ইনসাইড পলিটিক্স

প্রধানমন্ত্রী, চাটুকারদের থামাবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/03/2019


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো ‘চাটুকার’। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, এখন ক্ষমতাসীন দলের চারপাশে পিপড়ার মতো চাটুকার ভিড় করে। ব্যাপারটা ঠিক এরকম, যখন কোথায় মিষ্টি পরে থাকলে যেমন পিপড়ার পাল জড়ো হয় ঠিক তেমন। এই চাটুকাররা ক্ষমতাসীন সরকার, দল এবং নীতি নির্ধারকদের এমনভাবে ঘিরে ফেলে যে সেখান থেকে সরকারের কর্তাদের দৃষ্টি অণ্যদিকে যাওয়া দুস্কর হয়ে পরে। এই চাটুকারদের কাজ দুটি। প্রথমত: এরা সরকারকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্বার করে। নিজেরা ব্যবসা, ব্যাংক , টেন্ডার , এটা সেটা বাগিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করে। দ্বিতীয়ত, নিজেদের আঁখের গোছাতে গিয়ে এরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, সরকারের বদনাম জোটাতে সহায়তা করে। সব সরকারের আমলেই এই চাটুকারই সরকারের সবথেকে বড় ক্ষতি করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চারপাশে এই সব চাটুকাররা ভীড় জমিয়েছিল। খুনি মোশতাক ছিল সবচেয়ে বড় চাটুকার। চাটুকারিতার কারিশমায় মোশতাক তাজউদ্দিন আহমেদের মতো নেতাকে বঙ্গবন্ধু থেকে আলাদা করে ফেলেছিল। জাতির পিতার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এই চাটুকাররাই খুনিদের সরকার গঠন করেছিল। জিয়াউর রহমানের চারপাশেও চাটুকারদের অভাব হয়নি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, চাটুকারিতা দিয়েই পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনা কর্মকর্তা এরশাদ সেনাপ্রধান হয়েছিলেন জিয়ার আমলে। তারপর এরশাদ কি করেছেন, তাতো ইতিহাস।

এরশাদ ক্ষমতা নিয়ে চাটুকারদের দুধেভাতে লালনপালন করেন। এরশাদের মায়ের মৃত্যুর পর এরশাদের চেয়ে বেশি কেঁদেছিলেন এক চাটুকার মন্ত্রী। আরেক সাবেক বিপ্লবী বামনেতা এরশাদের জুতো সাফ করেছিলেন বলেও কথিত আছে। কিন্তু এরশাদের পতনের পর এসব চাটুকাররা ভোল পাল্টেছিলেন। এরা কেউই এখন এরশাদের পাশে নেই।

৯১এ ক্ষমতায় এসে বেগম জিয়াও চাটুকারদের দ্বারা বশীভূত হয়েছিলেন। এই চাটুকারদের প্রলোভনেই বেগম জিয়া মাগুরা, মীরপুরের মতো প্রহসনের নির্বাচন করেছিলেন। চাটুকাররাই বেগম জিয়াকে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী না মানার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁদের কারনেই বেগম জিয়াকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো কলঙ্কিত নির্বাচন করতে হয়েছিল।

৯৬এ আওয়ামী লীগ শীর্ষ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এসময় বঙ্গবন্ধু প্রেমী, বঙ্গবন্ধু ভক্তদের যে মশরুম  আবাদ হয়েছিল, তা কি আমরা ভুলে গেছি। এদের বাড়াবাড়ি আওয়ামীলীগের অনেক ভালো এবং যুগান্তকারী কাজকেও ম্লান করে দিয়েছিল। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের পর এসব চাটুকারদের ডিগবাজীর খবর নতুন করে কিছু বলার নেই। এই চাটুকাররা প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানকে আওয়ামী লীগের পক্ষে বলে প্রচার করেছিল। এরাই এম.এ. সাঈদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করতে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে প্ররোচিত করেছিল।

২০০১ সালে বিএনপি দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে। কিন্তু বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেও তখন শুরু হয়েছিল ‘ ভাইয়া যুগের ‘। গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মতো চাটুকার থাকলে কারো যে শত্রুর প্রয়োজন নেই আজকে বিএনপি এবং তারেক জিয়ার অবস্থা দেখলে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে, চাটুকাররা তারেক জিয়াকে ‘যুবরাজ’ বানিয়ে ফেলেছিলো। একটি চ্যানেলে তো তাকে ডেকে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও ঘোষণাও দিয়েছিল। আজ এই চাটুকারদের অনেকে এখন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠজন। এদের কেউ কেউ স্বাধীনতা পদকেও ভূষিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগে রাজনৈতিক চাটুকারদের যে আমলা, প্রশাসনিক চাটুকারদের সংখ্যাই এখন বেশি। এরাই সরকারকে ঘিরে ফেলেছে। অন্যভাবে বলা যায়, এরাই এখন সরকার। কেউ কেউ বলে, আমলা আর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজনই এখন ক্ষমতাবান। তেমন কথা আমি অন্তত বিশ্বাস করতে চাই না। আমি মনে করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ। তাকে জ্ঞান বা পরার্মশ দেয়ার মতো মেধা বা দক্ষতা এদের নেই। কিন্তু এদের অতি উৎসাহ, অতিভক্তি, খুশি করার কিম্ভুতকিমাকার সব আয়োজন সরকারের বিপুল অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তার সর্বশেষ নজির সম্ভবত ডাকসু নির্বাচন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি গত দশ বছরে অনেক সাহসী এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনি কি এইসব ক্ষতিকারক চাটুকারদের একটু ঝেটিয়ে বিদায় করবেন? তাহলে, আপনি আরও গৌরব ও মর্যাদার  আসনে উন্নীত হবেন। দেশ একটা আশঙ্কার আগামী থেকে মুক্তি পাবে। জনগণের স্বার্থে এবার চাটুকারদের থামাবেন প্লিজ?

 

বাংলা ইনসাইডার

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭