কালার ইনসাইড

কেন তাঁরা এত জনপ্রিয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/02/2019


Thumbnail

বাংলা ছবি পছন্দ করেন, অথচ কলকাতার সিনেমা দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। কলকাতার সিনেমা দেখতে গেলে আপনি প্রসেনজিৎ, জিৎ কিংবা দেবের ফ্যান। কিন্তু এদের পাশাপাশি কিছু মুখ কিন্তু আপনার ভীষণ পছন্দের। কলকাতার সিনেমা দেখতে গেলে সেসব মুখ আপনার সামনে আসবেই। তাদের অভিনয় আপনাকে বিনোদন দেয়। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন তাদের নাম কি? অনেকেই জানি না এমন অভিনেতাদের নামটা পর্যন্ত। তাদের খোঁজ খবর তো দূরের কথা। তবু তাদের ভালো লাগে, তাদের অভিনয় ভালো লাগে। যখন তারা চোখের সামনে আসে, বিনোদিত হই আমরা। 

এমন কয়েকজনের খোঁজ আজ দেওয়া হল:



কাঞ্চন মল্লিক: সিনেমায় আসার আগে সেলসের চাকরি করতেন। বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। পড়াশুনার পাশাপাশি চানাচুরও বিক্রী করতেন। সংসার চালাতে হত এটা করেই। সঙ্গে থিয়েটারটাও করতেন নিয়মিত। সেটা ছিল প্যাশন। থিয়েটার করার সময় কখনো ভাবেননি ফটোশুট করে সিরিয়াল বা সিনেমার প্রোডাকশান হাউজে দেওয়া হবে। নিজের চেহারা নিয়ে কনফিউশনে ছিলেন। সেটা নব্বই দশকের গল্প। নব্বইয়ের দশকের শেষে সিরিয়ালের ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পেলেন। সেখান থেকে আসলো সিনেমার অফার। তবে তার পরিচিত মিললো জিতের সঙ্গে অভিনয় করে। জিৎ যখন তুমুল ফর্মে। তার বন্ধু কিংবা চ্যালার চরিত্রে দেখা যেত কাঞ্চন। শুকনো লিকলিকে এ অভিনেতাকে। সবাইতো তাকে যে নামেই ডাকুক। তাতে তার মন খারাপ হয় না।‘কেন নিজেকে রোগা কাঞ্চন বলতে ইতস্তত করব। আমি তো বাঁটুল কাঞ্চন নই।আমি যদি আমার শরীরকে নিয়ে মজা করি। বা মকারি করি,সেটা তো মিথ্যে নয়। আর লোকের তা ভালো লাগছে।আমি তাদের এন্টারটেইন করতে পারছি। দ্যাটস ইট।’

ব্যাক্তি জীবনে কাঞ্চনের স্ত্রীর নাম পিংকি। আর ছেলের নাম সানা।

খরাজ মুখার্জি: এই মুহূর্তে কলকাতা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অপরিহার্য একটা নাম। শুধু বাংলা নয়, ক্রমশ হিন্দি ছবিতেও খরাজ জায়গা করে নিচ্ছেন। পড়াশোনায় ভাল ছিলেন না। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বাবা বলেছিলেন, ‘পরীক্ষাটা যখন দিবিই ঠিক করেছিস, তখন একটু ভাল করেই দে’। কথাটা মাথায় ঢুকে গিয়েছিল। তাই বাংলা-হিন্দি-লো বাজেট-হাই বাজেট-সিরিয়াস-এলেবেলে যাই আসুক, সব ক্ষেত্রেই খরাজ দক্ষতার সঙ্গে অভিনয়টা করেন। ২০১৯ সালে তার বয়স ৫৬। তিনি গীতিকার, সুরকার এবং গায়কও। ১৯৮০ সালে ‘হুলস্থুল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমায় নাম লেখান। বিগত ৩৯ বছরে তিনি পাতালঘর, বাই বাই ব্যাংকক, কাহানী, নেমসেক, এক্সিডেন্ট, মুক্তোধারা, স্পেশাল ২৬, জাতিস্মর সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি নাট্যশিক্ষক রামপ্রসাদ বণিকের ছাত্র ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের শাকিব খানের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন।



বিশ্বনাথ বসু: ছোট থেকেই একটু বেশি কথা বলার অভ্যাস। সঙ্গে ছিল অভিনয়ের উপর প্রচণ্ড টান। সিনেমা ভাল লাগত। ছোট থেকেই গোলগাল সুন্দর দেখতে। তাই গ্রামের স্বামী বিবেকানন্দের উপর যখন নাটক হত, তখনই ডাক পড়ত তাঁর। আরবালিয়ার স্কুল জীবন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বনাথ চলে আসেন কলকাতায়। স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়তে পড়তে অজস্র পথ নাটিকা, শ্রুতি নাটক করেছেন তিনি। সে সুবাধেই পরিচয় অভিনেতা শুভাশিস মুখার্জির সঙ্গে। শুভাশিসের হাত ধরেই সিনেমা জগতে পথ চলা।

১৯৯৬-৯৭ থেকেই ছোট ও বড়পর্দায় সুযোগ পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগা। প্রত্যেক পরিচালক, প্রযোজক, প্রত্যেকটি চ্যানেলের দফতর, কোথাও যেতে বাকি ছিল না। নখদর্পণে ছিল শহরের কোথায় কোন প্রোডাকশনের কাজ চলছে। তার সঙ্গে কারা কারা যুক্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা কাজের সুযোগ চেয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে দেখা করতেন সেসময়ের স্ট্রাগলিং বিশ্বনাথ। তার ভাবনায় ছিল, চাকরি করতে গেলেও তো এমনভাবে খুঁজতে হত।

ইটিভিতে প্রিয়া কার্ফার সঙ্গে একটি টেলিফিল্মে অভিনয়ে প্রথম নজর কাড়েন। তবে ‘এক পশলা বৃষ্টি’  সিরিয়ালে অভিনয়ের পর সকলের নজড় কাড়েন।

‘ক্রান্তি’ থেকে ‘উড়োচিঠি’, প্রতিটি সিনেমায় নতুন বিশ্বনাথকে দেখছেন দর্শকরা। মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় বেশ কয়েকটি ছবি। ছোট পর্দাতেও এখনো দেখা যায় তাকে।

স্ত্রীর নাম দেবিকা। প্রেম করে বিয়ে করেছেন। দুই ছেলের জনক তিনি।

রুদ্রনীল ঘোষ: ২০০৫ সালে ‘দিন প্রতিদিন’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পা রাখেন। তারপর ‘কাঁটাতার’,‘তিন ইয়ারির কথা’, ‘কালবেলা’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’,‘খাদ’, ‘রাজকাহিনী’- এর মতো জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেন রুদ্রনীল। এই অভিনেতা চরিত্রের প্রয়োজনে নানাভাবে নিজেকে ভেঙেছেন। চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। আজকের রুদ্রনীল এক দিনে তৈরি হননি। যেদিন তার মা মৃত্যুবরণ করেন সেদিনও স্টেজ শো করতে গিয়েছিলেন এই অভিনেতা। অভিনয়ের ভালো সুযোগ না পেয়ে এক সময় চিত্রনাট্য রচনা করে আয় রোজগার করতেন তিনি। কিন্তু চিত্রনাট্যে তার নাম দেওয়া হতো না। কিন্তু আজ তিনি কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা।

অপরাজিতা আঢ্য: ছোটবেলায় নাচের প্রতি বেশি মনোযোগি ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকের পর একটা নাটকের দলে জয়েন করলেন। ওখানেই তাকে দেখলেন শঙ্কর চক্রবর্তী। তার কথায় জগন্নাথ গুহর সঙ্গে দেখা করলেন। উনি তখন ‘মনোরমা কেবিন’-এর জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। সেখান থেকে শুরু। ‘মনোরমা কেবিন’-এর পর করলেন ‘কুয়াশা যখন’ এবং ‘তৃষ্ণা।’ এর পাশাপাশি বড় পর্দাতেও কাজ শুরু করলেন। প্রথম ছবি ‘এবং তুমি আর আমি’। গৌতম বসু পরিচালিত ছবিতে লিড করেছিলেন। এখন তিনি নিয়মিতই অভিনয় করছেন। এই বয়সে এসে ‘প্রাক্তন’ এর মতো সিনেমায় প্রসেনজিতের স্ত্রীর চরিত্রে দেখা যায় তাকে।



শান্তিলাল মুখার্জি: ভিলেনের চরিত্রেই বেশি দেখা যায় তাকে।  ছেলে ঋতব্রতও অভিনয়ে নাম লিখিয়েছেন। এইতো কিছুদিন আগে অভিনয় করলেন ‘জেনারেশন আমি’ ছবিতে। সেখানে বাবার চরিত্রে শান্তিলালকে দেখা গেছে।  অভিনয় শুরু হয়েছিল পার্শ্বচরিত্র দিয়ে, এখনও ক্যারেক্টর আর্টিস্ট। সেখানেই ফাটিয়ে অভিনয় করছেন তিনি। 


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭