ইনসাইড থট

ডাকসু: এক উচ্চমার্গের অপরাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/03/2019


Thumbnail

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন চাপা উত্তেজনায় ভরপুর। আমরা অনেকেই হতবাক হয়ে শুধু দেখছি, ঘটনার পরম্পরা দেখে চলেছি। এর বাইরে দেখি কী হয় এমন একটা আকুল প্রত্যাশা নিয়ে অনেকেই অপেক্ষা করছেন। এই অপেক্ষমানদের তালিকায় শুধু বিএনপি জামাতই নয় আসছে সরকারের সহযোগী এবং কারও কারও মতে সরকারী দলের মধ্যে থাকা অনেকে। বিপদে ফেলে শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে অপতৎপরতার এন্তার অভিযোগ। তবে এটা সত্যি যে ডাকসু নির্বাচনে অপরাজনীতির খেলাটা খুব মজার আর উচ্চমার্গের ছিল তা অনুমান করা যায়। তবে নিশ্চিত হতে হলে কিছু জিজ্ঞাসার পরিষ্কার জবাব পেলে বলা যাবে যে, কোন ঘটনার ফলে কী হয়েছে। 

আসুন ঘটনাগুলো পিছন থেকে একটু সাজাই, একটার পরে একটা, দেখি তাতে কী পাওয়া যায়। দেখে নিই কীভাবে নূর নেতা হলেন তার পোস্টমর্টেম।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মাকসুদ রানা মিঠু নিশ্চিত করেছেন যে, নুরু তার ইউনিটের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপ-সম্পাদক ছিলেন। পটুয়াখালীর গলাচিপার কৃষক মো. ইদ্রিস হাওলাদারে ছেলে নুরুল হক নুর। ছাত্র শিবিরের রাজনীতি থেকে ছাত্রলীগে এসে নেতা হয়ে গেলো কীভাবে তার শেকড় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও কিছু ক্লু পাওয়া গেছে তার সম্পর্কে। 

মাকসুদ রানা মিঠু তার ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসের একটা মারাত্মক কথা বলছেন। তিনি বলেছেন, ‘কোটা আন্দোলনের নেতা কারা তোকে বানিয়েছিল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোন দুই প্রভাবশালী নেতা তোকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিল। কোন নেতারা সেদিন সামনে ছাত্রলীগের সম্মেলন যাতে না হয় তার জন্য কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল। নুরু তোকে আজ বলতে হবে ৭ এপ্রিল ২০১৮ কোন দুই বড় নেতা তোকে ১২ হাজার টাকা দিয়া আন্দোলনে খরচ করতে বলেছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব যাতে হাসান আল মামুন আর তোর হাতে থাকে কে বলেছে সেটা তুই লাইভে এসে বলবি। তোকে নিয়ে ছাত্রলীগের কোন নেতারা বিভিন্ন সময় বৈঠকে বসেছে সেটা সবাইকে জানিয়ে দে। কোটা আন্দোলন নির্মূল করার জন্য ছাত্রলীগের যে বৈঠক হয় সেখানে শুধুমাত্র তৎকালীন ৩ জন নেতা কেন উপস্থিত ছিল সেটাও ছাত্র সমাজ জানতে চায়। কোটা আন্দোলন, ছাত্রলীগের সম্মেলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের ৬০০ কোটি টাকার কাজ, এগুলোর সর্ম্পকটা কি এটাও সবাইকে জানতে হবে। নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নুরুকে যারা ব্যবহার করেছে তারা হলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিবির’।

বাংলা ইনসাইডারে একটা নিউজ ছাপা হয়েছে যার হেডিং হচ্ছে, ‘মোর ক্যাথালিক দ্যান দ্য পোপ’।  সেখানে অনেক তথ্য আছে। খুব সুচারুভাবেই একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছিলো ঢাবি প্রশাসনের মধ্য থেকেই। কারণ ঢাবির সরকারপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপ বা উপদল খুব সক্রিয়। একদলের নেতা সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক আরেক দলের নেতা বর্তমান ভিসি। ষড়যন্ত্রকারীরা গুজব উৎপাদনের জন্য সঠিক জায়গাটি বেছে নিয়েছিলেন, আর তা হচ্ছে মেয়েদের হল। মেয়েরা তুলনামূলক আবেগপ্রবণ, তাই। মেয়েদের হলে যে ব্যালট পেপার পাওয়া গিয়েছিল তা ভুয়া ছিল বলে প্রশাসন দাবি করেছে। আর যারা ভুয়া বলে প্রচার করেছিলো, তাঁদের সহযোগী মিডিয়াও এখন এই দাবি খণ্ডনে ইস্তফা দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। একটা গুজব ছড়িয়ে তা গিয়ে আছড়ে পড়ে আরেকটি মেয়েদের হলে। যা মোকাবিলায় মোটেই প্রস্তুত ছিল না। এই সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা মৈত্রী হলের প্রক্টরকে তড়িঘড়ি বিদায় করে ষড়যন্ত্রের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। এটা ছিল সরকারের কাছে নিজেকে অপরিহার্য প্রমাণের অশুভ চেষ্টা। যা হিতে বিপরীত হয়েছে। সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে কিছু অনিয়ম ছিল, তা না হলে প্রক্টরকে বাদ দেওয়া হল কেন? এর পরেই ঢোলের বাড়ি দেওয়া হয় ভিপি প্রার্থী নুরুকে মারধর করে আহত করার খবর। অনেকটাই আধমরা (!) অবস্থায় নূরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ফলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যারা ছাত্রলীগের প্রতি মৌন সমর্থনে ছিল তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, চলে যায় অন্য সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে। এতাই ছিল পলিটিক্স, জবরদস্ত পলিটিক্স। জিতে যাওয়ার পরেই জানা গেলো যে ব্যালটের জন্য ইজ্জত গেলো সেই ব্যালট ছিল ভুয়া। ভিপি প্রার্থী নুরুর আহত হওয়ার খবরও ছিল রাজনৈতিক নাটক। তাই বিজয়ের খবর শুনে সুস্থ সবল সদ্য নির্বাচিত ভিপি নূরু ঢাবিতে উল্লাসে যোগ দিলেন। প্রতিপক্ষের সাথে কোলাকুলি করার সময় তাকে বিন্দুমাত্র অসুস্থ মনে হয়নি, মিডিয়ায় প্রচারিত বা প্রকাশিত ছবিতে যা দেখা গেছে তাতে। একেই বলে পলিটিক্স, বা অপরাজনীতি। দৌড়ানী খাওয়ার পরে নির্বাচিত ভিপি নুরু বললেন, সবার সাথে মিলে মিশে কাজ করবেন। যখন ঢাবি এলাকা ঠাণ্ডা তখন তার পক্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে করাচ্ছেন অনশন, কার কথায়, কার টাকায়, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। 

অনেকেই বলেছেন ছাত্রী হলকে কেন ষড়যন্ত্রের পীঠস্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হল! ছাত্রীদের হলের ভোট নিয়ে বলার কিছু নাই। ১৯৮৯ সালে ডাকসুতে হেরে যাওয়ার পর মেয়েদের বিজয় মিছিলে ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৯০ সালের সবগুলো মেয়েদের হলে ছাত্রদলের প্যানেল জয়ী হয়েছিল। ‘ঢাবির মেয়েরা বাঘিনী নয়, ঢাবির মেয়েরা আবেগপ্রবণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিকভাবে অসচেতন’।   

কে কেউ বলছেন ঢাবিতে পুনঃ নির্বাচনের কথা। ঢাবিতে পুনঃ নির্বাচন হলে নূরু সাহেবদের ভাগ্যে কী আছে তা সময় বলবে। কারণ এটা মধ্য যুগ নয়। ফটোগ্রাফার শহিদুলের মত বা গণজাগরণ মঞ্চের নেতার মত সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা মৃত্যুর খবর দিয়ে সাময়িক লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদী লাভ হয় না, তা প্রমাণিত। ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো তাদের আওলাদ আর তাদের হালের আত্মীয়রা ছিল, আছে, হয়তো আরও কিছুদিন থাকবে দেশে; তারা উন্নয়নের বিরুদ্ধে, নিয়মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেই থাকবে একের পর এক। তাই সাধু সাবধান। সামনে রাজশাহীতে রাকসু নির্বাচন। ওখানেও একই খেলা চলবে। শিক্ষকদের চামচামী বন্ধ, আর ছাত্রদের ছাত্র বান্ধব হওয়ার বিকল্প নেই। আমার এক বন্ধুর কথা দিয়ে শেষ করি, সে গত রাতে বলছে, ‘খেলা এখানেই শেষ না রে পাগল, এখনো অনেকটা পথ বাকী’। 

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭