ইনসাইড গ্রাউন্ড

ধারাভাষ্যকার হতে চাইলে জেনে নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/01/2019


Thumbnail

রিচি বেনো, টনি গ্রেগ, মার্ক টেইলর, মাইক হেসম্যান, ডেভিড লয়েড, হার্শা ভোগলে, ডেভিড গাওয়ার, নাসের হুসেইন, মাইকেল হোল্ডিং, টনি কোজিয়ার, ড্যানি মরিসন, পমি মোবাঙ্গা, অ্যালান উইলকিন্স, আতহার আলী খান, রবি শাস্ত্রী, রমিজ রাজা, আলফাজ উদ্দীন, শামীম আশরাফ চৌধুরী…ওহ! এই তালিকা তো শেষ হওয়ার নয়। যারা ক্রিকেটের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখেন, নিশ্চয়ই তারা নামগুলো চিনে ফেলেছেন। সব বাঘা বাঘা ধারাভাষ্যকার।  

ক্রিকেটে শুধু ক্রিকেটারই নয়। ধারাভাষ্যকারও হতে পারেন তারকা। যে কোন খেলাকে আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য করতে খেলোয়াড়, খেলার মান, মাঠের দর্শক, সম্প্রচারের পাশাপাশি দক্ষ ধারাভাষ্যকারের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশিই! বাংলাদেশের হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া তেমন কেউ সাড়া ফেলতে পারেনি এ পেশায়। তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার বেশ লোভনীয় পেশা! বাংলাদেশেরও সম্ভাবনা রয়েছে এ পেশায় ভালো করার। যদিও অবসর খেলেয়াড়রাই এ পেশায় আধিপত্য বজায় রাখেন, তবে বাইরের মানুষেরও কিন্তু কম সুযোগ নেই, দক্ষতাটাই আসল।

বিভিন্ন ধারাভাষ্যকারের সাক্ষাৎকার ঘেটে প্রথমেই যে কথাটা বলা যায়, আপনার ভাষার উপর দক্ষতা থাকতে হবে। এটা ছাড়া কখনোই আপনি একজন ভালো ধারাভাষ্যকার হতে পারবেন না।

তবে কিছু রুলস আপনাকে ফলো করতেই হবে। যেমন:

১. চোখের সামনে যা দেখবেন- তাই বর্ণনা করবেন। অর্থাৎ কোন ব্যাটসম্যান যদি ফ্রন্ট ফুটে এসে বোলারকে ব্যাক ড্রাইভ করেন তাহলে ধারাবর্ণনায় সেটাই বলুন, অন্য কিছু বলতে যাবেন না। বাংলাদেশে এফএম রেডিওর বেশ আধিপত্য রয়েছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক ধারাভাষ্যকর থাকেন। রেডিও ধারাভাষ্যকারদের অনেক বেশি ডিটেইল আলোচনা করতে হয়, টিভির ক্ষেত্রে অতটা না হলেও চলে।

২. একই কথা বার বার বলা যাবে না। মানে কথার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। এতে করে ধারাভাষ্যের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়। এক্ষেত্রে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করুন, তাহলে শব্দ বা শব্দ-গুচ্ছের পুনরাবৃত্তি অনেকাংশেই কমে যাবে। বিশেষণ ও উপমার ব্যবহারে সতর্ক থাকবেন।

৩. কখনো বলার মতো কিছু না পেলে সঙ্গীর সাহায্য নিন। এ কারণেই যে কোন খেলায় সাধারণত দুই বা দুই এর অধিক ধারাভাষ্যকার উপস্থিত থাকেন। মজার ছলে সে সাহায্যটা আপনি নিতেই পারেন।

৪. আপনাকে চতুর হতে হবে। শুধু খেলাই নয়, আরও অনেককিছুর উপর লক্ষ রাখতে হবে। ক্যামেরা কোন ফুল, পাখি বা দর্শকের সারিতে থাকা অন্য কোন তারকা বা রাজনীতিবিদের উপর পড়লে প্রসঙ্গ বদলে ফেলে তাদের সম্পর্কে বলতে দ্বিধা করবেন না। এতে দর্শকের আগ্রহ বেড়ে যাবে।

৫. ক্লোজ কল (নো বল, এলবিডব্লিউ, রান আউট.. ইত্যাদি) ছিল কিনা এর ক্ষেত্রে চট করে মন্তব্য করবেন না। অবশ্যই ‘সম্ভবত’ বা ‘আমার মনে হয়’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করবেন। তা না হলে আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।

৬. বিভিন্ন খেলার ভিডিও শব্দ ছাড়া দেখুন এবং নিজে নিজে ধারাভাষ্য দেয়ার মাধ্যমে অনুশীলন করুন। সেসব রেকর্ড করে পরে নিজেই নিজের সমালোচনা করুন। অনুশীলন এবং চর্চার কোন বিকল্প নেই!

৭. ভুল তথ্য বা নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ভুল বলবেন না। আর ভুল করে ফেললেও তা স্বীকার করুন, মনে রাখবেন আপনি একজন রক্ত-মাংসের মানুষ- ফলে ভুল হতেই পারে!

৮. প্রচুর পড়াশোনা করুন। টিভি বা রেডিও তে বিখ্যাতদের ধারা বিবরণী শুনুন। প্রতিবারই নতুন কিছু না কিছু শিখতে পারবেন। খেলাধুলা নিয়ে বিখ্যাতদের অনেক বই আছে। ম্যাচ দেখার সময় ছোট ছোট বিষয় খেয়াল করতে হবে।

বাংলাদেশের ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান মন খারাপ করে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ দল হারতে থাকলেও আমাদের আশার বাণী শোনাতে হয়। আমি না হয় শ্রোতাদের সান্ত্বনা দিলাম, আমাকে সান্ত্বনা দেবে কে? মন খারাপ হয়ে গেলেও স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে হয়, কথায় খেলার উত্তেজনাটা ধরে রাখতে হয়। এটা ধারাভাষ্যকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

পরিশেষে বলতে হয়, ধারাভাষ্য একটি শিল্প। বাংলাদেশের যারা ধারাভাষ্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের মান নিয়ে অনেকে ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেন। আমাদের দেশে এর কদরের জন্য প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা এবং ট্রেনিং দেয়ার মতো দক্ষ কিছু মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়া।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭