ইনসাইড আর্টিকেল

কীভাবে এলো প্রভাতফেরি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/02/2019


Thumbnail

প্রভাতফেরি, প্রভাতফেরি

আমায় নেবে সঙ্গে?

প্রভাতফেরি প্রতিবছরেই আমাদের নিয়ে যায় ভাষা শহীদদের স্মৃতির মিনারে, একমুঠো শ্রদ্ধা জানানোর নিমিত্তে। এটাকে মিছিল আমরা ঠিক বলি না।  কারণ নগ্নপায়ে শান্তস্নিগ্ধ হয়ে হাতে অনেকগুচ্ছ ফুল নিয়ে শহীদ মিনারের পানে আমরা যাই। মনে বাজতে থাকে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ । ভাষার মাসের এই দিনটিতে আমরা কেন প্রভাতফেরিতে যাই, কেন গান গাই, কেন ফুল দেই- এগুলো কি আমরা জানি? সবটা নয়। অথচ এগুলো তো আমাদের জীবনধারার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। এই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবো আজ।

কেন প্রভাতফেরি

বাঙালির ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ‘প্রভাতফেরি’র নাম। । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এর পরের বছরেই চালু হয় এই প্রভাতফেরি। শব্দটির আভিধানিক অর্থ প্রভাতে উদ্বোধনী সংগীত গেয়ে জনগণকে জাগানো। জানা মতে, প্রভাতফেরি আমাদের দেশেই প্রথম।

ইতিহাসমতে, ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো শহীদ দিবস পালিত হয়। অবাক করা বিষয় হলো, এই দিবসটি পালন শুরুই হয় প্রভাতফেরি দিয়ে। সেটা সব ছাত্র সংগঠনের সিদ্ধান্তেই এটা হয়। কারো কোনো একক সিদ্ধান্তে এটা হয়নি। প্রভাতফেরির ওই দিনটিতে ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খুব ভোরে মূলত ছাত্রাবাসগুলো থেকে বের হয়ে খালি পায়ে ফুল হাতে, কেউ ফুল ছাড়াই একুশের গান গাইতে গাইতে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে শহীদদের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তাঁরা আসেন শহীদ মিনারের যে প্রতিকৃতি করা হয়েছিল সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এভাবেই প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহীদ দিবস পালন শুরু হয়েছিল।

খালি পায়ে কেন শ্রদ্ধা নিবেদন

একটু সাহিত্যের দিকে তাকাই। ‘একুশের পটভূমি ও একুশের স্মৃতি’ গ্রন্থে ‘শহীদ মিনারের কথা’ শীর্ষক নিবন্ধে ভাষাসংগ্রামী রফিকুল ইসলামের একটা লেখা আছে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ দিবসে প্রভাতফেরি করা হয় নগ্নপদে। কণ্ঠে ছিল গাজীউল হক রচিত গান, ‘ভুলবো না, ভুলবো না, একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলবো না’। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকাও তোলা হয় সেদিন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল ভাষা শহীদদের রক্তে সেই রাজপথে জুতা পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন না—এমন চিন্তা থেকেই খালি পায়ে প্রভাতফেরির প্রথা চালু হয়েছিল।

কেন ফুল দেই আমরা?

ফুল মানেই ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা প্রকাশের প্রতীক। আমরা ভালোবাসা প্রকাশ করি ফুল দিয়ে। কাউকে শ্রদ্দা জানাতে গেলেও ফুলের কোনো বিকল্প নেই। সেই শুরু থেকে শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার রীতি ছিল। কারণ ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে যে স্মৃতিস্তম্ভ তথা শহীদ মিনার নির্মাণ হয়েছিল, সেখানেও এই ফুল দেওয়ার বিষয়টি ছিল। এখানে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টিই মূখ্য।

শ্রদ্ধা জানানোর সময় কখন, সকালে নাকি রাতেই?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে অর্থাৎ রাত ১২টা ১ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে। ভাষাসংগ্রামী ও সংস্কৃতিসেবীদের অনেকে এর বিরোধিতা করছে যদিও। কারণ, সেই শুরু থেকেই ভোরে প্রভাতফেরির মাধ্যমে অমর একুশে পালিত হয়। এতে সঠিকভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন আসছে।

বেশিরভাগ বোদ্ধারা মনে করেন, বাংলা বর্ষ গণনায় দিনের শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে। কিন্তু খ্রিস্টাব্দ গণনার ক্ষেত্রে দিন শুরু হয় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে। আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খ্রিস্টাব্দ অনুসরণ করে এলেও এটা যেহেতু ভাষা ও স্বাধিকারের বিষয়, সেহেতু প্রভাতফেরিটা ভোরবেলায়ই করা উচিত।

মূলত আশির দশকের পর থেকে রাত ১২টা ১ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের প্রথম থেকেই এই সংস্কৃতিটা ছিল ভোরবেলায় প্রভাতফেরি করার। আর হত্যাকাণ্ডটিই সংগঠিত হয়েছিল সকালের পরপরই। তাই শ্রদ্ধা জানানোর উপযুক্ত সময় ছিল ভোরে, স্নিগ্ধ সকালের শুরুতে।

আমাদের উচিৎ সঠিক সংস্কৃতি মেনে নেওয়া, মেনে চলা। কারণ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এক্ষেত্রে আমরা যেমন করে প্রভাতফেরি করব অন্যান্য দেশ সেটাই অনুসরণ করবে। এখন আমরা যদি সংস্কৃতি বিকৃত করে ফেলি তাহলে একদিন তো এই সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে।

 

বাংলা ইনসাডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭