কালার ইনসাইড

‘আমি ক্যানভাসার নাকি?’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/02/2019


Thumbnail

টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেছেন নিজের ষষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘ফাগুন হাওয়ায়’। আসছে শুক্রবার মুক্তি পাবে ছবিটি। তার আগে তৌকির আহমেদ কথা বলেছেন বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে। 

বাংলা ইনসাইডার: ছবিটি বানানোর প্ল্যান কীভাবে করা?

তৌকির আহমেদ: টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পটা ২০০৫ সালের দিকে পড়া হয়েছিল। গল্পটি পড়ে পরিচালকের ভীষণ ভালো লাগে। মনে হতে থাকলো, ছোট এই গল্পটি রুপকভাবে ভাষা আন্দোলনকে ধারণ করে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে। লেখককে জানালাম, এটা নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে আগ্রহী। সেই উপাদান আছে এই গল্পে। লেখক স্বাধীনতা দেয়। স্ক্রিপ্ট তৈরী করলাম অনেকদিন ধরে। এরপর শুরু হয় নির্মাণে হাত দেয়ার যুদ্ধ। ছবিটার নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলাম ২০০৮ সালে। সেই থেকে চেষ্টা চলতে থাকে আর স্ক্রিপ্টের ঘষামাজা চলে। কিন্তু প্রডিউসার মিলছিল না। ২০১৫ সালে সরকারী অনুদান চাইলাম, তাও পেলাম না। একধরনের হতাশাই কাজ করছিল। আদৌ কি এই গল্পটা নিয়ে কাজ করা হবে। এরমধ্যে অন্য দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। অনেকে হয়ত ভেবেছে, ছবিটা চলবে না। প্রচলিত অর্থে নাচে-গানে ভরপুর নয়। কেউই টাকা লগ্নী করতে চায়নি। কিন্তু আমি তো ভাষা আন্দোলনের উপর কোনও ডকুমেন্টারি করছি না। শেষমেষ ২০১৫ সালের দিকে প্রডিউসার পেয়ে কাজ শুরু করলাম।

গল্পটা কী?

একটি মফস্বলের গল্প। যেটি আমাদের ভাষা আন্দোলনকে রিলেট করবে। এর মধ্যেও প্রেম আছে, সুন্দর গল্প আছে, বেদনা আছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমাদের দেশে এর আগে সে মাপের রিমার্কেবল কোনো কাজ হয়নি। আমাদের সবার মনের মধ্যেই একটা বিষয় গেঁথে রয়েছে- এ কাজটির দায়িত্ববোধ অনেক বেশি, একটা আর্কাইভাল কাজ।

মূল চরিত্রে সিয়ামকে নেয়ার কারণ কী?

নাসির চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। ওকে আমি প্রথম দেখি থাইল্যান্ডে। একটা নাটকে আমাদের কো আর্টিস্ট। তখন দেখলাম ছেলেটি ভদ্র এবং কাজের প্রতি সিনসিয়ার। কথা বলে বুঝলাম সে শিক্ষিতও। এরকম ছেলেই আসলে আমাদের দরকার যারা জিনিসটা দ্রুত তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পিক করতে পারবে। পরবর্তীতে আমার একটা নাটকে নিলাম ওকে। ওকে নেয়ার কারণও আছে। ও তখন নাটকে বেশ ভালো করছিল। ছবিটি করার সময় মনে হলো ওকে নিয়েই ট্রাই করতে পারি। আমার মনে হয় এই ট্রাইয়ের রেজাল্ট ভালো হয়েছে।

দীপ্তি চরিত্রে তিশা কেমন করেছেন?

খুব সাধারণ একটা চরিত্র। যে কষ্ট পেলে কাঁদে। তাকে সুন্দর কথা বললে সে হাসে। সে লজ্জা পায়। তার সুন্দর কিছু সম্পর্ক আছে তার দাদার সঙ্গে। তার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। আমি আশা করবো যখন এই ক্যারেকটারটা কেউ দেখবে। তখন তিশার জেনারেশনের যে মেয়েরা আছে তারা নিজেদেরকে দেখতে পারবে। নিজেদের ফিল করতে পারবে যে, আমিও মনে হয় এভাবেই হাসি কাঁদি বা কষ্ট পাই।

মফস্বলের প্লট কেন বেছে নেওয়া?

আমরা জানি ঢাকাতে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ঠিক কীভাবে ছাত্ররা প্রতিবাদ করেছে। ভাষা আন্দোলন বললেই সবার সামনে একটা চিত্র ফুটে উঠে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই-এমন দাবিতে ছাত্রদের মিছিল। কিন্তু আমাদের মাথায় কিন্তু আসে না একটা মফস্বল শহরের গল্প। একটা মফস্বল শহরে একজন পাকিস্তানি ইনসপেক্টর কীভাবে উর্দু ভাষা সবার ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছিল। এ জিনিসটা আমরা অনেকেই দেখতে পাইনি। আমার মনে হয় মেটাফোরের মাধ্যমে, হিউমারের মাধ্যমে এই গল্পটা বলা সম্ভব হয়েছে।

শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

এটা তো অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ঢাকা শহরে যদি কোনও পিরিয়ড ফিল্ম করতে চান তাহলে সেটি দুরূহ হয়ে যাবে। খুব ব্যয়বহুল। মফস্বলে করেছি বলে কিছুটা ছাড় পেয়েছি। আমি গল্পটিও সেভাবেই বেছেছি। রূপকভাবে মূল আন্দোলনকেই রিপিট করবে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে পিরিয়ড একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ছবিতে পুলিশের গাড়ি দেখাতে হবে; সেটি অবশ্যই বায়ান্ন সালের হতে হবে। মটরসাইকেল, টাইপরাইটার, রাস্তাঘাট-বাড়িঘর সবকিছুতেই পিরিয়ড অথেন্টিসিটি থাকতে হবে। দেয়ালটা পর্যন্ত সে সময়ের হতে হবে। অনেক কিছু আমাদেও সে সময়েল আদলে রং করতে হয়েছে তৈরী করতে হয়েছে।

অন্যান্য অভিনয়শিল্পী কেমন করেছে?

যশপাল শর্মা (বলিউড), আবুল হায়াৎ, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফজলুর রহমান বাবু, রওনক হাসান, আফরোজা বানু, ফারুক হোসেন, সাজু খাদেমের মত বড় বড় শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। এটা একটা প্যাকেজ ফিল্ম। এখানে কে বড় রোল কে ছোট রোল তা নয়। সবাইকে নিয়েই সিনেমাটি হয়েছে। সবার সহযোগিতা ছিল। অনেকেরই পারিশ্রমিক আমি ঠিকমতো হয়তো দিতে পারিনি। কিন্তু তারা কখনো তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না। একটা ভালো কিছু কিভাবে তৈরী হবে তা নিয়েই আমাদের সবার মাথাব্যাথা ছিল।

সাহিত্যিক সিনেমা তো হলে গিয়ে দর্শক দেখেন না…

অনেকেই মনে করে খুব গম্ভীর একটা কাজ হবে। অনেক ভারি ভারি ডায়লগ থাকবে। এটা কিন্তু এমন একটা গল্প যেখানে ভালবাসা আছে, মজার মজার সংলাপ আছে। এটা দেখলে দর্শক সব ধরনের বিনোদন পাবে।

সিয়াম –তিশা জুটিকে নিয়েও কি কথা শুনতে হয় না?

সাধারণত বাংলা সিনেমায় নায়িকাদের বয়স ও অভিজ্ঞতার তুলনায় নায়ক একটু বয়সী ও ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের অভিজ্ঞতা বেশী থাকতেই দেখা যায়। না হয় কথা উঠে মানায়নি। আমাদের গল্পের যে প্লট সেখানে দুইজন তরুণ তরুণীর দরকার ছিলো! সিয়াম সেই জায়গায় বেশ ফিট ছিলো, আর তিশাকেও আমরা তরুণী হিসেবেই চিন্তা করি! আসলে একজন ভালো অভিনেত্রী কিন্তু তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে যে কোনো ক্যারেক্টারকেই ফুটিয়ে তুলতে পারেন, নিজেকে ফিটিং করতে পারেন। আমার মনে হয়েছে, সেই জায়গায় তিশার চেয়ে বিকল্প আর কেউ নেই। অন্তত তাদেরকে জুটি হিসেবে দেখতে আমার কাছে ভালো লেগেছে। একটা জুটি হিসেবে দেখবেন। কে বড় কে ছোট তা দেখতে যাচ্ছি। এটা প্লিজ ভাববেন না। একটা গল্প দেখতে যাবেন। যেখানে অনেক ক্যারেক্টার আছে। যার মধ্যে নাসির ও দীপ্তিও দুই ক্যারেক্টার।’ 

আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ। সিনেমার প্রচারে তেমন আগ্রহী নন। আগের সিনেমাগুলোতে তেমন প্রচারণা করেননি…

এ অভিযোগ শুনে আমি একটু বিরক্তই হলাম। আমি কেন প্রচারণা করবো! আমি ক্যানভাসার নাকি! আমি শিল্পী, আমি প্রচারক না। এটা আসলে ডিস্ট্রিবিউটর ও প্রডিউসার করবেন; ডিরেক্টরের কাজ না। যদিও আমাদের দেশে ডিরেক্টররা করে থাকেন। আমি এটা পারি না, দুর্বল। এখন স্যোশাল মিডিয়া বেশ জনপ্রিয়; সেখানে প্রচারণা হতে পারে। পাশাপাশি টেলিভিশন, অনলাইন গণমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় প্রচার করা হবে। এরবেশি তো আর কিছু করার নেই আমার।আমার যেটা কাজ সেটা ঠিকঠাক করতে চেষ্টা করেছি।

বাংলা ইনসাইডার 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭