নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 15/01/2019
নির্বাচনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাতের নেতাকর্মীরা বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। এই যোগদান হচ্ছে নীরবে, নিভৃতে। তবে বিএনপি এবং জামাতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘এটা যোগদান নয়, আত্মীকরন। সাময়িকভাবে জামাত বিএনপিতে আশ্রয় নিচ্ছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘এটা হলো কমিউনিস্ট মডেল।’ ৬০ এর দশকে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলো, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ গঠিত হয়। মূলত কমিউনিষ্ট পার্টির লোকজনই ন্যাপ গঠন করে। গ্রেপ্তার এড়াতে এবং কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকাণ্ড চালাতে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে দলে দলে ন্যাপে যোগ দেয় শিক্ষার্থীরা। বহুদিন ন্যাপ ছিলো কমিউনিস্ট পার্টির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সংগঠন।
নির্বাচনের আগে থেকেই জামাত ছাড়ার জন্য বিএনপির ওপর দেশী বিদেশী চাপ ছিলো। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারত বিএনপিকে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করার পরামর্শ প্রকাশ্যেই দিয়েছিল। নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকেই বলছিলো, জামাত সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে তারা ঐক্য করবে না।
কিন্তু ২০ দল রেখেই ড. কামালের সঙ্গে ঐক্য করে বিএনপি। নির্বাচনে জামাতের ২২ জনকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকও দেয় দলটি। এ নিয়ে বিএনপি ঘরে বাইরে সমালোচনার মুখে পড়ে। নির্বাচনের পর বিএনপির উপর জামাত ছাড়ার চাপ আরও বেড়েছে। এমনকি ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেন যে, জামাতকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া ভুল ছিল। বিএনপি নেতারা স্পষ্টই বুঝতে পারছেন যে, জামাতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সঙ্গ ত্যাগ না করলে বিএনপির পক্ষে এগুনো কঠিন। জামাত থাকলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী নয়। জামাত থাকলে, বিদেশি রাষ্ট্ররাও বিএনপির দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে রাজী নয়।
এর মধ্যে নির্বাচনের পর নতুন করে জামাত নিষিদ্ধের দাবি সামনে এসেছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেই জামাত নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তাঁর অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। জামাত এবং বিএনপির নেতাকর্মীরাও বলছেন, আওয়ামী লীগ তার তৃতীয় মেয়াদে জামাত নিষিদ্ধ করবে।
এই প্রেক্ষাপটে, বিএনপি এবং জামাত তাদের ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছে। যদিও দুই সংগঠনের কেউ কাউকে ত্যাগ করতে চায় না। তারা মনে করে বিএনপি এবং জামাতের সম্পর্ক আলাদা হওয়ার নয়। কিন্তু বাস্তবতার খাতিরে বিএনপি এবং জামাত উভয়েই সম্পর্ককে একটু নিস্ক্রিয় রাখার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেজন্যই জামাতের একটি অংশ বিএনপিতে মিশে যাচ্ছে। জানা গেছে, এর প্রধান কারণ দুটি। প্রথমত, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জামাতের বেশকিছু ভালো প্রার্থী রয়েছে। জামাতে থেকে তারা ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে আবার কথা হবে, সমালোচনা হবে। এজন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে থেকেই বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আন্দোলনের স্বার্থে বিএনপি হয়ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বাম দলগুলোর সঙ্গে জোট বাধতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি যেন ভারত বিরোধীতা এবং ইসলামী চিন্তাচেতনা থেকে দূরে চলে না যায় সে কারণেই জামাতের নেতারা বিএনপিকে আগলে রাখার জন্য বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে। তবে, এ নিয়ে যেন আবার নতুন করে কথাবার্তা না হয়, সেজন্য কাজটি করা হচ্ছে গোপনে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭