ইনসাইড থট

ভ্যাট আদায় ও লক্ষ কর্মসংস্থান!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/03/2019


Thumbnail

দেশের উন্নয়নের মুল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের একটি অন্যতম প্রধান উপায়। যেটা আদায়ে সরকার চরম অসুবিধায় আছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে যে, চলতি অর্থ বছরের জুলাই -জানুয়ারী সময়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের চিত্র খুব খারাপ। উল্লেখিত সময়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১,১৫৫.৯২ বিলিয়ন টাকা যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,৯৬২.৯০ মিলিয়ন। যা লিক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এর মধ্যে ভ্যাট আদায় হয়েছে মাত্র ৪৪৯.৫৮ বিলিয়ন, কাস্টম ডিউটি ৩৬৬.৭০ বিলিয়ন, ৩৩৯.৭০ বিলয়ন আয় কর থেকে। যার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরও ১,৮০৫.৯৮ বিলিয়ন রাজস্ব আহরণ করতে হবে আগামী জুন ২০১৯ তারিখের মধ্যে। বড় বড় সিটিগুলো থেকে মোটামুটি সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় করে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।        

নগরীর বিভিন্ন দোকানে বা সুপার শপে দেখবেন ব্যানার টাঙ্গানো আছে ভ্যাট চালান নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু আপনি ভ্যাটের নীল ফর্ম চাইলেই মহা বিপত্তি। আপনাকে টাকা ফেরত দেবে কিন্তু চালান দিতে চাইবে না। দিলেও আপনার আধা ঘন্টা সময় নষ্ট করে আপনার দেশ প্রেমের পরীক্ষা নেবে। ভ্যাট আদায়ের এই করুণ চিত্রের জন্য দায়ী কারা বা গাফিলতি কাদের তা জানতে একটু আলোচনা করা যায়। কোন দোকান বা সুপার সপে পণ্য কেনার সময় ক্রেতা ঠিকই ভ্যাট দিচ্ছেন, কিন্তু তা সরকারী কোষাগারে জমা হচ্ছে খুব কম। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের আছে। আবার অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে বুঝতে পারছেন না। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ভ্যাটের নামে সরকারী কোষাগারে জনগনের দেওয়া টাকা লোপাট করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সুপার সপ আর বড় বড় দোকানে বা রেস্টুরেন্টে কম্পিউটার জেনারেটেড যে স্লিপ দেওয়া হয় তাতে ভ্যাট লিখে টাকা নিলেও সেই টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয় না, যতক্ষন না ভ্যাটের চালান কাটা হয়। কারণ ঐ কম্পিউটার জেনারেটেড যে স্লিপে কারও নাম লেখা থাকে না, তাই সেটা ভ্যাটের প্রমাণপত্র হিসেবে কোন ব্যক্তি দাবি করতে পারেন না বলে রাজস্ব বোর্ডের কর্তা ব্যাক্তিরা জানিয়েছেন।        

বাংলাদেশের সামনে এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে সম্পদের মজুত দিয়ে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার আর পরনির্ভরশীলতা কমানো। শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধম্যে দেশের উন্নয়নে সন্ধিহানদের সময়োচিত জবাব দেওয়া। দেশেকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আর্থিকভাবে নিরাপদ একটি দেশ গঠনের চেষ্টা করা। কারণ অর্থ মুক্তির সাথে দুরনীতি ও অপশাসনের একটা বিরাট সম্পর্ক আছে। যারা দুর্নীতি,সন্ত্রাসের সাথে লিপ্ত তাদের অপকর্মের সাথেও অর্থের বিরাট যোগ আছে। যোগ আছে দেশ থেকে মেধা পাচারের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ এ দেখান হয়েছে যে, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ অর্থাৎ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ মানুষের কাজ আছে। এর অর্থ মাত্র ২৬ লাখ মানুষ বেকার। কিন্তু বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইইইউ) ২০১৪ সালের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে, ৬৫ শতাংশ। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে এসে দেশে স্নাতকের সংখ্যা আর তার সাথে বেকারের সংখ্যা বা হতাশ তরুণদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে তা বিভিন্ন অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও মন্তব্য করেছেন। তাদের কথা হলো, বেকারত্ব, হতাশা আর অপরাধের মধ্যে একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে।  

সরকারীভবে রাতারাতি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুব কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে বেসরকারী খাতই ভরসা। সাথে আছে জনশক্তি রপ্তানি। মানুষকে কাজ দিতে না পারলে তাদের মধ্যে হতাশা থেকে আপরাধ বাড়বে। তাই দেশের বর্তমান কাঠামোতে থেকে সরকারী আর বেসরকারি খাতে কীভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সবাই লাভবান হয়া যায় তার চিন্তা সবাই করছেন। আমরা অনেকেই সেই চিন্তা থেকে মুক্ত নই। নতুন সব কিছুই একটু বিতর্কের জন্ম দেয়।

আমরা জানি অর্থ সব অনর্থের মূল। তবুও জীবন বাঁচাতে, জীবন সাঁজাতে অর্থ লাগে। রাষ্ট্রের কাজ হলো তার নাগরিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার তা জনকল্যাণে বিভিন্ন ফর্মে জনগনের মাঝে ছড়িয়ে বা বিলিয়ে দেওয়া। অভ্যান্তরীন সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে সরকার তার প্রয়োজনীয় সম্পদ বা রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে। এর মধ্যে আছে প্রতক্ষ কর আর পরোক্ষ কর। ভ্যাট এমন একটি কর। যা নিয়ে ইদানিং খুব কথা হচ্ছে। ভ্যাট আদায় নিয়ে চলছে চরম হতাশা। জনগন ভ্যাট দিচ্ছেন, কিন্তু সরকার তা পাচ্ছেন না। আমরা সমস্যার মাঝে সম্ভাবনা খুঁজতে পারি কি? প্রশ্ন আসতে পারে কীভাবে?

পাইলট প্রকল্প হিসেবে আমরা প্রথমে বড় বড় শহরের সুপার সপ যেমন ঢাকার গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডির মত এলাকায় ভ্যাট আদায় ও সরকারী কোষাগারে তার জমা নিশ্চিত করতে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকারকে। যার ভিত্তিতে একটি প্রকল্প করতে হবে পুরো বেসরকারি আর বেকারদের নিয়ে। সরকারী অনুমদন পেলে গুলশান এলাকার বলে বড় বড় সুপার সপ রেস্তোরাঁ, বড় বড় জুয়েলারী ও অন্যান্য দোকান, ইত্যাদিতে কম করে হলেও ৪ জন বেকার যুবক/ যুবতিকে নিয়োগ দিতে পারি প্রকল্প থেকে, সাথে স্থাপনাতে থাকবে সিসিটিভি। এদের ডিউটি আওয়ার, কাজের ধরণ পরে জানানো যাবে, সিক্রেট। তারা শুধু ভ্যাটের চালান কাটবেন। সিসিটিভি থাকবে অন। সাথে একজন আইটি’র লোকও থাকবেন রেকর্ড রাখতে, যাতে ভুল বুঝা বুঝি এড়ানো যায়। এর মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকবেন সুপারভজার। সাথে থাকবেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লোক তদারকীতে। এটার পক্ষে সিদ্ধান্ত হলে বিস্তারিত পরে জানানো যাবে, সেটার খসড়া করা আছে, আলোচনায় ফাইনাল হবে।   

জাতীয় বাজেটে ভ্যাট আদায়ে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেই হারে ভ্যাট আদায় হবে। মনে করি গুলশানে গত মাসিক/ বছর ১০% হারে ভ্যাট আদায় হয়েছে ১০০ টাকা। এবার ৩০% বাড়তি আছে লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ১৩০ টাকা। এই টিমের কাজ হলো দেখা এই এলাকায় আসলে ত্রৈমাসিক/ বাৎসরিক কত ভ্যাট আদায় হয়। যদি দেখি ৩০০ টাকা হয় তবে তা থেকে ১৩০ টাকা বাদ দিলে থাকে ১৭০ টাকা। এই ১৭০ টাকা থেকে সামান্য কিছু খরচ বাদ যাবে। তার পরে রয়ে যাওয়া টাকা ৪ ভাগ করা হবে। ১ ভাগ পাবেন কর্মীরা ভাতা হিসেবে, ১ ভাগ তাঁদের (সরকারী, বেসরকারি সবার) ভবিষ্যৎ কল্যাণ তহবীল। ১ ভাগ এই প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য যন্ত্রপাতি, উপকরণ, ইত্যদি কেনা হবে, বাকী ১ ভাগ সরকারের কোষাগারে যাবে। মাত্র ৩ মাসের মাঝেই এর ভালো মন্দ বুঝা যাবে, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া হবে, ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন সেট ফর্মুলা এখানে কাজ হবে না। কারণ দুষ্টু লোকেরা অনেক বেশী জ্ঞানী। এটা হবে সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি বেসরকারি উদ্যোগ, যতে প্রয়োজনে সহজেই আইনের/ বিধির পরিবর্তন করা যায়।

এবার আসি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কথায়। সভাপতি হবেন অর্থমন্ত্রী। কমটিতে আইটি মিনিস্টার, ব্যবসায়ী সমতির প্রতিনিধি, এনবিয়ার এর চেয়ারম্যান, প্রধান মন্ত্রীর অফিসের প্রিতিনিধি। প্রকল্প পরিচালক হবেন, মেম্বার সেক্রেটারী। তিনি সব নিয়োগ, আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। এই প্রকল্পটি কম করেও হবে ৩ বছরের। এই প্রকল্প থেকে শিক্ষা নিয়েই পরবর্তী কাজ করা, বিধির সংশোধন, সংশোধন করা হবে। যাদের স্বার্থহানী হবে তারা এটা ব্যর্থ করার জন্য নানা ভুল তথ্য, অভিযোগ দেবেন,বিভ্রান্ত করবেন। বিশ্বাস আর আস্থা নিয়ে কাজ করলে তিন বছরেই বাংলাদেশের সব বড় সিটি এর আওতায় আনা সম্ভব হবে। অভ্যান্তরীন সম্পদ বিভাগের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার তার প্রয়োজনীয় সম্পদ বা রাজস্বের বিরাট অংশ সংগ্রহ করে চমক দিতে পারবে। দুর্নীতি আর দুর্নীতিবাজের সংখ্যাও কমবে, মানুষ সচেতন হবেন। গরীব আর মধ্যবিত্তের দেয় ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা হবে, অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। কমবে হতাশা আর দুর্নীতি, যা পরবর্তীতে অন্য সেক্টরেও কাজে লাগানো যাবে। যতদিন সব সেল রেজিস্টার সরকারের মূল সার্ভারে যোগ না হবে ততদিন এট চলবে। সাথে চলবে জনগণকে সচেতন করা যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারেন যে তাঁদের দেয়া ভ্যাট সরকার পাচ্ছেন। ইচ্ছা করলে তারা এটা দেখতে পারবেন তার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।

মাননীয়, অর্থমন্ত্রী, সরকার প্রধান, ব্যবসায়ী সংগঠন আর এনবিআর সচিব পজেটিভ হলে এটা করা সম্ভব। বংলাদেশে সৎ ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা, ভালো লোকের অভাব নেই।


বাংলা ইনসাইডার

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭