লিভিং ইনসাইড

ক্লান্তি কি কোনো অসুখ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/02/2019


Thumbnail

বাসার কাছাকাছি অফিস আসাদের। সকালে দারুণ নাস্তা করে হেলেদুলে সময়মতোই অফিস ধরতে পারে সে। খুব একটা চাপ না থাকলে অফিসেও যে খুব একটা ধকল যায় তাও না। তারপরেও অফিসে সারাদিন ঘুম ঘুম পায়, ক্লান্তিতে চোখ যেন বুজে আসে, হাই উঠতে থাকে। ফাঁক পেলেই মনে হতে থাকে ইস্, একটু শুয়ে বসে বা গড়িয়ে ঘুমিয়ে নিতে পারতাম! বাসায় ফিরলেও সেই একই ক্লান্তি। ভালো লাগে না, ঝিমুনি, খেতে ইচ্ছে না করা, বিছানায় গড়িয়ে পড়লেই শান্তি। মনে একটাই প্রশ্ন আসাদের। ‍ঘুম, খাওয়া, কাজ সব ঠিকমতো হলেও এতো ক্লান্ত লাগে কেন? এতে কোনো কাজই ঠিকমতো হয় না, কাজে মন বসে না।

এই সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগার সমস্যা আমাদের অনেকেরই আছে। সারাদিন পরিশ্রম করলে ক্লান্তি নামবে শরীরে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকে আবার কোনো কারণ ছাড়াই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। জীবনযাপন ঠিকমতো চললেও ক্লান্তি পিছু ছাড়ে না একদম। জানতে মন চাইবেই ক্লান্তি কেন হচ্ছে? এটা কোনো অসুস্থতা নয়তো? হ্যাঁ হতে পারে এটা অসুখ। মূল কথা, ক্লান্তি কোনো রোগের মূল উপসর্গই বেশি হয়। ক্লান্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকে শারীরিক কোনো না কোনো অসুস্থতা।

কেন হয় ক্লান্তি

ক্লান্তির বিষয়ে কী বলছে চিকিৎসাবিজ্ঞান, সেটা দেখে নিই আগে।  

১. আপনি যদি ক্রমাগত ক্লান্ত হতে থাকেন তবে সেটা রক্তশূন্যতা হতে পারে। কখনো নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা ব্যায়াম করতে গেলে শরীরে বল পাওয়া যায় না। এটা রক্তশূন্যতার কারণে হয়। রক্তশূন্যতা হলে রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন থাকে না। ফলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে এবং সবসময় ঘুম ঘুম ভাব থাকে।

২. ক্লান্তির আরেকটা কারণ থাইরয়েড সমস্যা। ত্বকে শুষ্কতা, শরীরে দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং শরীরে ক্লান্তি থাকলে সেটি থাইরয়েডের সমস্যা। তাই ক্লান্তি অবশ্যই রোগের উপসর্গ।

৩. ডায়াবেটিস শরীরে বাসা বাঁধার আগে ক্লান্তিবোধ হতে পারে। ডায়াবেটিসে রক্তের সুগার লেভেল কমে যায়। সুগার লেভেল কমে যাওয়ার ফলে শরীর নেতিয়ে পড়ে আর শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

৪. প্রচণ্ড হতাশা থাকলেও মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েন। হতাশ হলে বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না, আবার ঠিকমতো ঘুমও আসে না। ফলে কেমন একটা ক্লান্তিবোধ সবসময় লেগেই থাকে।

৫. পেটে অ্যাসিডিটি বা হজমজনিত কোনো সমস্যা থাকলেও ক্লান্তিবোধ হতে পারে। খাওয়াদাওয়ার অনিয়মের কারণে পেট খারাপ হয়, ফলে মাথাব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া, ঢেঁকুর উঠতে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশন থাকলেও ক্লান্তিবোধ হতে পারে। আবার নাকডাকা থেকেও ক্লান্তিবোধ হতে পারে।

৬. হার্টে কোনো অসুখ থাকলে শরীর ঝিমিয়ে পড়তে পারে। হার্টে সমস্যা দেখা দিলে শরীরের ব্লাড টিস্যুগুলো থেকে রক্ত শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে যোগান দিতে থাকে। এতে পেশিগুলো দুর্বল হয়ে ক্লান্তি চলে আসে।

৭. ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বা ‘সিএফএস’এক ধরনের সাধারণ অসুস্থতা। এই সমস্যা থেকে ক্লান্তি লাগতে পারে, দুর্বলতা ভর করতে পারে। এমন সমস্যায় আক্রান্তরা সারারাত ঘুমালেও পরদিনও তাদের ক্লান্তি দূর হয় না।

কী করবেন?

মানসিকভাবে শক্ত হোন। সকালে আলসেমি করে বিছানায় পড়ে না থেকে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন, চাঙা থাকুন। সব কাজে অভ্যাস করে তুলুন। প্রয়োজনে রুটিন করে ফেলুন। কাজে গতি আনুন। এতে ঝিমানোর সুযোগ থাকবে না। ক্লান্তিও আসবে না।

খাওয়াদাওয়ার সমস্যার কারণে ক্লান্তিভাব আসলে সেটা নিয়ন্ত্রণে আনুন। বেশি খেলে শরীর ভারী হয়ে আসে, শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। তখন খাওয়া সীমাবদ্ধ করুন। আবার একেবারে কমিয়ে ফেলবেন না। এতে শরীর দুর্বল হবে। শরীরের প্রয়োজনমতো খান। পুষ্টিকর খাবার খান অবশ্যই।

ওজন কমিয়ে ফেলুন। শরীরে বেশি চর্বি থাকলে তা কমিয়ে ফেলুন। হঠাৎ করে ওজন কমাবেন না। ধীরে ধীরে কমান। এর বেশি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। হঠাৎ ওজন কমলে ক্লান্তি বা অবসাদ বাড়ে। হার্টের সমস্যাও হতে পারে।

ক্লান্তি বা অবসাদের অন্যতম কারণ চাপ। এটি শরীরে অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন ও অন্যান্য হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদস্পন্দন বাড়ে, শরীরে শক্তির জোগান বাড়ে। এই অতিরিক্ত শক্তি আমাদের অবসন্ন করে।

একঘেয়েমি কাটিয়ে চমৎকার সময় কাটান। প্রতিদিন একই কাজ করে হাঁপিয়ে উঠলে কাজে একটু ভিন্নতা নিয়ে আসুন। একই কাজ করলে তো ক্লান্ত হবেনই। আর পর্যাপ্ত ঘুমান, বিশ্রাম নিন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭