ইনসাইড ইকোনমি

ব্যাংকে আস্থার সঙ্কট বনাম নতুন তিন ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/02/2019


Thumbnail

নতুন করে আরও তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক তিনটি হলো বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগামী পর্ষদ সভায় ব্যাংক তিনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদ সভায় নতুন তিন ব্যাংকের কার্যক্রম চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দেশে এই নিয়ে ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৬২টি। এখন কথা হলো, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের কর্মকাণ্ড কতোখানি আস্থাশীল আর আমরা জনগণ ব্যাংকের ওপর কতোটা ভরসা করতে পারছি?

সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংক নিয়ে তোলপাড় চলেছে। এজন্য ব্যাংকটির নাম আর লোগো পরিবর্তনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল গ্রাহকদের আস্থা ফেরানোসহ নিজেদের আমূল পরিবর্তন।

এ বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীতে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ৬৫৭টি ভুয়া রপ্তানি বিলের বিপরীতে ১ হাজার ২শ’ ৯৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আসে ক্রিসেন্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে। কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগই এই অভিযোগ আনে। এছাড়াও, গত বছরের অক্টোবরে তদন্ত শুরু করার পর জনতা ব্যাংকের শাখা থেকে এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় দুদক। এখানেও জড়িত দেশের স্বনামধন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক।

এদিকে, ব্যাংকের ১২০০ কোটি টাকা লুটে নিয়ে বিসমিল্লাহ গ্রুপ গোপনে তাদের মালিকানা হাতবদল করে। ব্যাংকের এতোগুলো টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে রাজধানীর তিনটি থানায় মামলাও হয়। দুদকের নাকের ডগা দিয়ে এই কাজটি হয় জনতা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে। পরে ঋণ জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করে।

এক সময়ের আদর্শ রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক দেউলিয়ার পথে নামে। গত ৮-৯ বছরে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে আট হাজার কোটিরও বেশি টাকা পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে এই ব্যাংকের নামে। ব্যাংকটিকে বাঁচাতে বার বার জনগণের করের টাকাও দেওয়া হচ্ছে। গতবছর জুন মাসে ব্যাংকটিকে মূলধন ঘাটতি পূরণে এক হাজার কোটি টাকাও দেয় সরকার। আর গত ৪ বছরে বেসিক ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।

আর সেই হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের নামের কথা আমরা তো এখনো ভুলে যাইনি। বিভিন্ন শীর্ষ মহলের আর্থিক স্বার্থের কারণেই হলমার্ক গ্রুপ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিপুল পরিমাণ ঋণ পেয়েছে, তা এখন বিভিন্ন সূত্রে বেরিয়ে আসে।

একটি দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর থেকে যখন জনগণের আস্থা আর আগ্রহ হারায়, তখন সেটা অর্থনীতির জন্য চরম হুমকিজনক হয়। তখন মানুষ নিজের অর্থ নিজের কাছে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। কেননা অর্থনৈতিক বিষয়ে মানুষ কখনো ঝুঁকি নিতে চায় না। যে ব্যাংক সুরক্ষা দিতে পারে, তার অবস্থাটা যদি এই হয় তবে ভরসার জায়গাটা শূন্যের কোঠায় চলে যায়। সারাবিশ্ব, দেশ এখন ডিজিটাল হচ্ছে, ই-ট্রেন্ডিং এগিয়ে যাচ্ছে তখন ব্যাংকের এই দৈন্যদশা মেনে নেওয়ার মতো না।

মানুষ কষ্টে উপার্জিত অর্থ যখন ব্যাংকে রাখতেই দ্বিধায় ভুগছে, ব্যাংকিং সেক্টরের এই বিপর্যয়ের মুখে তেমন কোনো পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়াই নতুন আরও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন কেন, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। নতুন ব্যাংক তিনটি কেন, কার স্বার্থে, এর ফলে ঠিক কার উপকার হচ্ছে, এটা কতোটুকু প্রয়োজন- এই প্রশ্নগুলো বার বার ঘুরেফিরে আসছে। স্বয়ং সরকারও মনে করে এতো ব্যাংক মোটামুটি নিষ্প্রয়োজন। এতো ব্যাংকের নামে এতো কেলেঙ্কারির অভিযোগ, সেগুলোর প্রভাব যে সাধারণ জনগণের ওপরেও বর্তায়- সে দায় দায়িত্ব কে নেবে সেটাই প্রশ্ন। 

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭