ইনসাইড থট

পাবলিক টয়লেট ও আমাদের মফস্বলের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/02/2019


Thumbnail

এবার কোন এক ছুটিতে যখন বাড়িতে গেলাম প্রথাগতভাবেই দেখা হলো ছোটবেলার কিছু বন্ধু-বান্ধবের সাথে। এ কথা বলা প্রয়োজন আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব ঢাকা কিংবা শহরকেন্দ্রিক জীবনকে পরিহার করে বেছে নিয়েছে মফস্বলের জীবন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের সবুজ প্রান্তরে ভালোই আছে এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে এই গ্রাম কিংবা মফস্বল কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ জানাই তাদের। ঠিক তেমনি এমন এক আড্ডায় এক বন্ধু আক্ষেপ করে বললো- আমি কেন মফস্বল কিংবা গ্রামের টয়লেট সমস্যার কথা লিখছি না? কারণ তার মতে আমরা শহর নিয়ে সবসময় সবাই চিন্তা করছি, শহরের জীবনযাপনকে উন্নত করার চেষ্টা করছি, অনেক ধরনের সমস্যার কথা বলছি এবং সমাধানের জন্য অনেক পথ দেখিয়ে দিচ্ছি অথচ গ্রামকে আরো উন্নত করতে চাইছি। সেই গ্রামের কথা ঠিকভাবে কেউ তুলে ধরতে পারছি না | তার মতে একটি মফস্বল কিংবা গ্রামের মেয়েরা সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ে পর্যাপ্ত টয়লেট এর অভাবে যখন তারা বাইরে যায়। আর এই বিষয়টি আমাকে তখন থেকেই ভাবনায় ফেলেছে।

চারপাশে বাড়ি হচ্ছে, গাড়ি বাড়ছে। এত বিশাল জলরাশির জন্য বড় বড় রাস্তার পাশে তৈরি হচ্ছে সব বিশাল শপিং মল, দোকানপাট। সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রাম কিংবা মফস্বলেও গড়ে উঠছে শপিং সেন্টার, দোকানপাট, স্কুল কলেজ ইত্যাদি। ঈদের ছুটিতে যখন বাড়ি যাই এখন আর আগের মত লাগে না গ্রামগুলোকে। শহর আর গ্রামের মাঝখানে গড়ে ওঠা কোনকিছুর মতোই মনে হয়।  ঠাঁই নেই মফস্বলের রাস্তাগুলোতেও তিল পরিমান। এখানেও নেমে এসেছে যানজট। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় কিন্তু দেখা যায় তাদের কথা ঠিকমত কেউ শুনছে না, তারাও নির্বিকার।

যাই হোক, আজকে আমার লেখায় যে বিষয়টি তুলে আনতে যাচ্ছি সেটি হচ্ছে শহরে পাবলিক টয়লেটের জন্য অনেক আলোচনা-সমালোচনা কিংবা পদক্ষেপ নেয়া হয়, অনেক কথাবার্তা হয় এমনকি বিভাগীয় শহরগুলোতে সুন্দর ঝকঝকে পাবলিক টয়লেট স্থাপনে মেয়র মহোদয়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে আমাদের স্থপতিরা, পরিকল্পনাবিদ এবং প্রকৌশলীরা যা আশার সঞ্চার করে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তার পরিমাণ এখনো হাতে গোনা যায় তবে ক্ষতি কি, ভাবনা তো শুরু হয়েছে! কিন্তু চোখ রাখা যাক আমাদের মফস্বলগুলোর দিকে। চারদিকে অপরিকল্পিতভাবে আবাসন তৈরি হচ্ছে, ছয়তলা শপিং মল তৈরি হচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থাপনায় নকশায় পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাপনা থাকলেও বাস্তব চিত্র এর আলাদা।

অনেক মফস্বল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ হাট-বাজার করছেন অথচ পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাপনার সুন্দরভাবে না থাকার জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেককেই- বিশেষ করে মহিলাদের অবস্থা ভয়াবহ! প্রয়োজনীয় পাবলিক টয়লেট এর অভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অনেককেই। যা দু-একটি আছে সেগুলোর পরিবেশ চরম ভয়াবহ- নোংরা পরিবেশ যত্রতত্র। গ্রামগঞ্জে তাইতো লোকমুখে শোনা যায় মহিলারা সকাল থেকে পানি পান করা বন্ধ রাখে যেন তাদের টয়লেট ব্যবহার করতে না হয়, যেদিন তারা কোন শপিংমলে যাবে কিংবা বাইরে বেড়াতে যাবে! এমনকি এমনটি হয়ে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। কিন্তু এই সুবিধা আমাদের নাগরিক অধিকার। এই ও ব্যবস্থাপনা কিন্তু নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেকে চক্ষুলজ্জায় কিছু বলেনা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেল, বেশিরভাগ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে আশেপাশে থাকা মসজিদে গিয়ে। অনেকসময় এর জন্য তাদের চরম বেগ পেতে হয়। এমনকি মার্কেটের দোকানপাট সবই আছে অথচ টয়লেটের জায়গায় অতিরিক্ত দোকান বরাদ্দ করেছেন অনেক বেশি লাভের আশায়। তাহলে এর সমাধান কি?

সবথেকে প্রথমে স্থানীয় আইনের আওতায় কিছু নির্দেশনা আনতে হবে। যেমন পৌরসভা, জেলা, উপজেলাতে কঠোর নিয়ম করে দেওয়া উচিত। প্রতিটি বাণিজ্যিক ভবনে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাপনা থাকা বাধ্যতামূলক। যা কিছুদিন পরপর সরেজমিনে দেখা প্রয়োজন। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাণিজ্যিক ভবনের টয়লেট রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে এবং কেমন হবে তা সঠিক দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে। এমনকি নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ওই ভবনের জনসংখ্যার ঘনত্বের উপর নির্ভর করে কয়টি টয়লেটের ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে- তার নিশ্চয়তা প্রদান স্থানীয় সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। নিজেদের পরিবেশ ভালো রাখতে হলে নিজেদেরকেই এ ব্যাপারে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে সবথেকে প্রথমে। উদ্যোগ নিতে হবে স্থানীয়ভাবে তবে আমরা পাব একটি স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ।

তাছাড়া বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম গ্রাম উন্নয়ন, যেখানে স্পষ্ট করে গ্রামের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের কথা তুলে ধরা আছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে দেখা যায় প্রতিটি উপজেলাতেই তিনি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আনতে বলেছেন- যেখানে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর গ্রামের কিংবা মফস্বলের প্রত্যেকটি নাগরিকই পাবে পর্যাপ্ত সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এমনকি পাবলিক টয়লেটের মতো বিষয়কে আরও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে এখন থেকেই। তাছাড়া পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা সব বিষয়গুলোকেই  সেই মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আনতে হবে এবং সেই মাস্টারপ্ল্যান অবশ্যই হতে হবে কমপক্ষে ৫০ বছরের কথা চিন্তা করে। তবেই প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন সার্থক হবে।

সবশেষে বলতে চাই, গ্রামকে উন্নত করতে হলে প্রথমেই গ্রামের মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে। সেই সাথে গ্রামের মানুষের অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল মৌলিক বিষয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে হবে। গ্রামগুলোর জন্য গ্রাম উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং গ্রাম উন্নয়ন নীতিমালার মধ্যে গ্রামের বাসস্থান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন পাবলিক টয়লেট ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট, জলাশয় সংরক্ষণ নীতিমালা সহ সকল বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যাতে করে পরবর্তীতে আমাদের বলতে না হয় সঠিক পরিকল্পনার অভাবে গ্রামগুলোকে আমরা আজ শহরের মতো করেই নষ্ট করে ফেলেছি।

 

 

বাংলা ইনসাইডার/এমআর

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭