ইনসাইড আর্টিকেল

নারীরাই কি নারী অগ্রগতির মূল প্রতিবন্ধক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/03/2019


Thumbnail

তুমি মেয়েদের কলেজে পড়বে, সাইকেল চালাতে শিখতে হবে না তোমাকে, গান শিখে কি করবে, তুমি তো আর বাইরে গান গাইবে না, তুমি সায়েন্স না নিয়ে বরং কমার্স বা আর্টসে পড়ো- মনে করে দেখুন, নারী হয়ে এই কথাগুলো কোনো নারীর কাছ থেকেই বেশি শুনেছেন।

কথায় কথায় কোনো এক মা তার মেয়েকে একটা কথা প্রায়ই বলেন, তোমাকে এত পড়াশুনা না করিয়ে আরও আগেই যদি বিয়ে দিয়ে দিতাম, তাহলে আজ এত ভোগান্তি হতো না। কিন্তু কি এই ভোগান্তি? তেমন কিছুই না। বেশি পড়াশুনা জানা মেয়ে নাকি বিয়ে দিতে সমস্যা। উপযুক্ত পাত্র (লেখাপড়া, বংশ, ভালোমানের চাকরি আছে যে ছেলের) পেতে সমস্যা হয়, সেই মেয়ের পছন্দ বেশি থাকে- কত কথাই তো ‍শুনতে হয়।

একজন মা নারী হয়ে তার মেয়েকে যখন এই কথা বলে, তখন কি বলতে ইচ্ছে করে? নারীই চায় না নারীমুক্তি হোক। এই না চাওয়াটা পরিবার থেকে পুরো সমাজে বিদ্যমান।

একটা কথা আছে, ‘women is the enemy to herself’ অর্থাৎ নারীর শত্রু নারী নিজেই। মাঝেমধ্যেই মনে হয় নারীর জীবনে ঘটনাটা ভয়ঙ্করভাবে সত্যি।

নারীরা ভাবে শুধু ‘মেয়ে মানুষ’। সংসারে পতিব্রতা হলেই আমার চলবে। আমি অমুক চ্যালেঞ্জিং পেশা বেছে নিতে পারি না, কারণ লোকে কী বলবে। সমাজ তো ভালোভাবে দেখবে না। আমি তো মেয়ে, অফিসের কঠিন কাজটা আমি কেন করবো, ফিল্ডওয়ার্ক আমার জন্য না, এতে আমার কষ্ট হবে- এই যে বিভিন্ন অজুহাতগুলো মেয়েরাই বের করে নেয়। সমান অধিকারই যদি দাবি করি, তাহলে কাজেকর্মে নিজেকে গুটিয়ে রাখা কেন? তার মানে নিজেরাই তো পিছিয়ে থাকছি।

পরিবারের মা, বোনসহ অন্যান্য নারী সদস্যগুলোই মনে করে নারীরা ঘরে বসে শুধু ধর্মকর্ম করবে, কাজ করবে, পরিবারের সদস্যদের দেখভাল করবে। একটা মেয়ে যখন রান্নাবান্না ভালো পারে না, তার মানে সেটি পাপ। ঘরদোর গোছাতে না পারলে সেটা অলক্ষীপনা। কই, একটা পুরুষকে তো এই অভিযোগ ঘাড়ে নিতে হয় না! এই কাজগুলো না পারলে মা-বোনেরাই বলে, ‘এগুলো না পারলে তুই সংসার করবি কীভাবে!’ মানে এগুলোই নারীর অগ্রগতির একমাত্র পরিচায়ক। এগুলো ছাড়া অগ্রগতি বা সংসার কোনোটাই হবে না।

আবার মনে হয় পুরুষের চেয়ে বোধহয় নারীরাই নিজেদের জন্য বড় বাধা। নারী নিজেই নিজেকে অসহায় ভাবতে ভালোবাসে। তাকে সবসময় কেউ সাহায্য করবে- সেই প্রত্যাশা তাদের সবসময়েই থাকে। এই যেমন আবার অফিস থেকে বের হতে দেরি হলো, মনে হলো বন্ধু বা পুরুষ কোনো সহকর্মী যদি এগিয়ে দিতো, ভালো হতো। অথচ সঙ্গে আরও এক-দুইজন নারী সহকর্মী থাকলেও নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে না। মূলত মন মানসিকতা আধুনিক হতে হবে, তারপরেই ভাবতে হবে সমতা আর অগ্রগতি নিয়ে।

‘আমি বোধহয় এটা পারবো না, আমি এটা কেন করবো, এটাতো আমার কাজ না, দিয়ে কিছুই হবে না, আমি মেয়ে হয়ে অতোদূরে কেন যাবো, আমাকে এগুলো মানায় না’- এই অজুহাতগুলো দেওয়া মানেই নিজের লাগাম টেনে ধরা।

আবার নারীরা সংঘবদ্ধ হয় না অনেকক্ষেত্রেই। কোনো সফল নারীকে দেখলে গর্বিত না হয়ে ঈর্ষান্বিত হতে দেখা যায়। সমাজে প্রতিষ্ঠিত নারীকে দেখলে আরেক নারীই মনে করে আমি যেখানে সফল হতে পারলাম না, সে কীভাবে পারলো! নিশ্চয়ই অন্য কোনোকিছু চক্কর তো আছেই। আর আমি তো কখনো অমুকের মতো আধুনিক হতে পারবো না, সেই যোগ্যতা আমার নেই।

মূল কথা হলো, নারী নিজেই তার শৃঙ্খলের মধ্যে আবদ্ধ। পুরুষশাসিত সমাজ তাকে যেভাবে বলবে সেভাবেই সে চলবে। এই মানসিকতা তাকে কখনোই বড় হতে দেবে না। আলাদা কোনো দিবস করেও নারীমুক্তি ঘটবে না আসলে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭