লিভিং ইনসাইড

বাতাসে বিষ: কী করবেন আপনি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/02/2019


Thumbnail

শহরের প্রিয় রাস্তায় আরাম করে হাঁটবেন, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবেন, সব কাজগুলো নির্বিঘ্নে সেরে আরামে ঘরে ফিরবেন- এটাই তো সবাই চায়। কিন্তু সেই উপায় কি আমাদের নগরবাসীর আছে? একেবারেই নেই। সকালে স্কুল, কলেজ, অফিসে যাওয়ার জন্য যখন জ্যামে বসে থাকি, গাদা গাদা ধুলোবালি আর কালোধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই। এই অবস্থা প্রতিদিনের। এই অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা প্রতিদিন। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে এই বাতাসকে দূষিত করে, এটা মেনে নিচ্ছি বলেই বিশ্ব হুমকির মুখে পড়ছে দিন দিন।

সন্তানের হাত ধরে স্কুলে নিতে হচ্ছে এই দূষণের মধ্য দিয়েই। সন্তানটি বেড়ে উঠছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এই দূষণের জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, ভূক্তভোগী তো আমরা সবাই। দূষিত নগরীর মধ্যে আমাদের রাজধানী শহর তো অনেকটাই এগিয়ে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অতিরিক্ত বায়ূ দূষণের কারণে শিশুদের রক্ষা করতে চার শতাধিক স্কুল বন্ধ রাখা হয়। সেই সপ্তাহে ব্যাংককজুড়ে বিষাক্ত ধোঁয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে বায়ূ দূষণের মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছে গেছে দেশটিতে। যানবাহন, নির্মাণকাজ, ফসল পোড়ানো এবং বিভিন্ন ফ্যাক্টরি ও কল-কারখানা থেকে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে। কর্তৃপক্ষ বায়ূ দূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

এমন উদাহরণ অহরহ রয়েছে। এখন প্রয়োজন আমাদের সতর্কতা। কী করবেন আপনি তা দেখে নিন-

দূষিত রাস্তা এড়িয়ে চলুন

আপনার চলাচলের বিকল্প রাস্তা থাকলে আপনি রাস্তা বদলে নিতে পারেন। এতে করে কিছুটা হলেও তো আপনি দূষণ থেকে বাঁচলেন। বিগত বছরের লন্ডনের কিংস কলেজের একটি গবেষণা হয়। সেখানে দেখা যায় সচেতনতার সঙ্গে রাস্তার ব্যবহার করলে এবং একপাশ দিয়ে পথচারীরা চলাচল করলে প্রায় ৫৩ শতাংশ বায়ূ দূষণ কমানো সম্ভব। আরেকটি গবেষণা মতে, সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরাই পরিবেশের বায়ূ দূষণ কমিয়ে আনতে পারি। রাস্তার পাশের উঁচু ভবনগুলো পরিবেশকে দূষিত করে। তাই পরিবেশবিদরা বলেন, এসব ভবনের আশেপাশে লম্বা গাছ থাকা ভালো। আর রাস্তার পাশের গাছগুলো যানবাহন, পথচারীদের মধ্যে নিরাপত্তা ঢাল হিসেবে ভূমিকা পালন করে। তাই শুধু পথ এড়িয়ে না চলে বৃক্ষরোপণ ও অন্যান্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও বাড়াতে হবে।

করতে পারেন অ্যাপের ব্যবহার

এখন তো প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তি দিয়ে হয় না এমন কোনো কাজ নেই। বায়ূ দূষণ রোধে অ্যাপ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের বায়ূ দূষণ বিষয়ক গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ূ দূষণ রোধে অ্যাপের ব্যবহার ভালো একটি উপায়। এখন উন্নত দেশগুলো অ্যাপের মাধ্যমে এই দূষণ নির্ণয় ও প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে। এই অ্যাপে নিয়মিত সঠিকভাবে বায়ূ দূষণ সম্পর্কে আপডেট দেয়া হচ্ছে, বায়ূ দূষণ বিষয়ে গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে, এক্ষেত্রে তারা কী ভূমিকা পালন করতে পারে তা জানানো হচ্ছে। এই অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করলে দূষণকারী পণ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া যাবে। এরই মধ্যে কিংস কলেজ ‘লন্ডন এয়ার’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে। সেখানে দেখানো হয় সমগ্র শহরের কোথায়, কখন, কী পরিমাণে বায়ূ দূষণ হচ্ছে। এই অ্যাপটি আমাদের সবার জন্য আদর্শ হতেই পারে।

ভিড়ের মধ্যে শরীরচর্চা নয়

পুরো বিশ্বই এখন দূষণের মুখে। বলা হয়, শরীরচর্চার মাধ্যমে এসব দূষণের ক্ষতিকর দিককে অতিক্রম করা যায়। তবে সেজন্য সময়টি জরুরি। সারাদিনের মধ্যে শারীরিক চর্চা করার জন্য সর্বোত্তম সময় কোনটি? সেটি অবশ্যই ভিড়ের মধ্যে না। ভিড় হওয়ার আগে বা ভিড় শেষ হওয়ার পর শরীরচর্চা করুন। সবচেয়ে ভালো হয় একেবারে সকাল বেলা।

অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন

দূষণ কমানো তো এক-দুইদিনের ব্যাপার নয়। আপনাকে আগে নিজের খেয়াল রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য সবচেয়ে ভালো প্রতিকার হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করা। সেটা আমরা কমবেশি সবাই জানলেও মানি না বেশিরভাগই। যেখানে দূষণ বেশি, সেখানে আপনার জন্য মাস্ক পরা ভালো। যেকোনো বয়সীদের জন্য মাস্কের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি ঘরেও যদি এমন দূষণের প্রকোপ থাকে তবে মাস্ক ব্যবহার করবেন।

কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন

আপনাকে শুধু দূষণ এড়িয়ে গেলে চলবে না। দূষণ কমানোর জন্যও তো কাজ করতে হবে। নয়তো আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম কীভাবে টিকে থাকবে পৃথিবীতে? তাই উদ্যোগী হোন।

সবার আগে প্রয়োজন পরিবেশকে ভালোবাসা। আপনি পরিবেশেরই একটি অংশ। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো পরিবেশ অপরিষ্কার করবেন না। ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলতে, গাড়ির কালোধোঁয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে, বেশি করে গাছ লাগাতে- এগুলো একেবারেই শিরোধার্য করে মেনে চলতে হবে।

বাড়িঘর, স্থাপনা নির্মাণ তো করতেই হবে। সেক্ষেত্রেও যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। একটু গুছিয়ে, পরিষ্কারভাবে অবকাঠামোগত কাজগুলো করতে হয়। কারণ এই অবকাঠামোগত কাজেই পরিবেশ এখন বেশি দূষিত হয়।

প্রযুক্তিকে পরিবেশবান্ধব করে তুলতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার পরিবেশকে যাতে বিষিয়ে তুলতে না পারে সেদিকে জোর দিতে হবে। আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে দূষণগুলো কমানো সম্ভব, সেই চেষ্টাগুলোও চালাতে হবে। আপনার রান্নাঘর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করুন।

সবচেয়ে প্রচলিত কিছু পন্থা হলো- কালো ধোঁয়া উৎপাদন করে এমন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করা, ইটের ভাটা লোকালয় থেকে দূরে স্থাপন করা, কম জ্বালানি ব্যবহার হয় এমন উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা। ধূমপান না করা, বিশেষ করে অন্য মানুষের কাছাকাছি বা বদ্ধস্থানে ধূমপান না করা, রান্নাঘরে বায়ূ চলাচলের ভালো ব্যবস্থা তৈরি করা, উন্নত চুলা ব্যবহার করা, বনভূমি সংরক্ষণ করা।

আপনি নিজে উদ্যোগী হন। আপনার আশেপাশে কেউ অসচেতন হলে তাকে সচেতন করুন। আপনার বারান্দা বা ছাদে গাছ লাগান, আপনার বাড়িতে অনেকখানি জায়গা পড়ে আছে, সেখানে সুন্দর গাছ লাগিয়ে ফেলুন। আপনার ছোট্ট উদ্যোগ সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭