ইনসাইড গ্রাউন্ড

ফিরিয়ে দাও পেলে-রোনালদোর সেই ব্রাজিল (৩য় ও শেষ পর্ব)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/02/2019


Thumbnail

নেইমারের পর কুতিনহোই ব্রাজিল প্রেমীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু কুতিনহোর দিনও মনে হয় ফুরিয়ে এলো বার্সাতে। এই সিজনে বার্সা তাকে বিক্রি করে দিতে চায়।

অথচ এইতো কদিন আগেও কুতিনহো তার আগের ক্লাব লিভারপুলে ছিল এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। মোহাম্মাদ সালাহ, ফিরমিনো, মানেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একের পর এক গোল করে যাচ্ছিল, তাও আবার লেফট উইং থেকে কিছুটা নিচে নেমে মাঝ মাঠ থেকে।

অন্যদের দিয়ে গোল করাতেও যেন কুতিনহোর জুড়ি ছিল না। সব মিলিয়ে বলতে হয়, এইতো ব্রাজিল পেয়েছে, ব্রাজিল পেয়েছে তাকে। কিন্তু বার্সাতে খেলার হাতছানি এবং মোটা অঙ্কের প্রলোভন যেন তাকে লিভারপুলে আটকিয়ে রাখতে পারলো না।

কুতিনহোর চলে যাওয়াটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বর্তমান খেলোয়াড়দের নিজ ক্লাবের প্রতি লয়াল্টির (আনুগত্য) অভাবের কথা। একটি ক্লাবে ঠিকভাবে গ্রুমিং হতে না হতেই ক্লাব বদলের ভূত চেপে বসে তাদের ভেতর। এক্ষেত্রে বলতে হয়, লয়াল্টির রোল মডেলর যদি কোন তালিকা করা হয়, তাহলে তার প্রথম কাতারে থাকবে ফ্রান্সিসকে টট্টি, পল স্কোলস, রায়ান গিগসদের নাম।

এদেরকে দলে ভিড়াতে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে শুরু করে বিশ্বের নামি দামী সব ক্লাব কতই না চেষ্টা করেছিলো। একের পর এক বড় বড় অফার করছিল ক্লাবগুলো। কিন্তু তারা সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। কারণ তারা তাদের নিজ নিজ ক্লাবের প্রতি লয়াল ছিল এবং টাকা বা যশের প্রতি তাদের কখনো কোন লোভ ছিল না।

এখন নাম, যশ এবং অর্থের প্রলোভন এতোটাই প্রকট রূপ ধারণ করেছে যে, ব্রাজিল লিগে এক সিজন ভাল খেলেই ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে ব্রাজিলের কচি কচি খেলোয়াড়রা। গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও গ্যাব্রিয়েল বারবোসা ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিল ২০ এর কোঠা পূরণ করতে না করতেই।

এদের থেকে আরও একধাপ এগিয়ে ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও রদ্রিগো রদ্রিগেসদের মতো খেলোয়াড়রা। ১৮ বছর পূরণ হতে না হতেই রিয়াল মাদ্রিদ এদের কিনে নিয়েছে। ভিনিসিয়াস জুনিয়র এখন যদিও বা রিয়ালে বেশ দাপটেই আছে, কিন্তু এত অল্প বয়সে এত বেশি চাপ নেয়াটা একদমই অনুচিৎ। এদের মতো ট্যালেন্টদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ না দিলে এরা একে একে ঝরে পড়বে সময়ের গর্ভে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে রবিনহো যাকে বলা হত ‘দ্য নেক্সট পেলে’। একবার পেলে স্বয়ং বলেছিলেন, ‘রবিনহো আমার সব অর্জনকে একদিন পেরিয়ে যাবে। ঈশ্বরের কাছে আমাদের ধন্যবাদ জানানো উচিৎ যে তিনি আরেকটি পেলে আমাদের উপহার দিয়েছেন।’

কিন্তু রিয়াল ম্যাদ্রিদে অল্প বয়সে পাড়ি জমিয়ে রবিনহো যেন নিজের দুর্ভোগ নিজেই টেনে এনেছিল। মাদ্রিদে রবিনহো কখনই তার সেরাটা দিতে পারেনি। বরং বিভিন্ন কন্ট্রোভার্সিতে জড়িয়ে পড়ছিল তার ক্যারিয়ার। অন্তিম ফলাফল, ২০০৮ এ ম্যানচেস্টার সিটিতে ট্রান্সফার।

তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে- ব্রাজিলের এই দুর্দিন থেকে উত্তরণের পথ কী?

সাম্বা ফুটবল ফিরিয়ে আনা? হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। তবে একটি বিষয় আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ব্রাজিলকে বিশ্ব শুধু পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলে চিনে না, ব্রাজিলকে বিশ্ব চিনে তার নান্দনিক ও সৌন্দর্যমন্ডিত খেলার ধরণের জন্য। ব্রাজিল দলটার খেলা ফুটবল প্রেমীদের এতটায় পছন্দের ছিল যে, ২০০২ বিশ্বকাপের ট্রেনিং সেশনে রোনালদো, রোনালদিনহো, রিভালদো ও কার্লোসদের দেখতে গ্যালারীতে দর্শকে ভরে যেত।

তাদের নিয়ে তৈরি হত নানান রকমের বিজ্ঞাপন। আরেকটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে জিকো ও সক্রেটিসের সেই ১৯৮২র ব্রাজিল। টুর্নামেন্ট থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় নিলেও দলটিকে আজও ইতিহাস ভুলতে পারেনি। কারণ ছিল একটাই। সাম্বা ম্যাজিকে বিশ্বাসী ছিল দলটি।

কিন্তু আগ্রহী ফুটবল সমালোচকরা দাবী করতেই পারেন যে, সাম্বা ফুটবল এখন এক পুরনো ইতিহাসের নাম মাত্র। পাওয়ার ফুটবল বা ডিসিপ্লিন্ড ফুটবলের কাছে সাম্বা আর কুলিয়ে উঠতে পারবে না। তাদের কথা সত্য হতেও পারে। কিন্তু ব্রাজিল ভক্তরা যখন তাদের দলকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে দেখে, তখন তাদের প্রত্যাশার জায়গাটা কোথায় গিয়ে ঠেকে? হতে পারে সাম্বাকে ফেরত আনা আর সম্ভব নয়। তবে আক্রমণাত্মক ফুটবলের মানসিকতা দলে অভিযোজন করা যেতেই পারে।

রিয়াল মাদ্রিদ জিনেদিন জিদানের বদৌলতে যেভাবে পরপর তিনবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা পেল, তা কিন্তু সম্ভবপর হয়েছে শুধুমাত্র আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার কারণেই। কয়েক দশক পর লিভারপুল এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা পেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। যদি এমনটা ঘটে থাকে, তবে তা ঘটবে লিভারপুলের আক্রমণাত্মক খেলার ধরনের কারণেই।

ব্রাজিল তার আক্রমণাত্মক ফুটবল থেকে এতটাই দূরে চলে গিয়েছে যে মাঝে মাঝে ধারাভাষ্যকারদের বলতে শোনা যায়, ‘দ্য অপজিসান ইজ প্লেয়িং মোর ব্রাজিলিয়ান স্ট্যাইল অফ ফুটবল দ্যান দ্য ব্রাজিলিয়ান সাইড।’ সত্যি বলতে গেলে, ইউরোপিয়ান ফুটবল পণ্ডিতরাও সেই পুরনো ব্রাজিলকে মিস করে।

দিন শেষে যারা ব্রাজিল ফুটবল প্রেমী তারা মন থেকে চাইবে যে, যেভাবে ব্রাজিল তার অলিম্পিক গোল্ড মেডেলের ‘কুফা’ কাটিয়ে ছিল গত আসরে, একইভাবে তারা আবার বিশ্বকাপের এই কুফা কাটিয়ে উঠবে কোন একদিন।

বাংলা ইনসাইডার/জেডআরএম/এমআর

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭