ইনসাইড পলিটিক্স

‘ডাকসু নির্বাচন বর্জনের সম্ভাবনা নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/01/2019


Thumbnail

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠনতন্ত্রের জন্য কমিটি, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের আচরণ বিধি নিয়ন্ত্রণ নিয়েও একটি কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিতের জন্য তারা এখন পর্যন্ত কোন কমিটি গঠন করেনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলের সহাবস্থান হচ্ছে অক্সিজেনের মতো। এ ব্যাপারে তারা এখনো গতিশীলতা আনতে পারেনি। এরপরও আমাদের ডাকসু নির্বাচন বর্জনের কোন সম্ভাবনা নেই।’

দীর্ঘ ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। গতকাল ডাকসুর সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এই তারিখ নির্ধারণ করেন। নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে ক্যাম্পাসের ১৪টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন। নির্বাচন উপলক্ষে ছাত্রদলের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদারের সঙ্গে। বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তাঁর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি ডাকসু নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে নেয়া।

বাংলা ইনসাইডার: ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন, বিষয়টি আপনার সংগঠন কীভাবে দেখছে?

আল মেহেদী তালুকদার: দীর্ঘ ২৮ বছর পর হাইকোর্টের নির্দেশনার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে তৎপর হয়েছে। তাদের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। গত ১০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের বিন্দুমাত্র লেশ নেই। সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরই যেন নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়, সে লক্ষ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি। পরিবেশ পরিষদের বৈঠকে সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন যখন বলবে ক্যাম্পাসে সকলের সহাবস্থান নিশ্চিত হয়েছে তারপরই তফসিল ঘোষিত হোক, এটাই আমাদের চাওয়া। কেননা সহাবস্থান নিশ্চিত হলেই ডাকসু নির্বাচনটা ফলপ্রসূ হবে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে।

দীর্ঘ সময় ধরে ডাকসু নির্বাচন কেন সংগঠিত হয়নি বলে আপনি মনে করেন?

’৯০ এর পর বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারপর ৫ বার ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তখন মূল প্রতিকূলতা ছিল বিরোধী মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনগুলোর আস্থার সংকট কিংবা তাদের অসহযোগিতা। এ কারণেই মূলত ডাকসু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহাবস্থান না থাকা, হামলা-নির্যাতন সত্ত্বেও আমরা শুরু থেকেই ডাকসু নির্বাচনের কথা বলে আসছি। যতবারই বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন আমাদের নির্বাচনের ব্যাপারে মিটিং-এ ডেকেছে প্রতিবারই আমরা গিয়েছি। এর আগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ডাকসু নির্বাচনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেখানেও আমাদের অংশগ্রহণ ছিল। সেখানে আমরা হামলার শিকার হয়েছিলাম, তারপরও ডাকসু নির্বাচনের দাবি থেকে সরে আসিনি। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার কারণেই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সত্যিকার অর্থে ডাকসু নির্বাচন চায়, তাহলেই তা অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব।

বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচনে আপনাদের না থাকার আশঙ্কা আছে কি?

ডাকসু নির্বাচন বর্জনের সম্ভাবনা একেবারেই নেই। জাতীয় নির্বাচন ও ডাকসু নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহাবস্থান নিশ্চিত করুক, আমাদের দাবি শুধু এটাই। আর বিএনপি অন্যান্য নির্বাচন বর্জন করছে। এর সঙ্গে আমাদের ডাকসু নির্বাচন বর্জনের কোন সম্পর্কই নেই।

শুরু থেকেই আপনাদের সহাবস্থানের দাবি প্রশাসন কতটুকু আমলে নিয়েছে?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কোন আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ নেয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা গঠনতন্ত্রের জন্য কমিটি, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের আচরণ বিধি নিয়ন্ত্রণ নিয়েও একটি কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিতের জন্য তারা এখনো পর্যন্ত কোন কমিটি গঠন করেনি। কেননা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকলের সহাবস্থান হচ্ছে অক্সিজেনের মতো। এ ব্যাপারে তারা এখনো গতিশীলতা আনতে পারেনি।

কিছু কিছু ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ আছে আপনাদের অধিকাংশ নেতাদের ছাত্রত্ব নেই। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

কেউ যদি ২ বছর আগে পাশ করে আবার কেউ যদি ৫ বছর আগে পাশ করে, দু’জনেরই কিন্তু ছাত্রত্ব থাকে না। যারা আমাদের ছাত্রত্বের ব্যাপারে অভিযোগ তোলে, তাদের নিজেদেরও কি বাস্তবিক অর্থে ছাত্রত্ব আছে? ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেউই নিয়মিত ছাত্র নয়। সেই অর্থে তাদেরও ছাত্রত্ব নেই।

আপনারা তো অনেকদিনই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আপনারা কিভাবে পূরণ করবেন?

ছাত্রদলের জনপ্রিয়তার কারণেই কিন্তু ক্ষমতাসীনদের মাথাব্যথার কারণ। অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারলেও ছাত্রদল পারে না। কেননা ছাত্রদল তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। নেতৃত্বে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া, প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম ঢাবি ছাত্রদল।

ছাত্রদলের হয়ে কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে?

যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে এখনো গঠনতন্ত্র প্রকাশিত হয়নি, তাই নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধীয় প্রতিটি বিষয়ই আমরা আমাদের ইশতেহারে তুলে ধরছি। আমরা প্রত্যাশা করি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ডাকসু থেকেই বের হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীর গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী যেন বিকশিত হয়, এই বিষয়গুলো কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায় তা আমাদের ইশতেহারে গুরুত্ব পাবে।

ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে জয় পেয়েছিল ছাত্রদলের প্যানেল। এবারও তার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা কতটুকু?

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ঢাবি ছাত্রদলের ঐতিহ্য ও গৌরবের কারণেই তারা অতীতে জয়লাভ করেছে। ঢাবির ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে ঢাবি ছাত্রদল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে ডাকসু নির্বাচনে আবার আমাদের বিজয় হবে।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭