ইনসাইড আর্টিকেল

স্বস্তির নাম ‘হারকিউলিস’, কিন্তু কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/02/2019


Thumbnail

কোনো এক কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করলো গুণ্ডারা। কিছুদিন যেতেই একে একে সবার ক্ষত বিক্ষত লাশ খুঁজে পাওয়া গেল। লাশের গলায় ঝুলানো নিজেদের কুকর্মের স্বীকারোক্তি, সঙ্গে এক সুপারহিরোর নাম। এমনটা আমরা প্রায়ই হিন্দি ছবিতে দেখে থাকি যে, বিচার না পেয়ে কেউ একজন মিস্টার ইন্ডিয়া হয়ে যায়, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অপরাধীকে শাস্তি দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশেও এমনটাই দেখতে পাচ্ছি আমরা। একের পর এক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ধর্ষকদের লাশ। লাশের গলায় ঝুলানো কাগজে গ্রিকবীর হারকিউলিসের নামও পাওয়া গেছে। যদিও এটা আইন বহির্ভুত কাজ এবং এটাও একটি অপরাধ। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষ এতে স্বস্তি পাচ্ছে।

মানুষের যখন দম বন্ধ হয়ে আসে, তখন যেকোনোভাবেই সে এটা থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেতে চায়, কিংবা পরিত্রাণ পেতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সমাজে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এর কোনো বিচার হচ্ছে না। একটা সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হলে একধরণের দমবন্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দেখা যায়, তখনি মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে চায়। সাম্প্রতিক এই হারকিউলিসের ঘটনাটা হয়তো তারই ফসল। আমাদের সমাজের মানুষ এগুলোকে বাহবা দেয়।

এক সময় দেখা যেত, মানুষ অপরাধ করতো। এরপর পুলিশ তাকে অ্যারেস্ট করতো। কিন্তু কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই বেরিয়া আসতো সে। এরপর আবারও একই অপরাধে লিপ্ত হতো। এ অবস্থা দেখতে দেখতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেল। তখনই শুরু হলো ‘ক্রসফায়ার’ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভুত হত্যা। মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হলেও ক্রসফায়ার জনপ্রিয়তা পেলো। মানুষ এতেই স্বস্তি খুঁজে নিতে চাইলো। সাধারণ মানুষ ভাবতে লাগলো, মারুক এগুলোকে, এগুলোকে মারাই উচিৎ। কীসের বিচার? এখনো ক্রসফায়ারের পক্ষে সমর্থন জানান অনেকেই।

কিন্তু সভ্য সমাজে এসব বিচার বহির্ভুত হত্যা মোটেই কাম্য নয়। সিনেমাতেই এগুলো ভালো, কিন্তু নাগরিক সমাজে এগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটা এক কথায় আইনের লঙ্ঘন। কিন্তু মানুষের ক্ষোভটাকেও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

এই অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো, যেকোনো অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা। অপরাধীদের বিচার করা। শুধু বিচার করলেই হবে না, সেই বিচারটা যেন দৃশ্যমান হয় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। মানুষ যেন বোঝে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে।

আমরা যেমন দেখি যে, একজন ভুল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাকে হাতকড়া পরানো হয়। অন্যদিকে একজন হত্যাকারী, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হাতকড়া ছাড়াই মুক্তহস্তে পুলিশের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হেঁটে যান। এগুলো দেখলে আইন, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে মানুষের আস্থাটা চলে যায়। এমনটা হতে থাকলে বাংলাদেশে এই কথিত হারকিউলিসদের উত্থান ঘটতেই থাকবে, যেটা কারও জন্যই ভালো হবে না।

 

বাংলা ইনসাইডার 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭