লিভিং ইনসাইড

বেরিয়ে আসুন হীনমন্যতা থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/01/2019


Thumbnail

গানের স্কুলে খুব শখ করেই ভর্তি হয়েছিল নওশিন। বাবা-মায়েরও প্রবল আগ্রহ ছিল তাতে। মেয়ে ভালো গাইবে, সবাই তাকে চিনবে- তেমনটাই চাওয়া ছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যেতে থাকে। গানের শিক্ষক তো বলেই বসলো যে গান নাকি সবার দ্বারা হয়না। ক্লাসে সবার দক্ষতা নাকি নওশিনের থেকে ভালো, তার গলায় গানগুলো বসছে না। অথচ নওশিন ভাবছে তার চেষ্টার তো কোনো ত্রুটি নেই, সমস্যা কোথায় তাহলে? সমস্যা হচ্ছে তার সুর তুলতে, সেটা ঠিকমতো পারছিল না, সময় লাগছিল। এই অভিযোগে, সহপাঠীরা কি ভাবছে মাথায় নিয়ে সে গানের স্কুল ছেড়েই দিল। কারণ সর্বদা মনে হতো আমি কিচ্ছু পারিনা, গান আসলেই আমাকে দিয়ে হবেনা।

এটাকে সহজ কথায় আমরা হীনমন্যতা বা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স বলি। এর ফলে নিজেকে সব অবস্থায় তুচ্ছ আর অকেজো মনে হতে থাকে। এটা এমন অনুভূতি যা ব্যক্তিকে মনে করিয়ে দেয় সে অন্যদের তুলনায় নিচু বা নিকৃষ্ট কিছু। এতে করে সামনে এগোনো একেবারেই অসম্ভব হয়ে যায়।

কেন হয় হীনমন্যতা

এর নির্দিষ্ট কারণ নেই। ব্যক্তি আর পরিবেশভেদে এটি ভিন্ন হয়। পড়াশুনায় পিছিয়ে, দেখতে অসুন্দর হলে, অফিসে সবার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কারো গলা ভাঙা বা তোতলামি থাকলে সে কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না। পাছে সবাই হাসবে সেই ভয়ে।

আবার কারো সন্তান যদি অসুস্থতা বা অটিজমে ভোগে, বাবা-মা তাকে লুকিয়ে রাখতে চায়। তারা ভাবে সমাজ বোধহয় সন্তানটিকে মেনে নেবে না। এর এমন অসংখ্য কারণ রয়েছে। এবার আসি এটাকে উতরে যাওয়ার কৌশলে-

সমস্যার কারণ খুঁজুন…

কেন বা কোন বিষয়ে আপনার মনে হীনমন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করুন। সমাধানের জন্য কারণ জানা জরুরি। আপনি সুন্দর মানুষ, আপনার চেয়ে মেধাবী কাউকে, কারো আর্থিক সচ্ছলতা, কারো সফলতা দেখলে আপনার নিজেকে খুব ছোট ভেবে মন খারাপ করেন। এগুলোই কি হীনমন্যতার প্রধান কারণ? এই উত্তর খুঁজে পেলে চিন্তা করে দেখুন। ভাবুন আপনার ভেতর এমন কিছু রয়েছে অন্য মানুষের মধ্যে নেই। আর আপনার মধ্যে কিছু না থাকা মানে সেটা আপনার দোষ নয়, সেটা আপনার বৈশিষ্ট্য। তখন দেখবেন হীনমন্যতা বোধ কমছে। আর কোনো দোষ থাকলে সেটা কাটিয়ে ফেলুন।

সব বিষয়ে পারফেকশন থাকে না

একটা মানুষের পক্ষে তো সব বিষয়ে পারফেক্ট হওয়া কখনো সম্ভব না। সেটা সবাই জানে। আপনি হয়ত ভালো গান গাইতে পারেন না, অফিসে আপনার পদোন্নতি হতে দেরি হচ্ছে, আপনি ভালো লিখতে পারছেন না- এগুলো ‍নিয়ে এত ভেবে গুটিয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না। আপনি হয়ত ভালো আঁকতে পারেন, সবার সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারেন। ভালোমন্দ মিলায় আপনি মানুষ। সবাই সবদিক দিয়ে অলরাউন্ডার হতে পারেনা।

অন্যের মত কেন হতে চাইবেন?

আপনি আপনার মতো করে সেরা হতে চেষ্টা করবেন, অন্যের অনুকরণ অবশ্যই করবেন না। অন্যের মতো হতে পারছি না- এটাই বেশি হীনমন্যতা তৈরি করে। আপনার যা আছে আপনি সেটাকেই ভালো করে গড়ুন, সবার মাঝে উদাহরণ তৈরি করুন। অন্যেরটা আপনাকে ভাবতে হবে না। অন্যের বৈশিষ্ট্য দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া যায়, অনুকরণ ঠিক না। এতে আপনার স্বকীয়তা কোথায় থাকলো?

বড় সমস্যা হলো ‘মানুষ কী ভাবল’ চিন্তাটি

মানুষ কি মনে করলো- এই ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝাড়ুন। আমরা আজীবন এটা ভেবেই নিজেকে শেষ করি ‘না জানি এটার জন্য মানুষ আমাকে কি ভাবছে’! সবসময় মাথায় রাখবেন মানুষের কাজই অন্যকে নিয়ে চিন্তা করা। সেগুলো তাদের করতে দিন, তাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আপনার নেই।  যেমন আছেন তেমন থাকুন, নিজের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। নিজস্ব গুণগুলো নিয়ে ভেবে একটা তালিকা করুন, সেগুলোকে কাজে লাগান। দোষ থাকলে সেটা নিজে বদলান। আর ভুলেও অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন না। কারণ আমরা সবাই সবার চেয়ে আলাদা। সবাই আলাদা পরিবেশে আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে ওঠে।

সবসময় আফসোস

সময় পেলেই আমরা ভাবি যে, এটা যদি এমন হতো, এটা যদি অমন হতো। মানে কোনোকিছুই আমাদের মনমতো হয়না। আমরা যেটা করি সেটা নিজেরই অপছন্দ হয়। যে জিনিস হয়নি বা হচ্ছেনা, তা নিয়ে পড়ে না থেকে যা আছে বা হয়েছে তা নিয়েই খুশি থাকুন।    

নেতিবাচক কথা বাদ দিন

আপনার যে গুণগুলো আছে সেগুলোকে আরও শাণিত করুন। আমার এত ধৈর্য হচ্ছে না, আমাকে দিয়ে এই কাজ হবে না, আমি বার বারই ব্যর্থ- এটা ভেবে কোনো কাজ শুরু করবেন না। ভাববেন যে ধৈর্য না থাক, আমি চেষ্টা করলেই পারবো। আজ না পারি, কাল অবশ্যই পারবো। নিজের মধ্যে সবসময় আত্মবিশ্বাস রাখুন।

নিজেকে সামাজিক করে তুলুন

আপনি যত গুটিয়ে থাকবেন, তত হীনমন্য হতে থাকবেন। লাজুক, মুখচোরা মানুষগুলো বেশি দ্বিধায় ভোগে। এজন্য আশেপাশের সবার সঙ্গে মিশুন। এতে আপনি বুঝবেন সবাই আপনাকে কেমন চোখে দেখে। আর এমন মানুষদের সঙ্গে মিশুন যারা আপনার বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিয়েই ভালোবাসে। যারা সমালোচনা না করে আপনার ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়, তাদের সঙ্গে চলুন। নিজেকে প্রাধান্য দিতে শিখুন।

এর পাশাপাশি সবসময় অন্যকে সাহায্য করুন। বিপদগ্রস্থ মানুষ বিপদ কাটিয়ে আপনার দিকে তৃপ্তির হাসি দিলেই আপনার হীনমন্যতা অনেকটাই চলে যাবে। বুঝবেন যে আপনি সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যে বিষয়গুলোতে ভয় পান, সেই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন, সম্ভব হলে মুখোমুখি হন।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭