লিভিং ইনসাইড

সাবলেট কি বিপজ্জনক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/03/2019


Thumbnail

‘সাবলেট দেওয়া হচ্ছে’, ব্যাচেলর বা ছোট পরিবারের জন্য এক বা দুই রুম, নিচে যোগাযোগের ঠিকানা আর ফোন নম্বর- এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে বাড়ির সদরে টাঙিয়ে দিলেন মাকসুদ সাহেব। কারণ এত বড় বাসাটি স্ত্রী-কন্যাসহ তাদের তিনজনের জন্য বেশিই হয়। খরচ কমলো, কিছুটা আয় হলো, আবার পাশে একটা লোকও থাকলো- সেই ভাবনা থেকেই সাবলেট।

এদিকে তন্ময় তার বাসাটা এ মাসেই ছেড়ে দেবে। বন্ধুর সঙ্গে হুট করে নতুন বাসা নেওয়ার মতো সুযোগ বা সামর্থ্য কোনোটাই তার নেই এখন। অগত্যা সাবলেটই সই। মাকসুদ সাহেবের বিজ্ঞাপনটি দেখে তার আগ্রহ হলো, কথাবার্তা বলে সাবলেট ঠিকও করে ফেললো। একমাস যেতে না যেতেই শুরু হলো বিপত্তি। তন্ময়ের বন্ধুটি যাকে ইচ্ছে তাকে নিয়ে বাসায় আসা, গভীর রাত পর্যন্ত হৈ-হুল্লোড় করায় ফ্ল্যাটের মালিক ক্ষেপে অস্থির। মাত্র ৭দিনের নোটিশে বাসা ছাড়ার নোটিশ।

এর চেয়ে ভয়াবহ ঘটনার কথাও আমরা জানি। তবে বর্তমানে আবাসন ব্যবস্থার সঙ্গে মানুষের বসবাস প্রক্রিয়াও আধুনিক হচ্ছে। কয়েক দশক আগেও সাবলেটের এত চল ছিল না। অথচ এখন এটা নগরবাসীর প্রয়োজনেই অপরিহার্য হয়ে গেছে। আমাদের সামাজিক অবস্থায় এর খারাপ ভালো দুটো দিকই তো রয়েছে। একসময় সাবলেট বিষয়টি হাস্যকর বা বিব্রতকর মনে হলেও নগরবাসীরা এখন এতে বেশ অভ্যস্ত। ব্যস্ত রাজধানীতে এখন সাবলেটের ছড়াছড়ি।

জীবনযাত্রার ব্যয় ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই অনেকে আর্থিক চাহিদা মেটাতে বর্তমান সময়ে সাবলেট বাসা ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে। সাবলেটের কারণে ভাড়াটিয়া ও উপভাড়াটিয়া উভয়েই আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

রাজধানীতে অনেকস্থানে বাসা ভাড়া নিতে বেতনের অর্ধেকাংশই ব্যয় হয়ে যায়। একার পক্ষে এত ভাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না বলে অন্য কাউকে সাবলেট দিতে হয়। জীবনমানের ব্যয় ও দ্রব্যমূল্যের চরম বৃদ্ধিতে সংসার খরচ মেটাতে এখন অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। আর তাই খরচের কিছুটা জোগান পেতে ভাড়া বাসায় অনেকেই দিচ্ছেন সাবলেট ভাড়া। তবে সাবলেট ভাড়াটিয়ারাই যেন এখন অনেকের জীবনে কাল হয়ে যাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে সংসার, হতে হচ্ছে খুন। সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, এ যেন নিজের ঘরে শত্রুকে নিয়ে বসবাস করার মতো।

সাবলেট ভাড়া আপাতদৃষ্টিতে সহায়ক হলেও এটি অনেক সময় জীবনহানি ঘটায়। সাবলেট ভাড়া থেকে হতে পারে পরকীয়াজনিত সমস্যা। পরবর্তী সময়ে হত্যাকাণ্ড। অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাজধানীতে অনেক সাবলেট বাসায় গড়ে উঠছে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক, এমনকি চলছে লিভ-টুগেদার। এতে একদিকে পারিবারিক সমস্যা নেমে আসছে, অন্যদিকে বাড়ছে অপরাধ।

অপরাধ তো যে কেউই করতে পারে। কিন্তু একই ঘরে একই ছাদের নিচে যদি অপরাধ বা মনোমালিন্য ঘটে, সেখানে বাস করবেন কীভাবে? অর্থ বা নিরাপত্তার জন্য পাশের ঘরটি ভাড়া দিচ্ছে,, একই রান্নাঘর একই ওয়াশরুম ব্যবহার করছেন- তাতে মুখ দেখাদেখি বা ঘনিষ্ঠতা বেশি হচ্ছে। জানাবোঝা বেশি হওয়ার কারণে ক্ষতি বা অপরাধ করাটা বেশি হচ্ছে। ব্যাপারটি ভাবনার।

সমস্যা অনেক রকমের হতে পারে। এই যেমন- কোনো সংঘবদ্ধ চক্র ছলেবলে আপনার বাসাটি ভাড়া নিয়ে তাদের অপরাধকর্ম চালিয়ে গেল। জানাজানি হলে আপনি নিজেও ফাঁসবেন পুরোপুরি। আবার আপনার সহায়-সম্পদের প্রতি ভাড়াটিয়ার যদি কোনো আকর্ষণ তৈরি হয়ে তো বিপদ। সে লুকিয়ে বা সরাসরি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতেই পারে।

আরেকটি বিষয় জরুরি। আপনার বাসা মানে আপনার নিরাপত্তা আর ব্যক্তিগত জীবনযাপন। কিন্তু অপরিচিত পরিবারের বাইরের লোক যখন আপনার এই ব্যক্তিগত জীবনে প্রবেশ করবে, আপনার বিব্রত লাগবেই। তখনই আপনি প্রাইভেসির ব্যাপারটি নজরে আনেন।

তাই সাবলেট দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন। একদম অপরিচিত কাউকে কখনো সাবলেট দেবেন না। দিলেও পুরোপুরি খোঁজখবর আগে নিয়ে নিন। তাদের পেশা, আত্মীয়স্বজনের ব্যাপারে খোঁজ নিন, বিশ্বাসভাজন কিনা দেখে নিন। তাদের কাছে কারা যাওয়া আসা করছে সেটা লক্ষ্য রাখুন। তাদের ভাবগতিক সন্দেহজনক কিনা সজাগ হোন। আপনার ব্যক্তিগত বিষয়ে তারা যদি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে সেটা নিয়েও ভাবুন। আপনাকে কোনো কৌশলে ফেলার চেষ্টা করলে সেটাকে কখনো প্রশ্রয় দেবেন না। আর সবচেয়ে বড় কথা, মেলামেশা করবেন সাবধানে, একটা সীমাবদ্ধতা রেখে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭