ইনসাইড আর্টিকেল

একাত্তরের এই দিনে: অগ্নিঝরা ১৮ মার্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/03/2019


Thumbnail

একাত্তরের ১৮ মার্চ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের ১৭তম দিন। ২ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে টানা ১৭দিনের মতো পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল বাঙালী। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার সুপ্ত স্বপ্নটা একটু একটু করে দৃঢ় প্রত্যয়ে রূপ নিচ্ছিল। অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের আজকের দিনেও সরকারি-বেসরকারি ভবনে কালোপতাকা ওড়ানো হয়। সরকারী-বেসরকারী অফিসে অনুপস্থিত থাকেন সবশ্রেণীর কর্মচারীরা।  

১৭ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া পরবর্তী বৈঠকের সময় নির্ধারণ না করেই তাদের বৈঠক ভেঙে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে জনমনে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছিল। আর আজকের দিনে অর্থাৎ ১৮ মার্চ ভোর থেকেই তাদের পরবর্তী করনীয় জানতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ভিড় জমাচ্ছিলেন। সারাদিন ধরে মিছিলের পর মিছিল করে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ জাতির পিতার প্রতি সমর্থন জানাতে ধানমন্ডি ৩২ এ আসছিলেন। বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উঠে এসে শোভাযাত্রাকারীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিচ্ছিলেন। ভাষণে তিনি বলছিলেন, ‘তোমরা চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোল। যদি তোমাদের ওপর আঘাত আসে তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হেনো।’ এক পর্যায়ে জনতাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু এদিন বলেছিলেন, ‘মুক্তি সংগ্রামের পতাকা আরো ওপরে তুলে ধরো। সাত কোটি শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির সার্বিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও।’

একাত্তরের আজকের দিনেও বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। এসময় এক বিদেশি সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলায় আরও সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কি না? এর উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি।’

এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ন্যাপপ্রধান ওয়ালী খান একঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বক্স বেজেঞ্জোও উপস্থিত ছিলেন।

একাত্তরের আজকের রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় যে, আগামীকাল সকাল এগারোটায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সম্পর্কে তৃতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে করাচীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি তা প্রত্যাখান করেছেন। ভুট্টো আরও বলেন, ঢাকা যাওয়ার ব্যাপারে তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে কয়েকটি ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার কোন জবাব না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিন বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী ‘ইরনা এলিজাবেথ’ নামের একটি জাহাজের গন্তব্য বদল করে চট্টগ্রাম থেকে করাচী নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে পাক সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁয়ে ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। সৈন্যরা এই দুই স্থানে নিরস্ত্র আরোহীদের নির্মমভাবে মারধোর করে এবং তাদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। রাতে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির উপনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, নিরস্ত্র মানুষের ওপর উস্কানিমূলক আচারণ, তা যে কোন মহলেরই হোক না কেন,আমরা আর সহ্য করবো না। এর ফলাফলের দায়িত্ব উস্কানিদাতাদেরই সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।’

একাত্তরের আজকের দিনে ঢাকায় বিমানবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বশক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যেকোন ত্যাগ স্বীকারের শপথ নেন।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭