লিভিং ইনসাইড

বেশি টাকার টেনশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/02/2019


Thumbnail

আমজাদ সাহেব (ছদ্মনাম) একসময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বড় একটি প্রতিষ্ঠানের বড় পদে কাজ করতেন। তাঁর অবসরের পরে বিশাল অংকের টাকা পেলেন। সেটা দিয়েই হয়তো হেসেখেলে বাকি জীবন চলে যেত। তিনি ভাবলেন ভবিষ্যতের কথা। টাকাগুলো নষ্ট না করে সে নিয়োগ করলেন বিভিন্ন ব্যবসায়। ব্যবসা বড় হতে লাগলো। অর্থকড়িও আসতে লাগলো প্রচুর। এককথায় যাকে বলে আঙুল ফুলে একেবারে কলাগাছ। আশপাশ দিয়ে সবাই বলতে লাগলো কি ব্যাপার, এতো টাকার উৎস কী! চাকরিদশাতেও এমন কথা সে শুনেছে। বিপত্তি ঘটলো যখন এতো টাকার হিসাব দিতে হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। টাকার চিন্তায় চুল সব পেঁকে ঘুমটাও নষ্ট হয়ে গেল।

আমরা কথায় কথায় বলি অর্থই অনর্থের মূল। কিন্তু এই অর্থ ছাড়া তো আমরা একটা মিনিট চলতে পারি না। অর্থকড়ি, টাকাপয়সাই আমাদের চালিত করে, আমরা মরিয়া হয়ে ছুটি অর্থের পিছনে। আরও চাই, আরও অর্থের প্রয়োজন- আরও ভালোভাবে জীবন কাটাতে আরও অর্থের আকাঙ্ক্ষা আমাদের সবসময়ই থাকে।

অর্থ কীভাবে উপার্জন হচ্ছে- এটা প্রতিটি ব্যক্তিভেদে তো আলাদা হয়। আপনার আমার উপার্জনের পথ, পদ্ধতি তো আলাদা হবে, স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে উপার্জনের পথটি কেমন, স্বচ্ছ নির্ভেজাল নাকি অন্যকিছু। এই প্রশ্নটাই ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিকে বিব্রত করে দেয়।

সে কথা থাক, কে কীভাবে উপার্জন করবে, কীভাবে পথ চলবে সেটা তো পুরোটাই ব্যক্তিগত। শুধু স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজনে। তবে সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সীমা তো থাকে। এই যেমন খ্যাতি। এই খ্যাতি যখন বেশি হয়ে যায় তখন সেটাকে আমরা ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ বলি। ঠিক তেমনি অর্থকড়ি যখন বেশি হয়ে যায়, সেটা নিয়েও ঘটে বিড়ম্বনা। এতো অর্থ দিয়ে কি হবে, এতো অর্থ কই রাখবো, এতো টাকা কীভাবে পেলাম এ নিয়ে উদ্ভট প্রশ্ন নিয়ে মাথা খারাপের ঘটনাও তো ঘটতে পারে। তাই অতিঅর্থও ভালো না আদতে।

সাধারণভাবে বললে, যারা বৈধভাবে টাকাপয়সা কামান তাদের কোনো চিন্তা নেই। তাদের জবাবদিহিতা করতে হয় না কারো কাছে, তাদের প্রতিটি অর্থের হিসাব তাদের কাছে থাকে। কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু কুপথে বা কিছুটা অন্য উপায়ে অর্থ আসলে সেটা নিয়ে বিপত্তি ঘটে। হুট করে এতো টাকা কোত্থেকে এলো, কীভাবে এতো উপার্জন হচ্ছে এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আপনি নিজের লোকদের কাছ থেকেই এমন প্রশ্ন বেশি শুনবেন। বিভিন্ন মহল, প্রতিষ্ঠান, কমিশন থেকে নজরদারি খবরদারি চলতে থাকে।

তাই আগে উপার্জনের পথটা পরিষ্কার করে নেওয়াটা ভালো। অর্থাৎ বৈধতা প্রয়োজন সবার আগে। সেটা করতে পারলে আপনার আর কোনো চিন্তাই থাকলো না। ঘরে, ব্যাংকে একগাদা টাকা রেখে আরামে ঘুমাতে পারেন না এমন ঘটনাও আছে। আপনার অনেক টাকা হলো, সেগুলো কীভাবে খরচ করবেন, কোন খাতে কত রাখবেন, কোথায় কোথায় টাকা রাখবেন, কে কী ভাবলো- সেগুলো নিয়ে আপনার ঘুম না আসাই স্বাভাবিক।

বড় বড় ধনকুবের বিত্তশালী লোকদের দিকে তাকান। তারা যদি সব ভারসাম্য রেখে চলতে পারে আপনিও পারবেন। এই ব্যক্তিগুলোর মোটামুটি সবারই দাতব্য প্রতিষ্ঠান থাকে, তারা প্রচুর অর্থ দান করে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এটা শুধু লোকদেখানোই নয়। এটা ভালোবাসার আর সামর্থ্যের জায়গা থেকে। শীর্ষ ধনকুবের বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো অসংখ্য সেলেব্রিটিদের অর্থবণ্টনের দিকে তাকান।

ঘুম নষ্ট না করে টাকার ঠিকঠাক হিসাব রাখুন। যেখানে যেখানে অর্থের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে হয় সেটা করুন। নিজের কাছের মানুষদেরকে একটু দেখাশুনা করুন। যা আছে তাই নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করুন। আর বেশি চাইতে না যাওয়াই ভালো। আপনি অর্থবিত্তে বড় না হয়ে সামাজিকতায় বড় হন আপনার মনুষত্ত্ব দিয়ে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭