কালার ইনসাইড

২০১৯ সাল: দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতির চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/01/2019


Thumbnail

শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখার তারকাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। কী চায় নতুন সরকারের কাছে। সরকারের সঙ্গে নিজেদেরও কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেখান থেকে নতুন বছরে উত্তরণের কোন পথ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে কথা বলেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মঞ্চের শিমুল ইউসুফ, নৃত্যের লায়লা হাসান, গানের আলাউদ্দীন আলী ও কনা, নাটকের অপূর্ব, তাহসান, সিনেমার পূর্ণিমা, সিয়াম আহমেদ, শাবনুর।

২০১৮ পর্যন্ত শিল্প সংস্কৃতির যে অবস্থান ছিল তাতে কেউই নিজ অবস্থান থেকে খুশি নয়। কেন খুশি নয়? এক কথা, অন্যান্য মাধ্যমে যে উন্নতি হয়েছে। সে তুলনায় শিল্প মাধ্যম কিছুটা পিছিয়ে ছিল। এমন শিল্পবান্ধব সরকার বাংলাদেশে কখনো আসেনি, সেখানে কারো দ্বিমত নেই। সবার কথায় ছিল সরকারের প্রশংসা। সরকার যেভাবে শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেখানটায় প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। কারো মনে দুঃখবোধও রয়েছে, শিল্পীরা কেন এত অসহায় হবে। সরকারের প্রশংসার পাশাপাশি আরও শক্ত হাতে কিছু মাধ্যমে কাজ করতে হবে বলে জানান তাঁরা।

যেমন মঞ্চের শিমুল ইউসুফের মতে, একটা সময় শিল্প মাধ্যমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল মঞ্চ নাটক। যারা একটু সাংস্কৃতিক মাধ্যমে কাজ করতে চায়। তাদের মঞ্চের প্রতি ছিল অগাধ প্রেম। এই আমিই তো গানে প্রতিষ্ঠিত ছিলাম, রেডিও-টিভিতে ছিলাম পরিচিত মুখ- কিন্তু একটা সময় মঞ্চেই শতভাগ সময় দেয়া শুরু করি। সেটা এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে নেই। কেন নেই? না থাকলে ক্ষতি কী এটা প্রশ্ন হতে পারে। এখন তো ফেসবুক কিংবা রিয়েলিটি শো হয় একমাসের- সেখান থেকে ধরে নিয়ে অভিনয় করানো হচ্ছে। যারা কাজ করছে তাদের মধ্যে যে ট্যালেন্ট আছে, সেখানেও দ্বিমত করার জায়গা নেই। তবে অভিনয়কে প্যাশন করা, সেটা কিন্তু আসে মঞ্চ থেকে। মঞ্চ একটা আন্ডাররেটেড জায়গাই থেকে গেল। এখানে অভিনয় করেলে পত্রিকাতেও তাকে নিয়ে লেখা হয় না। অন্যদিকে টিভিতে দুইটা নাটক করলেই তাকে নিয়ে পত্রিকা জুড়ে ফিচার লেখা হয়। একটা সময় সবাই ভাবতো মঞ্চ ছাড়া টেলিভিশনে অভিনয় সম্ভব নয়। তবে আমি এখানে একটু দ্বিমত পোষণ করি। আমি মঞ্চকেই এমন শিল্প মাধ্যম হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে উৎসাহ নিয়ে নতুন প্রজন্ম কাজ করে। মঞ্চ থেকে এখানে ওখানে যেতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে যেন স্বচ্ছল থাকতে পারে মঞ্চ থেকেই। সরকারের সেখানে উদ্যোগী হওয়া উচিত। শুধু শিল্পকলাই নয়। ঢাকার মধ্যে আরও কয়েকটি স্টেজ তৈরি করা উচিত। যেখানে নাটক মঞ্চস্থ হতে পারে। এই একটা জায়গায় সব দর্শক কিন্তু আসতে পারে না। এইতো এক সিনিয়র অভিনয়শিল্পী এখন আর মঞ্চে আসে না। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এমনটা কেন? বলে জ্যাম ঠেলে সেই উত্তরা থেকে গিয়ে ঠিকমতো প্রাকটিস করতে পারবো না। অভিনয়শিল্পীর যদি এমন অবস্থা হয়। দর্শক আর কী করবে!

প্রবীণ নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসানের মতে, ‘নৃত্যশিল্পী তৈরি হচ্ছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে এ শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে আমাদের পৃষ্ঠপোষকতার সংকটটা দূর হয়। সেই সঙ্গে রাজধানীতে নৃত্য উপযোগী কোনো মঞ্চ নেই। ঢাকায় শুধু শিল্পকলা একাডেমির একটি মঞ্চে নাচ করা যায়, আর দেশে তেমন কোন নাচের মঞ্চ নেই। যেগুলো আছে তার কোনোটিই স্থায়ী নয়। সরকার যদি আলাদা করে এ মাধ্যমে নজর দিত। এখান থেকে বহির্বিশ্বে গিয়ে ছেলে-মেয়েরা অনেক কিছু অর্জন করতে পারতো বলে মনে করি।’  

আলাউদ্দীন আলীর মতে, ‘এই যে আমরা শিল্পীরা সরকারের কাছ থেকে অনুদান নেই। এখানে আমাদের কোন গর্ব করার জায়গা নেই। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দয়ালু মানুষ বলে আমাদের না করেন না। কিন্তু আমরা আমাদের যেটা প্রাপ্য সেটা কিন্তু পাই না। এই আলাউদ্দীন আলীর কত গান রেডিও, টিভি, মোবাইলে শোনা যায়। সেখান থেকে আমরা কোন কিছু পাই না। সরকারের কঠিন আইন করা উচিত এবং সেটা বাস্তবায়ন করা উচিত। না হয় শিল্পী কেন গরীব থাকবে! সৃষ্টিশীল মানুষরাই কেন গরীব থাকবে। সরকার যদি এসব দিকে আরেকটু নজর দিতেন তাহলে হয়তো আমরা খুব উপকৃত হতাম। তারপর আমাদেরে দেশের গানের নেই তেমন ইনস্টিটিউট। যেখান থেকে শুধু গায়ক-গায়িকাই নয়। ভালো কম্পোজার ও বাদ্যযন্ত্রী বের হতে পারে। আর হিসু শব্দ যখন গানে আসে তখন বোঝা যায় মানুষের রুচি। সেটা তো আসলে সরকার কতটা ধরে রাখবে!’    

কণা মনে করেন,‘ আমাদের গান বহির্বিশ্বের মার্কেটে যেন ছড়াতে পারি। সেখানে সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত। তাহলে গানের মাধ্যমটার অস্থিতিশীল অবস্থা অনেকটা কমবে।’

নাটকের শিল্পীদের এক কথা, আমরা সরকার থেকে অনেক সুযোগ সুবিধাই পাই না। যে সুবিধাগুলো অন্য মাধ্যমগুলো পায়। যেমন সিনেমার জন্য এফডিসি আছে। সেখান থেকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট পায়। আমরা কিন্তু যেটাই করি সবটাই নিজেদের পকেট থেকে। আর এখন যে অবস্থা নাটকের বাজেট নেই। সেই বাজেটে টেকনিক্যাল উন্নতি করে কোন কাজ করা সম্ভব নয়।’

সিনেমার মানুষদের এক কথা, কমপক্ষে প্রতিটি জেলায় সরকারী উদ্যোগে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ। যা ছাড়া আসলে এখন আর সিনেমা বানানোর কোন মানে নেই। তাছাড়া সরকার যে বরাদ্দ দেয় শিল্পখাতে। সেটা যেন আরও যথাযথভাবে নজরদারীতে রাখে। সরকার দক্ষ লোক দিয়ে যেন নিয়মিত হলগুলো মনিটরিং করে। দর্শক কী চায় তা জেনে যেন সিনেমা খাতকে ঢেলে সাজায়। এটা যেন মাথায় রাখে এ থেকেও আমরা দেশের অর্থনীতিতে কন্ট্রিবিউশন করতে পারি। যেমনটা হলিউড- বলিউড করে।’

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭