ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে জাতির পিতা বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/03/2019


Thumbnail

সাংগঠনিকভাবে বিএনপি যখন দ্বিধাবিভক্ত, বিএনপিতে যখন বহিষ্কারের হিড়িক, সিনিয়র নেতাদের মধ্যে যখন হতাশা-অবিশ্বাস, দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী যখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে তখন বিএনপির মধ্যে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই বিতর্ককে বিএনপি বলছে আত্মোপলব্ধি বিতর্ক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক সেনাসদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান আজ ১৭ মার্চ দলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে টেলিফোনে বলেছেন, বিএনপিকে আত্মোপলব্ধি ও আত্মসমালোচনা করতে হবে এবং জাতির পিতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতাদের তিনি এক বার্তায় আরও বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুতে বিশ্বাস না করে তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতি করা বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তিনি মনে করেন যে, এটাই হলো বিএনপির ভুল রাজনীতি। তিনি স্মৃতিচারণ করেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান তার সকল লেখা এবং কাজে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। কাজেই বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমানের ভিতর কোন বিরোধ নেই। জিয়াউর রহমানকে বড় করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা করা কোন রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। তিনি এটাও জানান যে, বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা করা, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে স্ববিরোধিতা এবং জাতির পিতার জন্ম ও শোক দিবসে ভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেয়ার কারণে বিগত দিনে বিএনপি বিতর্কিত হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। কাজেই বিএনপিকে এখন আত্মোপলব্ধি এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে।

তিনি তার বার্তায় সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে এটাও জানান যে, বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমানসহ বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনে অবদান রাখা প্রত্যেক নেতাকে সমান শ্রদ্ধা ও সম্মান দিতে হবে। তিনি মনে করেন যে, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে যদি সম্মানিত করা হয় তাহলে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যে বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে সে বিতর্কের অবসান হবে এবং বাংলাদেশে হিংসা-বিদ্বেষ ও নিষ্পেষণের রাজনীতির অবসান হবে।

তার এই বার্তা পাওয়ার পর বিএনপির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা এই বার্তাকে ইতিবাচক মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন শুধু নয়, বিএনপির আদর্শের পুনর্বিন্যাসও জরুরি। এজন্য বিএনপির যে মূল্যবোধ, যে নৈতিক ভিত্তি এবং রাজনৈতিক দর্শনেও পরিবর্তন আনা দরকার। যে কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল তার দর্শন, চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনে। তারা বলছেন, ’৭৫-র ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগও তার চিন্তা-ভাবনা ও দর্শন পরিবর্তন করেছিল। কাজেই কোন দর্শনই চিরস্থায়ী নয়। এটা পরিবর্তনযোগ্য। লে. জে. মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যকে যারা সমর্থন করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ একাধিক নেতৃবৃন্দ।

তবে জেনারেল মাহবুবের এই বার্তা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর রায়সহ বিএনপির একাধিক নেতা এটাকে আওয়ামী প্রেতাত্মা এবং আওয়ামী দুরভিসন্ধী বলে অভিযোগ করেছেন। তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বিএনপিকে আওয়ামী লীগের গিনিপিগ বানানো ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের পথম ধাপ ছিলো ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান। আর এখন দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে দলের ভিতর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রতি ভালবাসা এবং মমত্ববোধ তৈরি করা হয়েছে। তারা আরও বলেন, ’৭২ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতি দিতে বিএনপির কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ’৭২-র পর বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি দিকে অনেক আপত্তি আছে।

জানা গেছে, লে. জে. মাহবুবুর রহমান তার এই প্রস্তাব দলের স্থায়ী কমিটিতে এমনকি জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে আলোচনার জন্য সুপারিশ করেছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য এ ব্যাপারে পক্ষে বিপক্ষে কোন মন্তব্য করেননি। তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মির্জা ফখরুল ইসলামের ইঙ্গিতে এবং তার প্রচ্ছন্ন সমর্থনেই এই বার্তাটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছড়ানো হয়েছে। এই বার্তার পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হবে তার এখনও নিশ্চিত নয়।   

 

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭