ইনসাইড পলিটিক্স

সংসদে যেতে বিএনপির ৫ শর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/03/2019


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়ার জামিন অথবা প্যারোল এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ ৫ দফা দাবি পূরণ করলে বিএনপির নির্বাচিত ছয়জন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করবেন এবং সংসদীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। সরকারের সঙ্গে পর্দার আড়ালে গোপন সমঝোতা বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসবকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তবে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা নিশ্চিত করেছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। খালেদা জিয়ার মুক্তিই তাদের মূল লক্ষ্য।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, ‘এটা পানির মতো পরিস্কার যে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের মতো শক্তি বিএনপির এখন নেই। আইনী প্রক্রিয়ায়ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এখন সুদূর পরাহত। তাই আমরা সরকারের সঙ্গে একটি ন্যূনতম সমঝোতায় যেতে চাইছি। তবে এ সমঝোতা যেন সম্মানীয় হয়, সে ব্যাপারটাই দেখা হচ্ছে।’ ঐ বিএনপি নেতা এটাও নিশ্চিত করেছেন যে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে তাদের দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। এ বৈঠকে ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।

সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যিনি এই সপ্তাহে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে অন্তত দুটি বৈঠক করেছেন তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে শর্তহীনভাবে আলোচনা করছি। আলোচনার জন্য তারাই উদ্যোগ নিয়েছে, তারাই সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা বলেছি, তাদের আগে সংসদে যেতে হবে। তাদের কোন ন্যায্য দাবি-দাওয়া থাকলে সেটা সংসদে তুলতে হবে। তবেই তাদের দাবি-দাওয়া বিবেচনা করা হবে।’

সরকার এবং বিএনপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে যে ৫টি দাবি করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:

১. বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বা প্যারোলের ব্যবস্থা করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসার সুযোগ করে দেয়া;

২. যেসব বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া। এখানে উল্লেখ্য যে, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল। সে তালিকা অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিতে হবে;

৩. নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় আটক বিএনপির নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মু্ক্তির ব্যবস্থা করা;

৪. বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদানে বাধা প্রদান না করা, বিএনপি যেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিয়মিত কার্যক্রম নিশ্চিত করা;

৫. বিএনপির যে সকল নেতা মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে আছেন তারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন তার ব্যবস্থা করা।

তবে সরকারের একাধিক সূত্র বলেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি বা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হয়েছে সংসদে যাওয়া না যাওয়ার বিষয় নিয়ে। সেখানে বিএনপি কিছু দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছে বটে, তবে সেগুলো সরকার বিবেচনা করবে কি করবে না সে ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি খালেদা জিয়ার হাতে নেই। এটা আদালতের বিষয়। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হবে। হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপি যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার কথা বলেছে সেরকম হয়রানিমূলক কোন মামলা বিএনপির নেতাকর্মীর নেই। ঐ নেতা জানিয়েছেন, সংলাপের সময় বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি বিবেচনা করে দেখেছে, মামলাগুলোর কোনটাই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বা প্রতিহিংসামূলক নয়। এগুলো করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে। তাই এই মামলাগুলো যথাযথ তদন্ত ছাড়াই প্রত্যাহার করার কোন সুযোগ নেই।

তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন এমন একজন বিএনপি নেতা বলছেন, সরকার আগের চেয়ে অনেক নমনীয়। সরকার চাইছে যে বিএনপি যেন সংসদে আসে এবং এজন্য সর্বোচ্চ ছাড় দিতে সরকার প্রস্তুত। বিএনপির ওই নেতা বলেছেন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া অন্যান্য দাবিদাওয়াগুলোর ব্যাপারে সরকার আমাদের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে এখনও তারা অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে এরকম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, তারেক জিয়াকে যদি আইনে সোপর্দ করা হয় এবং তারেক জিয়া যদি দেশে এসে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করবে।

তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, কয়েকটি বিদেশী দূতাবাস সরকার এবং বিএনপির মধ্যে একটি সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে চেষ্টা করছে। তারা ধারণা করছে, খুব শিগগিরই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে একটি সমঝোতা হওয়া সম্ভব। সেই সম্ভাবনা হলে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য সাময়িক জামিন পেতে পারেন এবং বিএনপিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে সংসদে আসতে পারে। এক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনেরও একটি বড় ভূমিকা আছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। ড. কামাল হোসেনও বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং তিনি বিদেশী দূতাবাসগুলোর সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি সূরাহা করার চেষ্টা করছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭