কালার ইনসাইড

‘তেলা মাথায় তেল দেয়ার স্বভাব আমাদের কবে যাবে জানি না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/03/2019


Thumbnail

চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। আরিফিন শুভর বিপরীতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি। ‘মিশন এক্সট্রিম’ শিরোনামে ছবিটি পরিচালনা করছেন যৌথভাবে ফয়সাল আহমেদ ও সানী সানোয়ার। সামাজিক কাজেও ঐশীর রয়েছে ব্যাপক উপস্থিতি। সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন ঐশী।

সিনেমার অফারটি কিভাবে আসলো?

কলটা পেলাম বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের সময়। আদনান আল রাজিব ভাইয়ার পরিচালনায় গ্রামীন ফোনের বিজ্ঞাপনের শুটিং করছিলেন। যে বিজ্ঞাপনটি এখন টিভিতে ব্যাপক প্রচার হচ্ছে। আমার এক কাজিন আমাকে কল দেয়। সে বলে একটা মুভি হাউজ থেকে নাম্বার চাচ্ছে। আমি কি তোমার নাম্বার দিতে পারি? বললাম দেও। সিনেমার কাস্টিং ডিরেক্টর অরুপ দাদা আমাকে কল দিলো। তিনি জানালো যে আমাদের লাস্ট প্রডাকশন ছিল ‘ঢাকা অ্যাটাক’। আমাদের নেক্সট কাজের জন্য আপনার সঙ্গে বসতে চাচ্ছি। একদিন সময় করে পরিচালক সানী সানোয়ার ভাইয়া ও ফয়সাল ভাইয়ার সঙ্গে বসলাম। প্রথম দিন কথাবার্তা হওয়ার পর তারা বললেন ঠিক আছে আজকের মতো কথা এ পর্যন্তই থাক। পরে আমরা তোমাকে জানাবো। কিছুদিন পর আবার ডাকা হলো। তখন তারা জানালেন আসলে আমরা পজিটিভলি ভাবছি। আমার মতামত জানতে চাইলো। তখন বললাম ঠিক আছে ভাইয়া স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসি। পুরো ব্যাপারটা জানি। গল্প ও তাদের মেকিং প্ল্যান শুনে মনে হলো এটাকে আমার লুফে নেওয়া উচিত।

সিনেমার চরিত্রটি কেমন?  

সিনেমায় আত্মনির্ভরশীল একজন কর্মজীবী নারীর চরিত্রে অভিনয় করছি। ঘটনাক্রমে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাব। শুভ ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক দেখানো হবে। নাচ, গান , নায়িকা বলতে সবটাই থাকবে আমার চরিত্রে।

আরেফিন শুভ সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন। তার সঙ্গে এই কয়দিন কেমন সম্পর্ক হলো?

এই মুভির থ্রুতেই ভাইয়ার সঙ্গে প্রথম দেখা ও কথা বলা। দ্বিতীয় দিন যখন সিনেমার কলাকুশলির সঙ্গে দেখা করতে যাই। একদম আচমকাই তার সঙ্গে দেখা। হ্যান্ডসাম তো আছেনই। তার কথাবার্তাও তেমন। এরকম একটা অ্যাকশন সিনেমার জন্য তার মতোই কাউকে দরকার ছিল বলে আমি মনে করি। আর ওনার কাজ তো আমি অনেকদিন আগে থেকেই দেখি। তিনি অনেক আন্তরিকও। প্রথম দেখায় তিনি আমায় বলেছেন, আপনাকে আমি টিভিতে, ইউটিউবে ও ফেসবুকে দেখেছি। আমিও মজা করে তাঁকে বলেছি, আমিও আপনাকে টিভিতে, ইউটিউবে ও ফেসবুকে দেখেছি। এ ছাড়া ভাইয়াকে আমি বলেছিলাম, আমার অনেক ভয় হচ্ছে, অভিনয় পারব তো? উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই পারবা। আমারও প্রথম প্রথম এমন হতো।
সিনেমায় অভিনয়ের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছেন?

অভিনয় পারি না মোটেও। একদম শুন্যের কোঠা থেকে শিখছি। গেল কয়েকদিন ধরে আমাদের সিনেমার পুরো টিমটা গ্রুমিং করছি তারিক আনাম খান স্যারের তত্বাবধানে। সেখানে সিনেমার সকল কলাকুশলীরা আছেন। খুঁটিনাটি অনেককিছুই শিখতে পারছি। তবে এই একটা সিনেমাতেই যে সবকিছু শিখে ফেলবো তা নয়। অনেক ভুলত্রুটি হয়তো নতুন হিসেবে করবো। আমি আস্তে আস্তে নিজেকে পোক্ত করতে চাই। সিনেমার প্রত্যেকেই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। শুধুমাত্র আমিই বিগেনার।

নতুন কোন সিনেমার অফার আসছে?

শুরু থেকে আট দশটা সিনেমার অফার এসেছে। অনেকের সঙ্গে বসাও হয়েছে। কিন্তু করা হয়নি কোন কারণে। মতামত মেলেনি। ব্যাটে বলে মিলেনি। দুইয়ে দুইয়ে চার হয়নি। বর্তমানে সিনেমার প্রতিই সকল মনোযোগ দিয়েছি। অন্যকোন বিষয়ে ফোকাস করতে চাচ্ছি না। সিনেমাটি নিয়ে আসলে খুবই ভয়ে আছি। এটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।

টিভি খুললেই দেখা মেলে ‘গ্রামীনফোন’ বিজ্ঞাপনের বদৌলতে, কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?

মিস ওয়ার্ল্ডের প্রতিযোগিতার পর ইচ্ছে ছিল শুরুটা যেন টিভিসি থেকে হয়। আমার ক্যামেরার সামনে প্রথম দাড়ানো মিউজিক ভিডিও দিয়ে হলেও প্রথম প্রচার হয়েছে টিভিসি। সেটা যে আদনান আল রাজিব ভাইয়ের মতো মেধাবি একজন নির্মাতার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি সেটা অনেক তৃপ্তির। আর আমার টিভিসিটাও ছিল একটু নাটকীয়। যে বিষয়টা আমাকে আরও বেশি টাচ করেছে। ওই সময় অনেকগুলো কাজেরই অফার ছিল। প্রথম কাজ হিসেবে এটাকেই পিক করলাম। এখন তো সবার কাছ ভালোই রেসপন্স পাচ্ছি। মিস ওয়ার্ল্ডের পর এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া সবচেয়ে ভালো কাজ বলা যায়।



কিছুদিন আগে অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া আপনার একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছেন। সিনিয়রদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন কাজের বেলায়?

ফারিয়া আপুরা তো আমার সিনিয়র। একটা প্রগ্রামে প্রথমদিন দেখা হয়েছে তার সঙ্গে। প্রথম দিনই সে নিজে এসে আমাকে কনগ্রাচুলেট করেছেন। আমার প্রশংসা করেছেন। অবাক হলাম আমার কাজগুলো তিনি ফলো করেন। তিনি আমাকে কাজগুলো করার ব্যাপারে উৎসাহ দিলেন। এরপরও ফারিয়া আপুর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। উনি সবসময়ই আমাকে উৎসাহিত করেন। খুবই স্নেহ করেন আমাকে। স্ক্রিনে দেখে কখনো বুঝিনি। উনি পার্সোনালি এতটা সুইট। এমনভাবে মিডিয়ায় যার সঙ্গেই আমার পরিচয় হয়, সেই আমাকে সাহস ও উৎসাহ দেয়। সে যে আমাকে উৎসাহটা দিলো। আমার তো দায়িত্ববোধ তখন আরও বাড়ে। মনে হয় এভাবে আরও কাজ করে যাই।

সামাজিক কাজেও ব্যাপক তৎপর দেখা যায়…

সম্প্রতি ভোলার চরফ্যাশনে গিয়েছিলাম। ফারিয়া আপু যে পোস্টটি শেয়ার করেছেন। আমি একটা পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছি, তেলা মাথায় তেল দেয়ার স্বভাব আমাদের কবে যাবে জানিনা! যারা পাচ্ছে সেটা তো ভালোই। কিন্তু গ্রামে জন্মানো তো কোন অপরাধ নয়। আর তুলনামূলকভাবে যারা শহরে থাকেন তারা গ্রামের মানুষজনের চেয়ে স্বচ্ছল। ভোলার চরফ্যাশন গ্রামের বিশেষ শিশুদের একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানকার শিক্ষকগণ বাচ্চাদেরকে পড়াচ্ছেন বিনাবেতনে। আর বাচ্চাগুলো ও তাদের বাবা-মায়ের কষ্টের কথা নাই বা বললাম। এটা সত্যিই আনন্দের যে শহরের এসব বিশেষ শিশুদের কোনো অভাব নেই। তবে পাশাপাশি এটাও কষ্টের যে আমাদের দেশের বেশীর ভাগ গ্রামাঞ্চলের বিশেষ শিশুরা সেসব সুবিধা পায়না। এমনকি ওখানকার বেশীর ভাগ শিশু প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আসেনি। আমরা কি পারিনা ওদের পাশে দাঁড়াতে? যাদের দরকার আমরা কেন তাদের দিকে সাহায্যের হাত টা আগে বাড়াইনা? সেখানকার যে চেয়ারম্যান উনি নিজে এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরী করেছেন। নিজের টাকা দিয়ে চালাচ্ছেন। উনি জমি বিক্রী করে করে এটা চালাচ্ছেন। ওনার কথা, অসৎ উপায়ে তো উপার্জন করতে পারি না। তাই নিজের জমি বিক্রি করেই এটা চালাচ্ছি। ওনার নাম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। স্কুলটার নাম আম্বিয়া খাতুন মেমোরিয়াল প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। আমি এইসব শিশুদের নিয়ে সারাজীবন কাজ করে যেতে চাই। আমার সামর্থ্য হলে নিজে একটা ফাউন্ডেশন করতে চাই, যেটা আমার স্বপ্ন।

পড়াশুনার খবর কী?

২০১৮ সালে এইচএসসি কমপ্লিট করেছি। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। খুব শিগগিরই কোন ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে আছে।

 

বাংলা ইনসাইডার

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭