কালার ইনসাইড

বুলবুলের গানে বিখ্যাত হওয়ার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/01/2019


Thumbnail

অসংখ্য বিখ্যাত গান লিখেছেন ও সুর করেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। সেই গানে বিখ্যাত হয়েছেন এমন শিল্পীর সংখ্যাও কম নয়। এমন তিনজন শিল্পী বললেন তাদের বিখ্যাত হওয়ার গল্প:

সাবিনা ইয়াসমিন:

গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু, সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন- এই ত্রয়ীর কালজয়ী সৃষ্টি ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’ গানটি বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের অসংখ্য জনপ্রিয় গানে কন্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন। বুলবুলের সুরে গান গেয়ে তিনি পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। তবে তিনি স্বরণ করতে গিয়ে সবক’টা জানালার গল্প বলতে চাইলেন। জানালেন সেই স্মৃতিতা একটু বেশিই আজ মনে পরে। তিনি বলেন,‘আশির দশকে বুলবুলের আবির্ভাব। আমি তখন দারুণ জনপ্রিয় শিল্পী। বুলবুল পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজছেন। মাঝে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ নামে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করে নিজের হাত পাকিয়েছেন। বুলবুল একটি গান করার জন্য কয়েকবার বলেছিলেন। কিন্তু আমি ভাবলাম, ছোটমানুষ কী করবে! আবার কি মনে করে ডাকলাম। বললাম কিছু গান শোনাও তো। কিছু সুর করা আছে? দুয়েকটি গান শুনেই ‘থ’। গানের সুরগুলো মনে দাগ কেটে গেল। এখনও মনে আছে। অদ্ভুত ছিল সেই সুর! একদম আলাদা সুর। অমন গান আমি আগে শুনিনি। আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।’

সাবিনা বলেন,‘তার সঙ্গে গাওয়া ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি’,‘একদিন ঘুম ভেঙে দেখি তুমি নাই’ একটু বেশিই জনপ্রিয়তা পায়। মুক্তিযোদ্ধা ছিল বলে বাঙালির স্বাধীনতা নিয়ে গানের প্রতি একটু বেশি দুর্বলতা ছিল বুলবুলের। আর সবকটি জানালা গানটা গেয়ে তো আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। আমরা গান রেকর্ডিংয়ের পরই জানতাম যে গানটি অনেক শ্রোতাপ্রিয় হবে।’

তিনি জানান,‘ সর্বশেষ চারমাস আগে দেখা হয়েছিল। তখন বলেছিলাম আমরা আবার গান করবো। সুস্থ হয়ে উঠ। ও বলছিলো আমি কি পারবো আগের মতো? আমি সাহস দিয়েছি, এটাই চ্যালেঞ্জ। এখানেই আমাদের জিততে হবে। আমরা পারবো। ওর গানগুলো সংরক্ষণ হোক ভালোভাবে। সেটা সবার কাছে অনুরোধ করছি।’  

কনঁকচাপা:

নিজের শিল্পী জীবনে বুলবুলের অবদান স্বীকার করে কনঁকচাপা বলেন, ‘তিনি সবসময় ভালো কন্ঠের শিল্পী খুঁজে বেড়াতেন। আমাকেও তিনি নিজে খুঁজে বের করেছিলেন। ৯২ সালের কথা, একটা অনুষ্ঠানে শাকিলা আপা বললেন কনক, বুলবুল ভাই তোকে খুঁজছেন, তাড়াতাড়ি যোগাযোগ কর। আমি তাকে খুঁজে পাওয়ার আগে উনিই আমাকে খুঁজে বের করলেন। প্রথম গান ছিলো ‘সাদা কাগজ এই মনটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম’ মিলু ভাইয়ের সঙ্গে ডুয়েট। সেদিনই বুলবুল ভাই বললেন ভাবী, ইনশাআল্লাহ অনেক গান হবে, আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো কখনো পিছনে তাকাতে হবে না! সত্যিই সেদিন থেকেই আমার আর অবসর ছিলো না। বুলবুল ভাই মাসে গড়ে প্রায় দশটা ছবি হাতে নিতেন এবং তার বেশির ভাগ গান আমিই গাইতাম। নিজে অনেক গবেষণা করতেন কিন্তু গানের কন্ঠের ব্যাপারে নির্ভরশীল হতে চাইতেন। তার সুরে গাওয়া আমার প্রায় প্রতিটি গানই মাইলকলক হয়েছে। তাঁর গানেই প্রায় সব পুরস্কার পাওয়া আমার! তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

সর্বশেষ কথা হওয়া প্রসঙ্গে বলেন,‘ কিছুদিন আগে তিনি যখন অসুস্থ হলেন খোঁজ নিতে ফোন দিলাম। তখন গানপাগল মানুষটা সব কথা বাদ দিয়ে বললেন ভাবী ‘অনেক সাধনার পরে’ গানটি ধরেন তো! আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই আমার স্বামী বললেন গাও, এর মধ্যে বুলবুল ভাই শুরু করে দিলেন। আমিও ফোনেই তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে পুরো মুখটি গাইলাম! উনি আমাকে অনেক দোয়া করলেন! আমি হচকচিয়ে গেলাম। এটাই আমার ওনার সাথে শেষ কথা। তার দোয়াই তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। তার কাছে আমার ঋণের শেষ নেই।

ইলিয়াস কাঞ্চন:

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুর শোক ছুঁয়ে গেছে আশি-নব্বই দশকের সুপারস্টার ইলিয়াস কাঞ্চনকে। তিনি জানান, তারা সমবয়সী ছিলেন। তুই- তোকারি সম্পর্ক ছিল। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘একটি দুটি নয়। অনেক জনপ্রিয় গান ও করেছে যেগুলোতে আমি ঠোঁট মিলিয়েছি। বুলবুলের লেখা, সুর ও সংগীতে ‘আঁখি মিলন’ ছবির ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানটি কতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিল্পী ছিলেন এন্ড্রু কিশোর ও সাবিনা ইয়াসমিন। গানটি প্রচুর রিমেক হয়েছে পরবর্তীতে দেশে-বিদেশে। ওপার বাংলাতেও খুব হিট এই গানটি। আজও শিল্পীরা মঞ্চে উঠলে বা বিয়ে বাড়িতে এই গান গেয়ে থাকেন। অনেকেই গানটি রিমেক করে তারকাও হয়েছে। আমার ক্যারিয়ারে অনবদ্য একটি সংযোজন গানটি।’

শেষ জীবনে যোগাযোগ তেমন ছিল না। কাঞ্চন বলেন,‘আমি তো সিনেমায় নেই অনেকদিন। তাই ওর সঙ্গে কাজ করা হতো না আগের মতো। বুলবুলও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। জীবনের শেষদিকে অনেক কষ্ট করেছে সে। একাকীত্বে কেটেছে তার দিনগুলো। কোথাও আসতো না, দেখা হতো না। সর্বশেষ আমার জন্য গান করেছিল কয়েক বছর আগে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের জন্য একটি গান চাইলাম। ও করে দিল। এটি বাংলা ও ইংরেজি দুটো ভার্সনে তৈরি করা হয়েছে। ইংরেজি ভার্সনে কন্ঠ দিয়েছিল আমার ছেলে। বুলবুলই ওকে দিয়ে গাইয়ে নেয়। আমার ছেলেকে ও ভীষণ ভালবাসতো।’


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭