ইনসাইড থট

চকবাজারের ভয়াবহতা আলোচিত হোক সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/02/2019


Thumbnail

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চকবাজার অগ্নিকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় লেখা ফেসবুক স্টাটাসে নিজের বুক ভেঙ্গে যাবার কথা উল্লেখ করে জনবহুল স্থানে কারখানা স্থাপন এবং পরিচালনার বিরুদ্ধে আইন প্রনয়ন এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে এই বিষয়টি সংসদে উত্থপন এবং আলোচনার পক্ষেও মত দিয়েছেন। শাহরিয়ার আলমকে ধন্যবাদ। কিন্তু মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনি সংসদে ট্রেজারি বেঞ্চের মানুষ। তাই নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের বাইরে  তার কথা বলার বা বিভিন্ন প্রশ্নে নোটিশ দেয়া বা আলোচনার প্রস্তাব করার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আর যেমন বিরোধীদল ( বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা এখনো শপথ নেননি) আমরা দেখছি , তাতে সন্দেহ হয় যে জাতীয় পার্টির কোনো সংসদ সদস্য চকবাজারের ঘটনাটি সংসদে তুলে আলোচনার দাবি জানাবে কি না?

এটা জানা দরকার যে শুধু বিরোধীদল নয়, মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাইরে আওয়ামী লীগের যে কোনো সংসদ সদস্য চকবাজারের ঘটনাটি সংসদে তুলে এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করতেই পারেন। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির বেশ কয়েকটি ধারা সংসদ সদস্যদের সেই ক্ষমতা বা অধিকার নিশ্চিত করেছে।

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রনালি বিধির  ৬১ ধারায় ‘জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব’, ৬৮ বিধিতে জরুরী জন-গুরুত্বসম্পন্ন বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অবশ্যই চকবাজারের বিষয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হওয়া দরকার। এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র , স্বাস্থ্য এবং দৃযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা ৩০০ ধারায় সংসদে বিবৃতি দিলেও তার ওপর কথা বলতে পারবেন সংসদ সদস্যরা।

সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৬১ /৬২/৬৩ ধারায় সংসদ মুলতবি করে জাতীয় গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে ‘স্পিকারের অনুমতি লইয়া সাম্প্রতিক ও জরুরী জনগুরুত্বসম্পন্ন কোনো নির্দিষ্ট বিষয় আলোচনার উদ্দেশ্যে সংসদের কাজ মুলতবী করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করা যাইবে’। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন চলমান আছে। এই অধিবেশনে এখন রাষ্ট্রপতির ভাষনের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন সংসদ সদস্যরা। সংসদ মুলতবি বলতে এই আলোচনা সাময়িক স্থগিত করে চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড নিয়ে আলোচনার জন্য মুলতবি প্রস্তাব আনতে পারেন যে কোনো সদস্য। কার্যপ্রনালিবিধির ৬৩ ধারায় বলা হয়েছে ‘প্রস্তাবটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিবে।’ আবার এমনও বলা হয়েছে ‘প্রস্তাবটি এমন কোনো বিষয়ে হইবে না,যাহার প্রতিকার কেবল আইন প্রণয়ন দ্বারাই হইতে পারে।’ এটাতো ঠিক শুধু আইন করলেই হবে না, যদি না জনসচেতনতা জোরালো হয়, তবে এমন অগ্নিকান্ডের ভয়াবহ মৃত্যু কেউ এড়াতে পারবে না। তবে এটাও ঠিক চকবাজারে এমন কয়েকজন পথচারী এবং রাস্তায় হকারী করা অনেকেই মারা গেছেন যাদের কোনো দায় ছিল না, গ্যাস সিলিন্ডার বা কেমিক্যাল গোডাউন এবং বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হওয়ার ব্যাপারে।

সংসদের ৬৮ বিধিতেও জরুরী বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার সুযোগ আছে। আমরা আশা করতেই পারি যে এই ধারার প্রয়োগ করেও কেউ না কেউ জাতীয় সংসদে চকবাজারের ঘটনা আলোচনার জন্য উত্থাপন করবেন।

আর সংসদে আলোচনা হতে হবে ২০১০ সালে নিমতলীর ঘটনার পর কেন আবারো আমাদেরকে এমন একটি জাতীয় ট্রাজেডির মুখোমুখি হতে হলো, যাতে প্রাণ গেলো ৮০ জনের বেশী নীরিহ মানবসন্তানের। আলোচনা করতে হবে শিল্প মন্ত্রনালয় কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তা একনেক বৈঠকে উত্থাপিত এবং অনুমোদন হতে কেন আট বছর লেগে গেলো। বিসিক কেমিক্যাল পল্লী,ঢাকা প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এই প্রকল্প একনেক বৈঠকে পাশ হয়েছে গত বছর ৩০ অক্টোবর । আর কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমি কিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকায় সম্ভব হবে কি না , সেও এক বড় প্রশ্ন। আর ট্যানারী শিল্পনগরী হাজারীবাগ থেকে সাভারে সরিয়ে নিতে যে সময় অতিবাহিত হলো তাতে করে বিসিকের প্রকল্প বাস্তবায়ন দক্ষতাইতো এক বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

শুরু করেছিলাম পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে উদ্ধৃত করে । এবার তার উদ্দেশ্যে বলতে চাই সংসদের কার্যপ্রনালি বিধির ১৩০ ধারায় সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ আছে। এই ধারায় যে কোনো সদস্য বা মন্ত্রী সাধারন জনগুরুত্বসম্পন্ন সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন। তবে তিনি চকবাজার অগ্নিকান্ড নিয়ে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের নোটিশ দেবার আগে বিষয়টি সংসদনেতা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ,সরকারী দলের চীফ হুইপ এমনকি স্পিকারের সংগেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে নিতে পারেন। কারণ সিদ্ধান্ত প্রস্তাব এমন বিষয়ে হতে হবে ‘যাহা প্রাথমিকভাবে সরকারের দায়িত্বাধীন , বা যাহাতে সরকারের পর্যাপ্ত আর্থিক স্বার্থ জড়িত আছে।’


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭