ইনসাইড আর্টিকেল

২০১৯ সাল: ফ্যাশনের চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/01/2019


Thumbnail

আমরা সবসময় সবখানে বেশ গর্ব করে বলি যে আমরা বাঙালি। এই জাতিবোধ আর পরিচয় নিয়ে আমাদের মধ্যে বেশ অহংকার কাজ করে। এই বোধগুলোকে প্রকাশ করার জন্য আমাদের খাওয়াদাওয়া, পোশাকআশাক থেকে শুরু করে যাবতীয় আচার ব্যবহারে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকে না। সত্যি বলতে আমাদের বাঙালিয়ানার ইতিহাস আর ঐতিহ্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ আর স্বচ্ছ। একে ধারণ করাও অনেকখানি সুখের।

কিন্তু সময় তো একরকম থাকছে না। সময় কখনো আমাদের সঙ্গে ছোটে, আবার আমরা কখনো সময়ের সঙ্গে ছুটি। আমাদের রীতিনীতিও বদলায়, সঙ্গে আমরাও বদলাই। এই বদলের ছাপ পড়ে আমাদের সামগ্রিক চালচলনে। এই ধরা যাক, আমরা যেমন ফ্যাশনের ধারণা মেনে চলি, সেই ফ্যাশন খুব রাতারাতি বদলে যায়। বিশেষ করে আমরা যখন সব বিষয়ে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যকে অনুসরণ করতে যাই।

আমাদের ফ্যাশনের প্রথম অংশ হলো পোশাক। নারীর পোশাকের কথা বলতে গেলে সবার আগে আসে শাড়ির কথা। শাড়ি ছাড়া পুরো বাঙালিয়ানা কখনোই সম্ভব না। সেই ৬০-৭০ দশকে শাড়ি ছাড়া নারী কিছু ভাবতেও পারতো না। বছর যেতে যেতে এখন সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, ফতুয়া, টপস আর কতো কিছু জায়গা করে নিয়েছে। সঙ্গে জিন্সের কদরও অনেক বেশি। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ আমাদের একবারেই দেশীয় পোশাক। এই পোশাকে আমরা বরাবরাই অভ্যস্ত।

এখনকার ফ্যাশনে আরেকটি নতুন বিষয় যোগ হয়েছে, সেটি হলো হিজাব। সব বয়সী নারীদের মাঝেই হিজাবের চল এখন তুঙ্গে। ধর্মীয় দিক বিবেচনা বা পর্দারক্ষার খাতিরেই যে শুধু হিজাব পরা হচ্ছে, সেটা কিন্তু নয়। হিজাব এখন ফ্যাশন। শাড়ি থেকে শুরু করে থ্রিপিস এমনকি জিনস আর টপসের সঙ্গেও পরা হচ্ছে হিজাব। পোশাক বা উৎসবের সঙ্গে মিলিয়ে হিজাব এখন বিভিন্ন স্টাইলে পরা হচ্ছে। এই হিজাবি ফ্যাশন কিন্তু আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য নয়। এটি মূলত প্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পর্দার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পোশাক। আমরা সেটাকে পর্দার পাশাপাশি ফ্যাশনে অন্তর্ভূক্ত করে ফেলেছি। এটা এখন ফ্যাশনের ‘সিম্বল’ও বলা যায়।

গলায় স্কার্ফ বাঁধা, হাতে চুড়ির বদলে রংবেরঙের ব্রেসলেট পরা, পায়ে ঝকমকে জুতো- এগুলো তো হরহামেশাই দেখি। আর জিন্স, ফতুয়া, টিশার্টের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। বিভিন্ন আয়োজন অনুষ্ঠান ছাড়া এখন শাড়ি পরতে খুব কমই দেখা যায়। শাড়ি এখন শখ বা উপলক্ষ্যের পোশাক। ট্রেন্ড হিসেবে এখন পাশ্চাত্যের হালকাপাতলা পোশাকই চলছে।

এবার আসি ছেলেদের প্রসঙ্গে। তাদের পোশাকের ফ্যাশনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না এলেও অন্যান্য কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে। এই যেমন এখনকার দিনে তরুণ ছেলেদের মুখে দাড়ি রাখার প্রচলন অনেক বেড়েছে। একটা সময়ে শুধু বয়স্ক আর ধর্মভীরু লোকেদের মাঝেই দাঁড়ি রাখার প্রচলন ছিলো। কিন্তু এখন তো চিত্র একেবারেই পাল্টে গেছে। এরপর কিছুদিন ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি রাখা ছিল অন্যতম ফ্যাশন। এখন সেই ফেঞ্চকাটকেও ছাড়িয়ে গেছে অন্য অনেক স্টাইল। কেউ শুধু চাপ দাড়ি রাখছে, আবার কেউ মুখ ভর্তি করেও দাড়ি রাখছে। এবং সেটা কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়। এই মুখে দাঁড়ি রাখার চল আমাদের দেশে ছিল না তেমন। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে দাড়ি রাখা প্রায় বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাদের অনুসরণে আমাদের দেশে সেটি ট্রেন্ড ছাড়া আর কিছু নয়।

আমরা এগুলোকে ধর্মীয় বা অন্যখাতে না নিয়ে নিজেদের ফ্যাশনের দিক থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। আমাদের চিন্তা হলো নিজেদের ধারাকে নিয়ে। আমাদের প্রচলিত সংস্কৃতি আর ফ্যাশন অন্য সংস্কৃতি আর ফ্যাশনের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে আমরা স্বকীয়তা হারাবো, সেটা আমাদের কাম্য নয় বলেই এতগুলো কথা বলা। আমরা বছরের পর বছর ধরে নিজের ভাষার বাইরে অন্য ভাষাকে এতো বেশি প্রাধান্য আর চর্চা করে আসছি যে, সেই ভাষা একেবারে আমাদের মাঝে মিশে গেছে। সেই নিজের ভাষাকেও তো আমরা এখন হারাতে বসেছি। সেখানে ফ্যাশন ধারাকে হারানো তো আরও সহজ হয়ে যাচ্ছে এখন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭