ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও দর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/03/2019


Thumbnail

জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের প্রামাণ্য দলিলের অনন্য স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ একটি অনবদ্য, অনন্য ভাষণ। বলা হয় এটি পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ভাষণগুলোর একটি। দু’বছর আগে JACOB. F. FIELD তার ‘ÔThe Speeches that inspired history’ গ্রন্থে পৃথিবীর ৪১টি সেরা যুদ্ধ উদ্দীপনাদায়ী ভাষণের মধ্যে এই ভাষণটিকে স্থান দিয়েছেন। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা এই ভাষণটি আজও বাঙালীর অন্যতম উদ্দীপনার উৎস। বার বার শোনার পরও প্রতিটি বাঙালী আজও এই ভাষণ শুনে আবেগে শিহরিত হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুত ভাষণ ৭ মার্চের ভাষণ। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন কিনা এনিয়ে ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে অনেক জল ঘোলা করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে দিয়ে জাতির পিতা যুদ্ধের প্রস্তুতি ও রণ কৌশল ঘোষণা করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণ কেবল কি একটি স্বাধীনতার ঘোষণা, একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি বার্তা? ইতিহাসের যে কোন ছাত্র যদি ৭ মার্চের ভাষণ গভীর ভাবে পড়েন এবং বিশ্লেষণ করেন, তাহলে এর মধ্যে একটি গভীর তাৎপর্য পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে একটি জাতি রাষ্ট্রের অবয়ব এবং রাষ্ট্রপরিচালনার মৌলিক পরিকল্পনা। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র কেমন হবে সে স্বপ্নের কথা বলেছেন। বলেছেন এর অভ্যূদয়ের প্রেক্ষাপট এবং অনিবার্যতার কথা এবং রাষ্ট্র চরিত্রের কথা।

আমার মনে হয়, ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালী যতোটা আপ্লুত ততোটাই এর গভীরে যেতে অনাগ্রহী। ৭ মার্চের ভাষণে যেমন আছে উদ্দীপনা ও উম্মাতাল দ্রোহ তেমনি আছে সমাজ ও রাষ্ট্র দর্শন। কবি নির্মলেন্দু গুন যথার্থই ৭ মার্চের ভাষণকে এক অমর কবিতা বলেছেন। কবিতার ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে থাকার কথার গুঢ়ার্থ যেমন আমরা আবিস্কারের চেষ্টা করি, ৭ মার্চের ভাষণের অন্তর্নিহিত কথাকে আবিস্কারের নেশা আমাদের নেই। বরং বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি কেন, কিংবা উপস্থিত বক্তৃতা এতো কাব্যিক কিভাবে হয়, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ ভরাট-ইত্যাদি হালকা কথাবার্তা আমাদের এই ভাষণের ঐশ্বর্য আবিস্কারে উৎসাহিত করেনি।

একটি ভাষণে যে একটি রাষ্ট্রদর্শন কিভাবে উপস্থাপন করা যায়, তার অনন্য এবং সম্ভবত একমাত্র উদাহরণ হলো ৭ মার্চের ভাষণ। ভাষণের দ্বিতীয় লাইনে বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন।’ এই একটি কথার মাধ্যমে জাতির পিতা জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জনগণের বিচক্ষণতার কথা বলেছেন। আব্রাহাম লিংকন থেকে শুরু করে ইন্দিরাগান্ধী প্রত্যেকের ভাষণের লক্ষ্য ছিলো ‘জনগণ’। মহান রাজনৈতিক নেতারা ভাষণ দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। ভাষণের কথা ছিলো ‘আপনাদের বলতে চাই’ কিংবা ‘প্রিয় দেশবাসী আপনাদের জানাতে চাই’ ইত্যাদি। এটা এক ধরণের মাস্টারি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জনগণের উপর আস্থা রেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, এদেশের মানুষের অসীম ক্ষমতার উপর। জনগণকে তিনি জ্ঞানী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিচক্ষণ মনে করতেন। জনগণের উপর এই আস্থা কেবল ৭ মার্চের ভাষণেই নয়, তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও আমরা দেখি যে মানুষের উপর তার আস্থা ও ভালবাসার কথা- ‘মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনগণ আপনার জন্য জীবন দিতেও পারে।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা- ২৫৭) জনগণের উপর আস্থা এবং জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে রাখার ধারণাকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বলা হয় ‘জনগণের ক্ষমতায়ন।’ বঙ্গবন্ধু জনগণকে অজ্ঞ, অবুঝ ভেবে তাদের জ্ঞান দিতে চাননি, তাদের জানা তথ্য দিয়ে এগুবার কৌশল নির্ধারণ করতে চেয়েছেন। জনগণের সাথে সম্পৃক্ততার একটি উদাহরণ হলো এই ছোট্ট উক্তি।

পঞ্চম লাইনে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ জাতির পিতা এই কথার মাধ্যমে স্বাধীনতার একটি রূপকল্প জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

বাংলার মানুষ মুক্তি চায়- এই বক্তব্যের অর্থ হলো, বাংলার মানুষ পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্তি চায়। সেটাকে আমরা বলি রাজনৈতিক স্বাধীনতা। বাংলার মানুষ বাঁচতে চায় এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাবান হওয়াকে বাঁচার সমার্থক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মুক্তি (স্বাধীনতা) ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। অর্থাৎ বাঁচার জন্য চাই স্বাধীনতা। পরের অংশে বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রয়োজন হলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। স্বাধীনতা ছাড়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত নয়। আব্রাহাম লিংকন যেমন দশ শব্দে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন গেটিসবার্গের (১৯ নভেম্বর ১৮৬৩) বক্তৃতায় তেমনি বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ সংজ্ঞা দিয়েছিলেন ৭ মার্চ ১৯৭১ এর ভাষণে। স্বাধীনতা মানে কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, স্বাধীনতা মানে হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (বেঁচে থাকা), মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।

জাতির পিতা তার ভাষণে স্বাধীনতার অবয়ব এঁকেছেন এভাবে- ‘এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। ‘মুক্তি’ স্বাধীনতার প্রতিশব্দ। মুক্তি বা স্বাধীনতা মানে কেবল একটি পতাকা, একটি জাতীয় সংগীত এবং একটি সংবিধান নয়। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা তার ৭ মার্চের ভাষণে বলেছেন। ৭ মার্চের ভাষণে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে এভাবে- ‘২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষু নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস।’ রাজনৈতিক মুক্তি প্রসংগে বঙ্গবন্ধু ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত পটভূমি বলেছেন মাত্র ১০ বাক্যে। আর ৫২র রক্তদানের মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক মুক্তির দ্বার উন্মোচন করেছেন।

আজ যদি আমরা নির্মোহভাবে স্বাধীনতা বা মুক্তির ব্যাখা অন্বেষন করি তাহলে দেখবো, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশই হলো স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মানচিত্রে ভূমিষ্ঠ প্রতিটি রাষ্ট্র স্বাধীনতার এই চ্যালেঞ্জের মুখে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন হলেও থাকছে অর্থনৈতিক পরনির্ভরতা আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে ছিন্ন ভিন্ন হচ্ছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, হারিয়ে যাচ্ছে তাদের সংস্কৃতি, ভাষা। অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তি বা স্বাধীনতা ছাড়া যে স্বাধীনতা অর্থহীন আজ বিশ্বে কি নতুন করে বলতে হবে? বঙ্গবন্ধু ৭০ এর দশকে স্বাধীনতার যে সংজ্ঞা দিয়েছিলেন আজ গোটা বিশ্বে তা আরাধ্য।

বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে ‘গণতন্ত্রের’ একটি নতুন বার্তা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন- ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশী হলেও, একজন যদিও হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।’

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের নামে অনেক ভালো চিন্তা ও উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়। শুভ কাজ সংখ্য্যাগরিষ্ঠতার চাপে পিষ্ঠ হয়। এজন্যই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র’ (inclusive democracy) চালু হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ভালো পরামর্শ বা প্রস্তাব যদি একজনও দেয় তাকে মূল্যায়ন করা উচিত। একুশ শতকের অগ্রসর গণতন্ত্রের এই ধারা জাতির পিতা ৭০ এর দশকের গোড়াতে ধারণ করেছিলেন।

৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা রাষ্ট্রকাঠামোর চরিত্রের রূপরেখা উপস্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালী, অবাঙালী যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপর’- অর্থাৎ অসম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশের চিত্র ৭ মার্চের ভাষণেই এঁকেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই অসম্প্রদায়িক চেতনা রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে নয় জনগণের সহজাত দায়িত্ববোধ থেকে উৎসারিত হতে তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের রাজনৈতিক চেতনা দাঁড়িয়ে আছে অসাম্প্রদায়িকতার উপর। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন- ‘ধর্মপ্রাণ বাঙালী মুসলমানরা তাদের ধর্মকে ভালোবাসে’ কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধি করতে তারা দিবে না’...(অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা-২৫৮)।

৭ মার্চের ভাষণের ৪৪ বছর পর আমরা দেখি রাষ্ট্র যতোই ধর্মের লেবাস চাপিয়ে দিক, যতোই রাষ্ট্র ধর্মের জিকির তুলুক এখনও বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত। এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ। এখনও ঈদ-পূজা-পার্বণে বাঙালী একাকার হয়ে যায়, ধর্মের দেয়াল এক পলকে ধসে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণে রাষ্ট্রচরিত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য জাতির পিতা উন্মোচন করেছেন তা হলো সাম্য রাষ্ট্রের ভাবনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে গরীব মানুষ, দুঃখী মানুষের কথা, নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের কথা বার বার এসেছে। ভাষণের শুরুতে যেমন তিনি বলেছেন ‘২৩ বছরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস’ ভাষণের মাঝামাঝি স্থানে বঙ্গবন্ধুর আবার গরীব দুঃখী মানুষের কথা বলেছেন-‘আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের গরীব দুঃখী-আর্ত মানবতার বিরুদ্ধে।’

আবার ভাষণের শেষ ভাগে অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনা অংশে বঙ্গবন্ধু বলেছেন-‘গরীবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে.....রিকশা, গরুর গাড়ী চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে....লক্ষণীয়, ‘গরীব মানুষ’ উচ্চারণের পরপরই বঙ্গবন্ধু ‘আমার মানুষ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র বান্ধব, পীড়ন মুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু এই উক্তির মধ্যে দিয়ে। এটা ছিলো বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের লালিত দর্শনের সংক্ষিপ্ত।

দমন-পীড়নকে বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনাকাল থেকেই অপছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমরা পাই-

“রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে গুলী করে হত্যা করা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টকর। আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তারা এই সমস্ত জঘন্য কাজকে ঘৃণা করি।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৯৫)

এই গ্রন্থেরই আরেকটি জায়গায় বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দী করে রাখা আর তার আত্মীয় স্বজন ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে?’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ২০৯ পৃষ্ঠা)

৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা পাকিস্তানী নিপীড়ন ও বর্ণনার কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন- ‘বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’ এই মন্তব্য পীড়ন মুক্ত রাজনৈতিক দর্শণের বহিঃপ্রকাশ। যা জাতির পিতা সারাজীবনের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে উৎসারিত।

৭ মার্চের ভাষণে একদিকে যেমন স্বাধীন রাষ্ট্রের দর্শন ভিত্তি গুলো বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনি ঐ ভাষণে বাংলাদেশের বিকাশের আকাঙ্ক্ষাও বর্ণনা করা হয়েছে। এই ভাষণের শেষ ভাগে এসে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায় রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবা না।’ একটি উন্নত বিকশিত রাষ্ট্রের স্বপ্ন জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বিধৃত করেছিলেন। আজ তা বাস্তবতার ভূমি স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশ আজ প্রায় সব সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। গোল্ডম্যানস্যাকস এর মতে এই শতকের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিডাব্লিউসির মতে ক্রয় ক্ষমতার সমতায় ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ। হেনরী কিসিঞ্জার যাকে তলাবিহনীর ঝুড়ি বলেছিলেন, সেই বাংলাদেশকে কেউ ‘দাবায়’ রাখতে পারেনি। বাংলাদেশ বিকাশের ধারায় দ্রুত ধাবমান একটি রাষ্ট্র।

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলেননি। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণের শেষ পংক্তিতে বলেছেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ মুক্তির ব্যাখা তিনি প্রথম ভাগে দিয়েছেন যেখানে তিনি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা বলেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ণতা পাবে যদি আমরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বয়ম্ভর হতে পারি, গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার চর্চার মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারি। আর নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন এবং বিকাশের মাধ্যমে আমরা সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জন করতে পারবো। এটাই ছিলো স্বাধীন রাষ্ট্র কাঠামোর রূপকল্প। আজ জাতির পিতার ঐ আকাঙ্ক্ষাই সকল স্বাধীন রাষ্ট্রের আরাধ্য।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে কেবল তাই স্বাধীনতার ঘোষণা নয়, কেবল ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তা  নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ এর মাধ্যমে কেবল গেরিলা যুদ্ধের দিক দর্শনই নেই। এই ভাষণে আছে একটি আদর্শ জাতি রাষ্ট্র গঠনের দার্শনিক ভাবনা এবং রূপরেখা। সেটাই হলো আসলে বাংলাদেশের ভিত্তিমূল।

 

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭