লিভিং ইনসাইড

রাশিচক্র বা ভাগ্যগণনা কি আসলেই বিশ্বাসযোগ্য?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/01/2019


Thumbnail

পত্রিকাটা হাতে আসার পর সবার আগেই রাশিফলের পাতাটি খুলে বসে রিয়াদ। উদ্দেশ্য ‘আজকের দিনটি কেমন যাবে’ সেটা দেখা। এই কাজটি তার নিয়মিত রুটিনের মধ্যে পড়ে। আজ কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে কিনা, অর্থযোগ কেমন হবে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেমন হবে দিনটি- এগুলো সে মোটামুটি প্রতিদিনই অনুসরণ করে। কোনোদিন রাশিফল কিছুটা মেলে, কখনো সেটা একদমই মেলে না। গত সকালে তার রাশিফলে লেখা ছিল কর্মস্থানে তিনি আজ সফল। কিন্তু ঘটলো তার উল্টোটা। অফিসে গিয়েই খেতে হলো বসের তুমুল ঝাড়ি। মনে হলো তার রাশিফল কি তবে তাকে ভুল নির্দেশনা দিলো?

রাশিফল, সংখ্যাচক্র পড়ে পড়ে এমন বিভ্রান্ত আমরা অনেকেই হই। খুব শখ করে রাশিফল, সংখ্যাচক্র দেখে কিছু ঘটনা হয়তো মেলে, কিছু মেলে না। এই প্রযুক্তির জয়জয়কারের মধ্যে আমরা কীভাবে এখনো রাশিফলকে বিশ্বাস করে দিন শুরু করি, সেটাই বড় প্রশ্ন।

বিভিন্ন রাশিফল-বিশারদরা, জ্যোতিষীরা নানা ইতিবাচক কথায় ভরপুর করে, নেতিবাচক বাণী অপেক্ষাকৃত কম দিয়ে, অস্পষ্ট, ধোঁয়াশা করে আপনার সম্পর্কে বানোয়াট কথা লিখে দেন হয়তো। আর আমরা জ্যোতিষীর ওপর ভরসা করে খুবই খুশি মনে এসব কথা বিশ্বাস করে নিই।

সৌরজগতের কতোগুলো গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতীকই হলো রাশি। কল্পিত মোট ১২টি রাশি রয়েছে- মেষ, বৃষ, সিংহ, কন্যা, তুলা, মিথুন, কর্কট, ধনু, মকর, কুম্ভ, মীন ও বৃশ্চিক। জোতিষশাস্ত্রে সূর্য ১২ মাসে ১২টা রাশিতে অবস্থানের কারণে এই ১২টি রাশি। তারা বলেন, সূর্য যখন যে রাশিতে অবস্থান করে তখন কারো জন্ম হলে সে ঐ রাশির জাতক বা জাতিকা।

সংবাদপত্র বা বিভিন্ন ম্যাগাজিনগুলোতে প্রতিদিনই প্রতিদিনের রাশিফল প্রকাশ হয়। সকালে নাস্তার ফাকে বা দুপুরের কোনো এক অবসরে আমরা সেই রাশির পাতাটিতে অনেকেই ঢু মেরে আসি অনেকেই। সারাটা দিন কেমন যাবে- সেটা জানলে তো মন্দ লাগে না। রাশিতে যা লেখা থাকে, তা সারাদিনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মেলাতেও বেশ ভালোই লাগে। এমনও দেখা যায় এই রাশির সঙ্গে মিলিয়ে সারাদিনের কাজ অনেকে মিলিয়ে করার চেষ্টাও করেন।

এই ধরনের রাশি বা ভাগ্যগণনার সঙ্গে আমাদের ধর্ম আর বিজ্ঞানের কোনোরকম কোনো সম্পৃক্ততার বিষয় আমরা জানি না। রাশি কি আসলেই আমাদের ভালো-মন্দ, করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিতে পারে? আমাদের যে ভাগ্য আগে থেকেই নির্ধারিত তা রাশিফল দেখে কীভাবে বোঝা যায় সে প্রশ্নের তো কোনো উত্তর নেই। 

আমাদের রাশিফলে কমন কিছু বিষয় আমরা দেখতে পাই, আবার কখনোবা মেনেও চলি। যেমন কোন রাশির মানুষ কেমন হয়, আজ অমুক রাশির অর্থযোগ রয়েছে, কোন রাশির মেযেরা কেমন, কোন রাশির ছেলেরা কেমন, কোন রাশি বিয়ে করলে ভালো যোগ হবে, কোন রাশির লোক ভালো বাবা-মা হবে, কোন রাশির লোক ব্যর্থ বা সার্থক- এই বিষয়গুলো আমাদের যেন জীবনধারারই অংশ।

মূল বিশ্বাস মতে রাশি বা গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। মানুষের ভাগ্যের ভালো-মন্দ রাশির প্রভাবে হওয়ার কথা না। ভালো-মন্দ, শুভ-অশুভের ক্ষেত্রে কারো কোনো প্রভাব নেই। গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের ক্ষেত্রে জ্যোতিষীরা যা বলে থাকে, সবই অনুমাননির্ভর কাল্পনিক বক্তব্য। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।  অথচ অসংখ্য মানুষ জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্যস্থানের মতো বাংলাদেশেও জ্যোতিঃশাস্ত্রের চর্চা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষগুলো জীবনযুদ্ধে বার বার ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ পন্থা হিসেবে জ্যোতিষীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাদের দেওয়া পাথর বা পরামর্শকে ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার মনে করে ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।


আমরা কি ধরনের সমস্যায় পড়তে পারি-

আমাদের অনেকেই বিয়ে-শাদি, চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, লেখাপড়া, বিদেশ গমন ইত্যাদি কাজে ভবিষ্যত সফলতার জন্য রাশির খোঁজ করি, জ্যোতিষিদের শরনাপন্ন হই। রাশিচক্র বা জ্যোতিষিরা কি বলছে সেটাই হয়তো বিশ্বাস করে বসেও থাকি। এতে করে আমাদের স্বাভাবিক জীবন তো ব্যাহত হয়ই। এছাড়া নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো চেষ্টাও আমরা করি না। অপেক্ষা থাকে যে ভাগ্য তো নিজে থেকেই বদলাবে।

আবার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে পাকেচক্রে যদি রাশিফলে দেওয়া কোনো ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যায়, আমরা সেটাকে একেবারে সত্যি বলে বিশ্বাসই করে ফেলি। এতে করে ভেতরে বদ্ধমূল ধারণাই হয় যে এই রাশিফলই আমাদের সঠিক ভাগ্য বলে দেবে।

কার লেখাপড়া, আর্থিক উন্নতির দৌঁড় কতটুকু সেটা হাত দেখে, রাশিচক্র দেখে নিমিষেই বলে দেয় অনেকে। আমরা সেটা বিশ্বাস করেও ফেলি। এজন্য কতোই না নিয়ম মেনে চলা, এই দিনে এটা করা যাবে বা এটা করা যাবে না, এটা ওটা ধারণ বা গ্রহণ করা- কতোকিছুই না করা হচ্ছে। এতে কি আপনি সাধারণ জনসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন না?

কখনো আবার রাশিফল দেখে মানুষের মৃত্যুর সময় নির্ধারিত করে দিচ্ছে, আয়ু গণনা করে দিচ্ছে। আমরা কতোদিন বাঁচবো, সেটা বলে দেওয়ার ক্ষমতা আদৌ গ্রহ, নক্ষত্র, বা জ্যোতির্বিদ্যার আছে কিনা এ নিয়ে আমাদের সন্দেহ থাকার পরও এগুলো আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে।

এই ভাগ্য বলে দেওয়া যদি সত্যিই হবে, তাহলে নিজের ভাগ্য বদলানোর কোনো চেষ্টাই মানুষ করতো না। কোনো ব্যক্তিই কখনো ব্যর্থ হতো না। রাশিফল মেনেই জীবনে একের পর এক সাফল্য ধরে আনা যেত।

রাশিফলের এই বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের বিষয়টি পুরোই আপেক্ষিক বিষয়। ব্যক্তিভেদে বিশ্বাস আর অবিশ্বাস মিলেমিশে যায়। আমরা কতটুকু কি বিশ্বাস করবো বা কীভাবে ধারণ করবো সেটা সম্পূর্ণই নিজের বিষয়। তবে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার যুগে রাশিফলের বিশ্বাসযোগ্যতার কোনো ভিত্তি নেই। তাই একে বিশ্বাস করে দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করার আগে আরো একবার ভাবা তো উচিৎ।


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭