ইনসাইড থট

খাদ্য নিয়ে যতো ঝুঁকি আর শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/03/2019


Thumbnail

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নই ছিলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সে লক্ষ্য অর্জনে। মোটামুটি সফল। সেই খাদ্য সবার কাছে পৌঁছানো এবং নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন গড়ে তোলাও এই সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আমরা যা খাচ্ছি তা যেন নিরাপদ হয়। খাদ্য যেন কোনোভাবে অস্বাস্থ্যকর, দূষিত বা আমাদের ক্ষতির কারণ না হয়। কিন্তু তা কি আসলেই হচ্ছে?

আমাদের তো সুষম খাদ্যচাহিদা পূরণ করতে হয় নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে। প্রোটিন তুলনামূলক বেশিমূল্যের বিধায় তা সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নাও থাকতে পারে। তাদের জন্যেই ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে হাইব্রিড প্রোটিন উৎসগুলোই ভরসা।

আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় বিকল্প খাদ্য উৎপাদনের চিন্তা না করলে বলা যায় একরকম পুষ্টিহীনতা আমাদের পিষে ফেলতো। বাংলাদেশে মাছচাষ, পোল্ট্রি  হাসমুরগি চাষ করার কারণেই মানুষ এখন ন্যূনতম প্রোটিনটি অন্তত পাচ্ছে, কোনো পর্যায়ের মানুষই এখন পুষ্টিহীনতায় ভুগছে না।

মূল উদ্দেশ্য হলো খুব দ্রুত উৎপাদন করা, সঙ্গে অর্থলোভ তো রয়েছেই। যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে মাছ, মুরগিসহ অন্যান্য পশুচাষ করা যায়। এটা বেআইনি বা অস্বাস্থ্যকর নয় কিন্তু আমাদের কিছু অর্থলোভী বিনিয়োগকারী, উৎপাদনকারী প্রতারণা করছে।

আমাদের ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিস থেকে মার্কারি প্রথমে বাতাসে মিশে যাচ্ছে। পরে সেটা বৃষ্টির পানির সাথে সরাসরি গিয়ে পড়ছে নদী-নালা, খাল বিল ও সমুদ্রে। সেটা তখন মিথাইল মার্কারি পরিণত হচ্ছে এবং মাছের খাদ্য হয়ে যাচ্ছে।

মাছের যে খাদ্যটা ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা কতোটা স্বাস্থ্যকর বা কতোটা ক্ষতিকর সেটা অনেক বড় একটা প্রশ্ন।

পঁচা পানিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পঁচা, মজা পুকুর, ডোবা, জলাশয়ে মাছ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে চাষের জন্য। এই পানিতে যে কীটনাশক, সব ধরনের বিষাক্ত বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্য মিশছে। সেই পানিতে বেড়ে ওঠা মাছ আমাদের জন্যেও বিষাক্ত হয়ে শরীরে প্রবেশ করছে। এমনকি বিভিন্ন পয়ঃশোধনাগার গুলোতেও অসৎ লোকেরা মাছ ছেড়ে দিচ্ছে লাভের আশায়। সেই মাছ বর্জ্য খেয়ে দ্রুত বড় হচ্ছে, আমাদের শরীরেও ঢুকছে বিষ। এভাবে মাছ চাষ পু বেআইনি। এই মাছগুলোই সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে, আমরা না জেনে বুঝে সেটা খাচ্ছি। ট্যানারি বা শৌচাগারগুলোর আশেপাশে জলাশয়গুলোতেও এমন নোংরা পরিবেশে চাষ হচ্ছে মাছ।

কোরবানি ইদের আগে শুরু হয় গরু মোটাতাজা করার একটা হিড়িক। গরুকে মোটাতাজা করা, তার জন্য যা খাওয়াতে হবে তার পদ্ধতিটা অবশ্য বৈজ্ঞানিক। কিন্তু সেটারও ডোজ বা সীমা রয়েছে। একটা সাধারণ মাপের গরুকে এনে একজন অসাধু ব্যবসায়ী বা কৃষক উচ্চমাপের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিলো যাতে অন্তত কোরবানি পর্যন্ত তাকে কোনো অসুখ ধরতে না পারে! তাকে ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র (গরু মোটাতাজা করার জন্য একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত এবং লাভজনক পদ্ধতি) খাওয়ালো। এটা স্বাস্থ্যসম্মত হলেও আরেকটু লাভের আশায় যখন ইউরিয়ার পরিমাণটা বাড়িয়ে দিলো, সেই বর্ধনশীল পরিমাণ এই নির্বোধ প্রাণীটি নিতে পারবে না। তার শরীর স্ফীত হবে, নির্দিষ্ট সময় পর ক্ষত বা পচন তৈরি হবে। এই মাংসগুলো তাহলে আমাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক ভাবুন।।

বড় ফার্মগুলো সাধারণত তাদের খ্যাতির দিকে বেশি মনযোগী হয়, তাই গাফেলতি বা অতি মুনাফার দিকে তাদের ঝোঁক কম থাকে। কিন্তু তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যই এই ভেজাল বা হাইব্রিড উৎপাদনে বেশি মনোযোগী। তাদের উদ্দেশ্য কম খরচে বেশি উপার্জন।

আমরা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছি না কোনটা ক্ষতিকর কোনটা ক্ষতিকর নয়। বোঝার উপায়ও নেই। সেক্ষেত্রে এই অবস্থা নিরসনে আমাদের ভূমিকাও কম। আমাদের উদ্দেশ্য খেয়েদেয়ে পুষ্টি উপাদান নিয়ে বেঁচে থাকা। যারা এগুলো উৎপাদন করছে, আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে তাদের মনোভাব পরিবর্তন না হলে আমরা রক্ষা পাবো না।

এখন প্রয়োজন এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। সেটা যেভাবেই হোক। সবার আগে তো আমাদের সচেতনতা প্রয়োজনই। যেখানে কেমিকেলগুলো উৎপন্ন হচ্ছে বা বাইরে থেকে আসছে, লাগাম টেনে ধরতে হবে সেখানেই। এজন্য কর্মকর্তাদের সচেতনতা আর সততার প্রয়োজন। এজন্য সরকার আর কর্তৃপক্ষের ভূমিকাই মুখ্য। তাদের উচিৎ শীর্ষ পর্যায়ে জনবল বৃদ্ধি করা, খাদ্যকে বিষাক্ত যাতে কেউ করতে না পারে, অতি মুনাফা যাতে করতে না পারে সেদিকে নজরদারিও বাড়াতে হবে। উপর পর্যায়ে এই দুর্নীতি বন্ধ হলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক, উৎপাদকের হাতে ক্ষতিকর কিছু পৌঁছাতে পারবে না। তখন তাদের লক্ষ্য হবে উৎপাদন ঠিক রেখে স্বাস্থ্যসম্মত উপায় মেনে চলা।

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭