কালার ইনসাইড

কেজিএফ ও বলিউডের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলা ‘কন্নড়’ সিনেমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/03/2019


Thumbnail

আমরা ভারতীয় সিনেমা বলতেই একটা সময় বুঝতাম বলিউড ও কলকাতা ইন্ডাস্ট্রি। সময়ের সঙ্গে নিজেদের জাত চিনিয়েছে দক্ষিণ ভারতের সিনেমা। সেই দক্ষিণ ভারতের সিনেমা বলতেও দর্শকের কাছে অধিক পরিচিত ছিল তামিল, তেলেগু ও মালায়ালাম। সেই সব ইন্ডাস্ট্রির তারকারা বাংলাদেশি দর্শকের কাছেও ছিল পরিচিত। তবে গেল কয়েক বছরের ভারতের কন্নড় ইন্ডাস্ট্রির উত্থান হয়েছে। স্থানীয়রা এই ইন্ডাস্ট্রিকে ‘স্যান্ডাল উড’ বলে।

গেল বছরের শেষের দিকে মুক্তি পায় কন্নড় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বিগ বাজেটের ছবি ‘কেজিএফ-১’। গত বছর ২১ ডিসেম্বর আড়াই হাজার স্ক্রিনে মুক্তি পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ‘কেজিএফ-১’ ছবিটি। বক্স অফিস থেকে সিনেমাটি আয় করে নিয়েছে ২৫০ কোটি রুপিরও বেশি। যেখানে এটির নির্মাণে খরচ হয়েছে মাত্র ৮০ কোটি রুপি! সেই সাথে দর্শক ও সমালোচকদেরও প্রশংসা পায় ছবিটি। ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে পুরো ভারত মাতিয়ে দিয়েছেন যশ। ঠিক সেই সময় মুক্তি পেয়েছিল বলিউডের শাহরুখ খানের ‘জিরো’ সিনেমাটি। যা রীতিমতো ধরাশয়ী হয় এই সিনেমার কাছে। মুক্তির পর থেকেই ভারতসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় ‘কেজিএফ-চ্যাপ্টার ওয়ান’। আর এ কারণেই ‘চ্যাপ্টার ২’ তৈরীতে আর দেরি করলেন না প্রযোজক ও পরিচালক। ‘কেজিএফ-চ্যাপটার টু’- সিনেমারও শুটিং শুরু হয়েছে।

প্রশান্ত নীল পরিচালিত ‘কেজিএফ-চ্যাপ্টার টু’ তে যশের বিপরীতে অভিনয় করেছেন শ্রীনিধি শেঠি। সেই সাথে ছবিটিতে আরো অভিনয় করতে দেখা যাবে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত ও রাবীনা ট্যান্ডনকেও। বোঝাই যাচ্ছে চ্যাপ্টার টু কতটা ধামাকা নিয়ে আসছে।

শুধু কেজিএফ নয়। মূল ধারা বাইরেরও বেশ কিছু কন্নড়  সিনেমা  গত বছর দুটো কন্নড় ছবি বেশ ঝড় তুলেছে। এর একটি পবন কুমারের তৃতীয় চলচ্চিত্র `ইউ-টার্ন`। এটি একটি থ্রিলার সিনেমা যেখানে মূল চরিত্রে আছেন এক নারী। আরেকটি মুভি `তিথি`। এটি একটি ব্ল্যাক কমেডি যা নির্মাণ করেছেন ২৫ বছর বয়সী রাম রেড্ডি। আরেকটি সিনেমা `রঙ্গি তরঙ্গ`। অনুপ ভান্ডারিয়ার সিনেমাটি এক ঔপন্যাসিক ও স্ত্রীকে নিয়ে কাহিনী। ছবিটি টানা ১ বছর হলে চলার গৌরব অর্জন করেছে। এদের সঙ্গে হেমান্ত রায়ের `গোধি বান্না সাধারণা মাইকাত্তু`।

কন্নড় ছবি এখনি সবার মন জয় করছে না। কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রি অচিরেই যে বলিউডের ঘাড়ে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে নিশ্বাস ফেলবে সেটা বোঝাই যায়। কর্ণাটকের এই ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য তারা বেশ সংঘবদ্ধভাবে এগুচ্ছে। তাদের সিনেমা একটা সময় অঞ্চল ভিত্তিক সিনেমাহলে চললেও এখন সারা ভারত, এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারেও ছাড়ছে। নতুন পরিচালক ও নতুন ভাবনা আসছে কন্নাড় ছবিতে।

কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ইতিমধ্যে বহু পরিচালক, স্ক্রিপ্ট রাইটার এবং সিনেমাটোগ্রাফারের আগমন ঘটছে অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ‘মুনগারু মেইল` ছবির ব্যাপক সফলতার পর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ফুলে-ফেঁপে উঠে গত কয়েক বছরে। এ ছবিটি হলে ৮৬৫ দিন ধরে চলে। এ ছবির আগে বছরে ৪০-৬০টি কন্নড় ছবি মুক্তি পেত। এখন বছরে গড় দাঁড়িয়েছে ১২০।

কর্নাটকে ক্রমশ বেড়ে ওঠা কন্নাদা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি খুব শিগগিরই ভিন্ন ঘরানার অভিনেতা ও গল্পের জন্ম দেবে। ভারতের যেকোনো রাজ্য থেকেই কন্নাদা ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগ্রহ করতে আগ্রহী সংশ্লিষ্টরা। কারণ প্রতিভা সবখানে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের তুলে আনতে দোষ কোথায়? তবে এ সংস্কৃতির খুব বেশি প্রচলন ঘটেনি। হয়তো দ্রুত পরিস্থিতি বদলে যাবে। এমন এক সময় আসবে যখন বিখ্যাত সব অভিনেতারা গর্বের সঙ্গে বলবেন, আমি কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। বলিউড ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় তারকারাই অভিনয় শুরু করেছে এ ইন্ডাস্ট্রিতে।

এই ইন্ডাস্ট্রির আলোচিত কিছু সিনেমা: বেদারা কনপ্পা (১৯৫৪) স্কুল মাস্টার, শরপঞ্জার, ভারভ্রূক্ষ (১৯৭১) ভুটায়ণ মগ আয়ু (১৯৭৪) ঘাটশ্রদ্ধা (১৯৭৭), কাদু কুদুর (১৯৭৯), বারা (১৯৭৯) রংনায়াকি (১৯৮১), অ্যকসিডেন্ট (১৯৮৫), পুশপাকা ভিমানা (১৯৮৭) তবরানা কথে (১৯৮৭) ক্রুয়ায়া (১৯৯৬) থাইাই সাহেব (১৯৯৭), এ (১৯৯৮), মান (২০০০), দেয়েপা (২০০২), কারিয়া (২০০৩), মুঙ্গারু মেল (২০০৬), ঠান্ডাপাল্লু (২০১২), দণ্ডুপলিয়া (২০১২), লুসিয়া (২০১৩), মি ও মিসেস রামাচারী (২০১৪) রাঙ্গীটারং (২০১৫) তিথী (২০১৬) কিরিক পার্টি (২০১২), শিবলিঙ্গ (২০১৬) কিলিং ভিরাপ্পন (২০১৬), রাজকুমার (২০১৭), ট্যাগরু (২০১৮)।

কন্নড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির তারকা: দর্শন থাগুদেবের-গজা (২০০৮), অভে (২০০৯), সারথী (২০১১), বুলবুল (২০১৩), বিরাট (২০১৬), চক্রবর্তী (২০১৭), কুরুক্ষেত্র (২০১৯) সিনেমাগুলো দর্শকনন্দিত হয়েছে।

শিভা রাজকুমারও কন্নড়ের অন্যতম বড় তারকা। ‘মুফতি’ তার সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা। এছাড়াও ‘কিলিং ভীরাপন’, ‘থাগাড়ু’,‘ দ্যা ভিলেন’, ‘শিভালিঙ্গা’ তার অন্যতম আলোচিত সিনেমা।

সুদীপ- বলিউডে অভিনয় করার খাতিরে তার পরিচিতি রয়েছে। ‘পুনক’,‘রান’, ‘রক্ত চরিত্র’ সিনেমাগুলোতে তিনি অভিনয় করেছেন। কন্নড় সিনেমায় তো নিয়মিত অভিনয় করছেনই।

এছাড়াও উপেন্দ্র, যশ, পুনিত রাজকুমার, গনেশ, আর রবিচন্দ্রনরা বর্তমান সময়ে কন্নড় ইন্ডাস্ট্রির রাজত্ব করছেন।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭