নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 03/02/2019
ভোর সাড়ে ৫টায় উঠেছি।
সকালে আমি যখন পুকুরে গোসল করতে গিয়েছিলাম তখন রফিক আমার বিছানার বালিশের নিচ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। নাশ মিয়া, জয়তুনের বাপ প্রমুখের সহায়তায় ১৪৭ টাকা আট আনার মতো তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা গেল। এই ঝামেলার কারণে আমি সকালের ট্রেন ধরতে পারলাম না।
বেলা ১২ টা ১৪ মিনিটের ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। একই কামরায় আমার সহযাত্রী ছিলেন এফ করিম ও ডাঃ আহসানউদ্দিন। রাজেন্দ্রপুর থেকে উঠলেন হাসান মোড়ল। স্কুল সম্পর্কিত বিষয়াবলী, তাঁর দায়িত্ব ও ২৪.২.৫২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ম্যানেজিং কমিটির সভা নিয়ে আমি তারসঙ্গে কথাবার্তা বললাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ট্রেন থামতেই আমি এবং এফ করিম সেখানে নেমে গেলাম।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশাল জনসমাবেশ। মেডিকেল কলেজ ও অ্যাসেমব্লি হলের কাছে এইমাত্র টিয়ার গ্যাস ছোড়ার বিষয়ে লোকজন বলাবলি করছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রায় ২০ মিনিটের মতো থেমে ডিপিআই অফিসে গেলাম। মুসলিম এডুকেশন ফান্ডের গ্রান্ট-ইন-এইডস সম্পর্কিত সহকারীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে জানালেন এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি স্মারক পাঠিয়ে দেবেন। বেলা ৩টার দিকে আমি ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
ইডেন ভবনের দ্বিতীয় গেটের কাছে আকবর আলী বেপারির সঙ্গে রেনুকে পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, তারক সাহার বাড়ি ও বরমি বাজারের দোকানটি তিনি কিনে নেবেন। এটি কিনতে টাকার জন্য তিনি জমি বিক্রি করবেন। তারসঙ্গে কথা বলে বাসে উঠলাম এবং বেলা সাড়ে ৩টায় এসডিও (উত্তর)-এর আদালতে উপস্থিত হলাম। এসডিওর সঙ্গে তাঁর খাস কামরায় দেখা করলাম বিকেল ৪ টা ৫ মিনিটে।
আমাদের স্কুল ও ২৪.২.৫২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ম্যানেজিং কমিটির সভা নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করলাম। প্রধান শিক্ষকের বিষয়াবলী ও অর্থ-আত্মসাতের ঘটনাটি কীভাবে সুরাহা করা যায় সে ব্যাপারে আমার পরামর্শের সঙ্গে তিনি একমত হলেন। তিনি আমাকে ৩.৩.৫২ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির একটি সভা আয়োজন করার জন্য বললেন। তখন তিনি শ্রীপুর থাকবেন। এরই মধ্যে তিনি আমার অনুরোধে শ্রীপুরের উদ্বাস্তু মিস্ত্রীদের ত্রাণের আবেদন অনুমোদন করলেন। তাঁর চেম্বার ছাড়লাম বিকেল ৪ টা ২৫ মিনিটে। আদালতের রেস্তোরায় সিআইবির অ্যাসিস্ট্যান্ট মহিউদ্দিন ও আমাকে সাদির মোক্তার নাস্তা খাওয়ালেন। বিকেল পাঁচটার দিকে আদালত ছেড়ে এলাম।
কামরুদ্দীন সাহেবের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে দেখা করলাম এবং দেরি না করে তার সঙ্গে ৯৪ নবাবপুর এএমএল অফিসে এলাম। মিনিট পাঁচেকের জন্য সেখানে থেমে কেমব্রিজ ফার্মেসিতে গেলাম। জহির ভাই এস এম জহিরউদ্দীন ও আমাদের চা দিলেন।
ডা. করিম ও আমি মেডিকেল কলেজে গেলাম। পুলিশের গুলিতে আহত ও নিহতদের মৃতদেহ দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। ডা. করিম চলে গেলেন। আমি মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে ইতস্তত ঘোরাফেরা করে রাত ১১টায় যোগীনগরে ফিরে গেলাম।
রাতের খাবারের পর ভাবীর সঙ্গে কথা বললাম রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
বিছানায় গেলাম রাত ১টায়।
আবহাওয়া : স্বাভাবিক। অপেক্ষাকৃত কম ঠাণ্ডা।
বি. দ্র. আজ দুপুরে খেতে পারিনি।
গভীর রাত সাড়ে ৩টায় পুলিশ বাহিনী আমাদের বাড়ি ঘেরাও করল এবং যুবলীগের অফিসে তল্লাশি চালাল। তারা ক্ষতিকর বা অবৈধ কিছু খুঁজে পেল না। যুবলীগের অফিস লাগোয়া আমার শোবার ঘর, তাই আমি ঘর থেকে সরে পড়ায় তারা আমার উপস্থিতি টের পায়নি।
ভোর চারটায় তাঁরা চলে গেল। এরপর আর ঘুমাইনি।
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট চলছে। গতকাল থেকে এক মাসের জন্য সিআর, পিসি, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজ বিকেলে অ্যাসেমব্লি বসেছে। ধর্মঘট পালনকারী ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অ্যাসেমব্লি হাউসের কাছে জড়ো হয়; যাতে তাদের কণ্ঠ অধিবেশনে উপস্থিত এমএলএরা শুনতে পান।
প্রথমে শুরু হলো গ্রেপ্তার করা। এরপর কাঁদানে গ্যাস ছোরা হলো। তারপর তারপর গুলি চালানো হলো মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে। গুলিতে চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হলো। আহত হলো ৩০ জন। জানা যায়, ৬২ জনকে জেলে পোরা হয়েছে। আরও শোনা যায় পুলিশ কয়েকটি মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছে। বেসরকারি সূত্রের দাবী মৃতের সংখ্যা ১০ থেকে ১১ জন।
লেখাটি তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি ১৯৫২ এর চতুর্থ খন্ডের ৪৬-৪৮ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত।
(আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর যে নামটি অনিবার্যভাবে এসে যায়; তিনি হলেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আরও তিনজন জাতীয় নেতাসহ তাকে বন্দি করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। সেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঘাতকের বুলেটে নিহত হন তিনি।)
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭