূতি থাকবে। কিন্তু আপনি যখন সব ভুলে যেতে থাকবেন, তখন সেই আবেগ অনুভূতি নিজের মধ্যে থাকলেও সেটা আর কারো সামনে তুলে ধরতে পারবেন না।
৯. আচরণে অস্বাভাবিক উদ্বিগ্ন হয়ে যেতে পারেন। ধরুন কিছু মনে থাকছে না, কোনো বিষয়ে স্থির থাকতে অসুবিধা হচ্ছে। এ থেকে আপনার মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে।
১০. আপনি ডিপ্রেসডও হয়ে যেতে পারেন। অনবরত ভুলে যেতে থাকলে আপনার মধ্যে হতাশা চলে আসবে। নিজেকে ছোট মনে হতে থাকবে। এ থেকে আপনার ঘুম আর বিশ্রামেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।
এই রোগ থেকে বাঁচতে
১. আপনার মস্তিষ্ককে সজাগ রাখুন। এজন্য নিয়মিত সংবাদপত্র আর গল্পের বই পড়ুন, বিভিন্ন পাজল বা ধাঁধা খেলুন নিজে নিজেই। নিজেকে গুটিয়ে না রেখে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যান। সবার সঙ্গে মেলামেশা করুন।
২. নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। বয়স বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকলে নিয়মিত হাঁটুন। ওজন কখনো বাড়তে দেবেন না। কারণ অতিরিক্ত ওজনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। আর ডায়াবেটিস থেকে এই ভুলে যাওয়া রোগ বেশি হয়।
৩. আপনার উচ্চ রক্তচাপ আর কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করান। নিয়মিত চিকিৎসা করান, ওষুধ খান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
৪. ভুলে যেতে থাকলে তালিকা বানিয়ে সব কাজ করুন। কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলে তার পাশে মার্ক করে দিন। এতে আর মনে থাকা নিয়ে বিপদে পড়বেন না।
৫. রাতের বেলা ঘুমানোর আগে সারাদিনের ঘটনাগুলো মনে করুন। সবচেয়ে ভালো হয় ডায়েরি লেখার অভ্যাস করলে। এতে নিয়মিত লেখার চর্চা থাকবে, সব মনেও থাকবে।
৬. সবসময় চেষ্টা করুন মন খুলে হাসতে। এই হাসি মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। ফলে মস্তিষ্ক সহজেই কিছু মনে রাখতে পারে।
৭. আপনার স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে পুষ্টিকর, স্বাস্থসম্মত খাবার খান। এজন্য প্রতিদিন ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খান। নিয়মিত সবুজ শাকসবজি, শস্য, আপেল ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। সামুদ্রিক মাছ খান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবারও খান। অন্য চায়ের চেয়ে গ্রিন টি বেশি কার্যকর। আর অবশ্যই যাবতীয় অ্যালকোহলজাতীয় নেশার অভ্যাস বাদ দিন।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭