ইনসাইড পলিটিক্স

ক্ষমতাবানদের ভয় পায় দুদক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/02/2019


Thumbnail

নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎপরতা দৃশ্যমান। বিভিন্ন বিদ্যালয় ও হাসপাতালে অভিযান চালাচ্ছে দুদক। শিক্ষক এবং চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য তারা তৎপর হচ্ছে। দুদকের এই অভিযান ও তৎপরতাকে স্বাগতম জানাচ্ছে সাধারণ জনগণ। একইসঙ্গে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে দুদক কি শুধুমাত্র এই চুনোপুটি শিক্ষক, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দুর্নীতি কমিয়ে আনতে পারবে? কিন্তু রাঘব-বোয়ালরা কি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে?

দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দায়িত্বগ্রহণ করার পর বেশ কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছিল। সমাজের অনেক বড় বড় মাথাওয়ালা মানুষকে দুদক অফিসে ডেকে আনা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। কিন্তু তারপর তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষ জানে না। সাধারণ মানুষ মনে করে, ছোট শিক্ষক বা চিকিৎসকের দুর্নীতির চেয়ে সমাজে যারা বড় বড় ব্যবসায়ী, যারা সমাজের মাথা তাদের দুর্নীতি অনেক ভয়াবহ এবং রাষ্ট্রের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি দুদক সোচ্চার হতে না পারে তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান কখনই সফল হবে না।

এ ব্যাপারে দুদক বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছিল। হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদকে দুদক অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, আয়কর ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচারের মতো বেশ কিছু অভিযোগে তাকে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর এই অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি অদৃশ্য কারণে থেমে আছে।

বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও ধনকুবের মুসা বিন শমসেরকে দুদক অফিসে ডাকা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু এসব অভিযোগের তদন্তের যৌক্তিক কোন পরিণতি দেখা যায়নি। মুসা বিন শমসের আগের মতই বহাল তবিয়তে আছেন।

বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার ছেলে তাবিথ আউয়ালকে দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ ছিল এবং এ ব্যাপারে দুদক তদন্ত করছে বলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে দেখা যাচ্ছে, তাদের গায়ে আচড়টিও দিতে পারেনি দুদক। শুধু মিন্টু-তাবিথই নয় আরও কয়েকজন বিএনপি নেতাকে অর্থপাচার এবং অবৈধ অর্থ অর্জনের অভিযোগে তলব করেছিল দুদক। কিন্তু তাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা যায়নি।

বেসিক ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা সবাই জানে। বেসিক ব্যাংকের মধ্য ও নিম্নস্তরের অনেক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা ঋণ নিয়েছিলেন, তাদের অনেককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির সময় চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে সেসময় দুদকে ডাকা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকেও অবৈধ অর্থ উপার্জন, অর্থ পাচারের অভিযোগে দুদক তলব করেছিল। কিন্তু তাকে একবার তলব করার পরই সেখানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে।

দুদক যদি এই সমস্ত রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে কার্যকর এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করতে পারে তাহলে এরকম ভাবনা সাধারণ মানুষের মধ্যে হতেই পারে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুধুমাত্র আফজালের মতো ছোট ছোট পদের পিওন, দারোয়ান বা শিক্ষক, চিকিৎসকদের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু ক্ষমতাবানরা যদি দুর্নীতি করে এবং সকল ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিমানের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, দুদক যেহেতু একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, সেহেতু যারা ক্ষমতাবান এবং যাদের দুর্নীতিতে একজন শিক্ষক বা চিকিৎসকের দুর্নীতি ঢাকা পড়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে যেন দুদক কার্যকর এবং দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দেশে দুর্নীতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সেটাই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন।

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭