লিভিং ইনসাইড

কান কথায় বিশ্বাস কি অসুখ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/01/2019


Thumbnail

চিল কান নিয়ে গেছে শুনে কানে হাত দিয়ে দেখার আগেই আমরা চিলের পিছে দৌঁড়ানো শুরু করে দিই। চিল কোত্থেকে এলো, চিল কীভাবে কান নিলো, কান নিয়ে কই গেলো- এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে মাথাই খারাপ করে ফেলি। এই যে মানুষের কথা শুনে ভাবলেন আপনার কানটা নিয়ে গেছে, পরে দেখলেন কান তো কানের জায়গাতেই রয়েছে- এতে লাভ কী হলো? মাঝখান থেকে আপনার চরম ভোগান্তি গেল, আপনি মানসিকভাবে অসুস্থই হয়ে গেলেন।

আশেপাশে কতো কথাই তো শুনি। তার কিছু সত্যি, কিছু গুজব। সত্যি বিশ্বাসে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা যখন গুজব বা কান কথায় বিশ্বাস করে ফেলি, সেগুলো মঙ্গল না এনে বরং অশান্তি নিয়ে আসে। আমরা আলোচনা-সমালোচনা, ঝগড়া-বিবাদ করে পুরো পরিস্থিতিই ঘোলাটে করে ফেলি। সমাজে এই ধরনের মানুষের সংখ্যাই এখন বেশি। এরা কথা ছড়াতে এবং রটাতে ভালোবাসে।

কী ধরনের সমস্যা তৈরি হয়

আমরা কান কথায় বিশ্বাস করে কখনো কখনো মাথা খারাপ করে ফেলি। হয়তো একটা ঘটনা ঘটলো। নিজের চোখে দেখার সুযোগ না হলেও লোকমুখে শুনলাম। নানা মুখ ঘুরে কথাটা হয়ত অন্যভাবে আমাদের কানে এসে পৌঁছালো। আমরা সেটাকে নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বানিয়ে ফেলতে পারি। মনে হবে, হায়, ঘটনাটা কি আসলেই এমন! এমনটাও ঘটে নাকি! এটা বিশৃঙ্খলা নিয়ে আসবেই। দেখবেন আপনি অস্বস্তিবোধ করবেন।

বেশিরভাগ কান কথা ভেসে বেড়ায় মানুষের নামে। অমুক এটা করেছে, তমুকের নামে এটা বর বেড়াচ্ছে- এমন ঘটনাগুলো অহরহ ঘটছে। এটা সত্য না মিথ্যা তা না জেনেই আমরা সেই মানুষগুলোর নামে ভালো বা খারাপ ধারণা করে বসে থাকছি। এটা উচিৎ নয়। যে কথা নিজে শোনেননি, নিজে দেখেননি, তা নিয়ে ধারণা করা কি আসলেই ঠিক?

এদিক-ওদিক থেকে বিভিন্ন কথা শুনে আমাদের বিভিন্ন অন্তসম্পর্ক গুলো নষ্ট হতে পারে। আপনি অন্য কারো থেকে কী শুনলেন, সেটা শুনে কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লেন। অথচ দেখা গেলো শোনা কথাগুলোর কোনো ভিত্তিই নেই। সেই ভিত্তিহীন বিষয়টিই প্রিয়জনদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করছে। ভাবেন, এগুলো বিশ্বাস করে ধরে বসে থাকাটা কি এক ধরনের অসুস্থতা নয়?

মনে হয় এটা এক ধরনের অসুখই। হুট করে যাচাই না করেই বিশ্বাস স্থাপনকে কখনো মানসিক সুস্থতা বলে না। এটা সমাধানের উপায় কী?

একটা বিষয় খেয়াল করবেন যে কান কথা বা গুজব থামানো বেশ কঠিন কাজ। কারো বিষয়ে বা কোনো বিষয়ে কেউ যদি অসত্য কথা বলেই ফেলে, সেটা থামানোর উপায় আমাদের থাকে না। কান কথা ছড়ানো ব্যক্তিগুলো আর যাই হোক, ইতিবাচক মানসিকতার তো নয়ই। এরা কখনো অন্যের ভালো চাইতে পারে না। যারা সত্য-মিথ্যের মিশেলে কথা রটনা করে তারা কখনো শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। এদের সঙ্গে কথা বলা বা বিশ্বাস করা বোকামি।

আর তাই তাদের থেকে একশো হাত দূরে থাকবেন। আশেপাশে কান কথা শুনলে কখনো সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ না। সেগুলোকে একেবারেই ‘ইগনোর’ করে যান।

আগে আপনি কথাগুলোকে যাচাই করে দেখুন। সেগুলোর আসলেই কোনো ভিত্তি আছে কিনা সেটা দেখুন। অন্য কোথাও থেকে সত্যতা যাচাই করবেন অবশ্যই।  

মনের করবেন বাতাসে অনেক কথা, অনেক গসিপই ভেসে বেড়ায়। সেগুলোকে গ্রহণ করবেন কী করবেন না সেটার পুরোই আপনার বিষয়। যে কথাগুলো আপনার জীবনে প্রভাব ফেলবে, সেগুলো গ্রহণ করবেন না। কঠোরভাবে সেগুলোকে এড়িয়ে যাবেন। আর যেগুলো কিছুটা গ্রহণযোগ্য মনে হবে, সেগুলো নিজের মতো করে ভেবেচিন্তে নেবেন।

যারা কান কথাগুলো রটায় তারা বেশিরভাগই ভীতু প্রকৃতির। তাদের সরাসরি বলুন যে আপনি তাদের কথায় আগ্রহী নন। দেখবেন তারা এতে ধাক্কা খাবেই। তবে বিচলিত দেখলে তারা যেন আরও সুযোগ পায়। তাদের সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করুন। কথাগুলো আপনার বিশ্বাস হচ্ছে কি হচ্ছে না, না হলে কেন হচ্ছে না সেটা বলে চলে আসুন।

আপনার পাশের লোকজন যদি কান কথা আমলে নিয়ে দিশেহারা হতে থাকে তবে আপনি কিছু দায়িত্ব পালন করবেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের যুগে যে কারও ব্যাপারে মিথ্যাচার করা বেশ সহজ। যেকোনো অন্যায্য কথা শুনে তার সত্যতা যাচাই না করে কোনো কাছের মানুষের ওপর ক্ষেপা যাবে না।

আমাদের জীবনে এমনিতেই বিভিন্ন সমস্যা ঘুরেফিরে বেড়ায়। অদ্ভুত লোকের কাছে শোনা কথায় কান দেওয়ার আমাদের সময় নেই। তাই কান দিন অন্য বিষয়ে। যেগুলো আপনার জীবনে কাজে লাগবে, এমন বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন, সেগুলোতে সময় দিন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭