লিভিং ইনসাইড

আমাদের জাতীয় পোশাক কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/03/2019


Thumbnail

আপনি বিশিষ্ট সামাজিক খ্যাতিসম্পন্ন ভদ্রলোক, কোনো বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আপনাকে অংশ নিতে হবে, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। আপনি অবশ্যই গর্বিত। সেখানে দেশে বিদেশের কত গণ্যমান্য লোকই তো আসবে। কিন্তু সমস্যা হলো একখানে, আপনাকে যেতে হবে আপনার দেশের জাতীয় পোশাকে। আপনার মাথায় তখন ঘুরপাক খাচ্ছে যে আমাদের জাতীয় পোশাক আবার কোনটা? লুঙ্গি পাঞ্জাবি নাকি অন্যকিছু?

জাতীয় পাখি, জাতীয় মাছ, জাতীয় ফুল, জাতীয় খেলা কি বা জাতীয় কবি কে সেটা জিজ্ঞেস করলেই আমরা হড়বড় করে বলে দিতে পারি। কিন্তু জাতীয় পোশাক কি, এটা জিজ্ঞেস করলে থতমত খেয়ে যেতে হয়। কারণ আমরা জানিই না যে আদৌ আমাদের কোনো জাতীয় পোশাক আছে কি না! অথচ অন্যান্য সবদেশেই নিজস্ব জাতীয় পোশাক রয়েছে। আমরা পোশাক আর ঐতিহ্যকে এত ভালোবাসার পরেও জাতীয় কোনো পোশাক আমাদের নেই!

দেশপ্রেম, দেশীয় বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ দিবসগুলো আমাদের কাছে খুবই জরুরি। আমরা পোশাক হোক বা চলনে বলনে দেশপ্রেম ফুটিয়ে তোলার যথেষ্ট চেষ্টা করি। সেখানে দেশের জন্য নির্দিষ্ট জাতীয় সবকিছু থাকলেও একটা জাতীয় পোশাক নেই- সেটা কেমন অদ্ভুত তো বটেই।

আমাদের সংস্কৃতি যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়। তেমনি বৈচিত্র্যময় আমাদের দৈনন্দিন পোশাকও। পোশাক দেখেই আমরা বুঝে নিতে চেষ্টা করি ব্যক্তিটি কেমন, তার স্ট্যাটাস কেমন। এই যেমন- মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির পুরুষদের বেলায় জিন্স, গ্যাবার্ডিন বা ফরমাল প্যান্টের সঙ্গে পাঞ্জাবি, কিংবা স্যুটের মতো পোশাক পরতে দেখা যায়। আর নারীদের বেলায় কামিজ, শাড়ি, টপস কিংবা কুর্তির মতো পোশাক। মেয়েরা অবশ্য প্যান্ট শার্ট পরেন, তাদের আমরা অতি আধুনিকা বলে থাকি। আর পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতিদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের।

আবার যখন একটু নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের দিকে তাকাই, দেখা যায় তারা লুঙ্গি-শাড়িকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন হয়ত। এত এত বাহারি পোশাকের বৈচিত্র্যের মাঝে হঠাৎ প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের জাতীয় পোশাক কী? কাউকে প্রশ্ন করলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যাবে না, অনেকেই ইতস্তবোধও করেন। কোনো ইতিহাস বা পুস্তকেও কোনো বিস্তারিত তথ্য নেই।

তরুণরা পরতে ভালোবাসে জিন্স, গ্যাবার্ডিনের সঙ্গে টি-শার্টের মতো পোশাক। তরুণীদের পছন্দের তালিকায় থাকে কুর্তি বা টপসের মতো পোশাক। আবার যখন অফিস-আদালতের দিকে তাকাই, তখন ফরমাল পোশাকের তালিকায় বেশিভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষরা ফরমাল প্যান্টের সঙ্গে পরছেন ফরমাল শার্ট। নারীরা বেছে নিয়েছেন সালোয়ার কামিজ, কেউবা আবার শাড়ি।

আবার যখন কোনো অনুষ্ঠান বা বিশেষ দিন উদযাপনেরর বিষয় আসে। তখন নারীরা শাড়িকে সবার আগে প্রাধান্য দেন। আর পুরুষরা পাঞ্জাবি, তার সঙ্গে জিনস বা পায়জামা কিংবা ফ্যাশনেবল ধুতি। অনেকেই আবার কোট, টাই বা স্যুট।

দেশে রাজনীতির সঙ্গেও আমাদের পোশাকের ধরন জড়িত আছে। যখন যে রাজনীতির হাওয়া চলে, পোশাকের হাওয়াও সেদিকে বইতে থাকে। সেটা এমনিতেই আমাদের চোখে পড়ে। যখন যে হাওয়া, তখন সেই হাওয়ার পোশাকই যেন জাতীয় পোশাক হয়ে যায়।

কেউ বলবে জানামতে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কোনো জাতীয় পোশাক এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। কেউ বলবে বাংলাদেশের জাতীয় পোশাক লুঙ্গি পাঞ্জাবি ও শাড়ি। এগুলো আবার খুব ফরমালভাবে কোথাও যেতে গেলে পরা সম্ভব না। তাহলে এটা শুধু ঐতিহ্যই বহন করে, জাতীয়তা না বোধহয়। কারণ লুঙ্গি পরে ফরমাল বা অতি আধুনিক কোথাও গেলে আপনাকে ভেতরে ঢুকতেই দেওয়া হবে না, কারণ সেখানে এটা গ্রহণযোগ্যই নয়। তাহলে সেটা কীভাবে জাতীয় পোশাক হলো!

আদিকাল থেকে এই পর্যন্ত পোশাকের বিভিন্ন ইতিহাস, পরম্পরা আর বিবর্তন রয়েছে। আগের তুলনায় পোশাকের ধরন পাল্টেছে সেটা তো আমরা স্বীকার করিই। বাঙালিরা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক পরতে ভালোবাসেন, এটা সত্যি। অবসরে বা বেড়াতে যাওয়ার বেলায় একরকম পোশাক, কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে জমকালো পোশাক, দিবস এলে নিতান্তই বাঙালি পোশাক, অফিসিয়াল উদ্দেশ্যে খুব ফরমাল পোশাক। এই পোশাকের মধ্যে একেবারে নিজেদের বলতে কোনো পোশাক কি তবে আমাদের নেই!

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭