নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 21/01/2019
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির এক কারখানায় কাজ করেন হামিদ উল্লাহ। মাস গেলে বেতন পান মাত্র ৭ হাজার রুপি। এই সামান্য আয়েই টানাটানি করে চলে তার ৭ সদস্যের সংসার। একজন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে ভালো বেতনের দাবি তিনি করতেই পারেন। কিন্তু চাকরি হারানোর ভয়ে সে কথা চিন্তাও করেন না। শুধু হামিদ উল্লাহই নন, পাকিস্তানের হাজার হাজার কারখানা শ্রমিকের এই একই অবস্থা। অনেকে দু’তিন মাসেও বেতন পান না। জরা-জীর্ণ বস্তিতে পরিবার নিয়ে কোনো রকমে দিন কাটান। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানো তো দূরের কথা, দুবেলা মুখে খাবার তুলে দেওয়াই দায়।
শ্রমিকদের দুরাবস্থার জন্য অনেকে কারখানা মালিকদের দায়ী করেন। কিন্তু তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও ভালো না। করাচির একজন জুতা কারখানার মালিক জানান, দিনে ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ পান না তারা। ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার করেই কাজ চালাতে হয়। এটা তাদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আরেকজন চাল রপ্তানিকারক বলেন, সরকারের সিভিল ডিফেন্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা দপ্তর পর্যন্ত অন্তত ১৪ জায়গায় ঘুষ দিতে হয় তাকে। এসব কারণে ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণ খুবই সীমিত। বাধ্য হয়ে কর্মী ছাঁটাই করছেন তারা।
গত বছর জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে ক্ষমতায় এসেছেন বলে অভিযোগ থাকলেও তাকে নিয়ে আশাবাদী ছিল পাকিস্তানিরা। জীবনে বহু ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে নিজের টিমকে যেমন টেনে তুলেছেন, তেমনি দেশকেও তিনি সাফল্য এনে দেবেন বলে ধারণা করছিলেন তারা। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি বলেই মনে করছেন অনেকে।
ক্ষমতায় আসার পর ইমরান মন্ত্রী-এমপিদের বিদেশ ভ্রমণ খরচে কাটছাঁট, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের গাড়ি নিলামে তোলাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোকে আকর্ষণ করলেও কার্যত কোনো ফলই বয়ে আনতে পারেনি। দেশের দুর্নীতি দমন নিয়ে বড় বড় কথা বললেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপই নিতে পারেননি তিনি।
পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে টেনে তোলার বিষয়েও অনেক কথা বলেছিলেন ইমরান। গত চার দশক ধরে পাকিস্তানের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভারত এবং বাংলাদেশের তুলনায় মাত্র এক পঞ্চমাংশ হারে বেড়েছে। এ অবস্থা পরিবর্তনে ইমরানের তেমন কোন পরিকল্পনাও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে হাত না পাতারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পুরোপুরি ঘুরে গিয়ে সেই পথেই হাটছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মানব উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশ হলো পাকিস্তান। দেশটির ২১ মিলিয়ন মানুষই নিরাপদ পানি পান না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও পাকিস্তানের অবস্থা শোচনীয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, কম সময়ে এতো বিশাল সব সমস্যার সমাধান অসম্ভব। কিন্তু বিষয়টা হলো, চলমান অবস্থার পরিবর্তনে ইমরানের কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। ইমরান খান গর্জেছিলেন অনেক, কিন্তু বর্ষালেন কই?
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭