কালার ইনসাইড

সিনেমাহলের বিকল্পের অভাব নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/03/2019


Thumbnail

সিনেমাহল বন্ধ অনেককে স্বস্তি দিচ্ছে। মনে হলো, হাফ ছেড়ে বাঁচলেন তারা। এর যথার্থ কারণেরও অভাব নেই। ১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হচ্ছে দেশের সব সিনেমা হল। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ডেকে এমন ঘোষণাই দিয়েছিলেন হল মালিক সমিতির সংগঠন ‘প্রদর্শক সমিতি’র নেতারা। কিন্তু প্রশ্ন হলো সিনেমাহল রক্ষা করতে কে চায়? এই মুহুর্তে যদি এমন প্রশ্ন করা হয়, তাহলে বেশিরভাগ সিনেমার কলাকুশলি ও দর্শকরা থাকবেন সিনেমা হলের বিপক্ষে। এর কারণও আছে অনেক। এ প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন,‘ হল মালিক সমিতি যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকে যে হল বন্ধ করে দিবে, তাহলে দিক। এ বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। এতে আমাদের চলচ্চিত্রের কোনো ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করছি না। এরা শুধু ভারতীয় ছবি আমদানী করার ধান্দা করছে। সরকার যেনো একটু নমনীয় হয় এজন্য এরকম করছে, এছাড়া অন্যকিছু নয়।’ গেল কয়েকদিনে নানা আলোচনায় পরিচালক কিংবা সিনেমার কলাকুশলীরা সেটাই বুঝিয়েছেন, এখন আর সিনেমা হলের দরকার নেই। সিনেমা হল এখনকার দিনে অনেকটা কম্পিউটারের যুগে অফিসের টাইপ মেশিনের মতো হয়ে গেছে। পুরো বাংলাদেশে যতগুলো সিনেমা হল আছে। একটি সিনেমা হলেরও পরিবেশ ভালো না। পরিবার নিয়ে ছবি দেখার মতো যোগ্য নয় কোন সিনেমাহল। হাতে গোনা দুয়েকটায় পরিবার নিয়ে যাওয়া যায়,তাও সবশ্রেনীর দর্শক সেখানে যাবে না। 

অনেক আগ থেকেই অনেকের দাবি ছিল যে সিনেমাহলের পরিবর্তে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক। দেশের ৬৪ টা জেলায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক সরকারের অর্থায়নে। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। সিনেপ্লেক্স না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ এই হল মালিকরাও। তারা তাদের পুরনো জীর্ন হল ধরে অবাদে ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। এখন আসি নিম্ন ভিত্তদের কথায়। সারাদেশে যদি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হয়, অবশ্যই টিকেটের দাম কমবে। আর যারা সিনেমা দেখেন, তারা ৬০ টাকার বদলে ১০০ টাকা দিয়ে দিব্যি দেখতে অনাগ্রহী হবে না। বর্তমান সময়ে সিনেপ্লেক্সে সর্বনিম্ন টিকেটের দাম ১৫০ টাকা। ঢাকাতে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি সিনেপ্লেক্স। বিশেষ সময় ও আলোচিত ছবি ছাড়া যা অনেক সময়ই খালি যায়। কিন্তু সিনেমা হল যদি নেই হয়ে যায়, দর্শক নিশ্চয়ই সেখানে ভীড় করবে। আর সিনেমা মানে হচ্ছে বিনোদন, সেটা সব শ্রেনীর দর্শকের ক্ষেত্রেই বলা যায়। নিম্ন শ্রেনীর মানুষরাও চাইবে তার পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে। আর সেটা যদি সিনেপ্লেক্সের মতো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। তাহলে তো সেটা সবার আগ্রহের বিষয়ই হবে। অল্প কয় টাকা বিষয় হবে না। উচ্চবিত্তদের জন্যও ব্যবস্থা থাকবে। 
আপনার যদি এভেঞ্জার্স দেখতে হয়, বাদ দিন হলিউড সিনেমা। দেশীয় ভালো ক্যামেরার কোন সিনেমা আপনি যেকোন হলে দেখতে পারবেন না। ঢাকার ফার্মগেটের একটি হলে আয়নাবাজি দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ভাবসা গরমে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। এমন ব্যস্ত ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্টে কিভাবে এইসব আবর্জনা বেষ্টিত সিনেমা বেঁচে আছে সেটা কর্তৃপক্ষই ভালো জানে। অন্ধকার স্কিন, যেখানে কালার বলতে কিছু নেই আর সাউন্ডের অবস্থা তো যাতা। এসব হলে ডিরেক্টর সিনেমা মুক্তি দিয়ে কি দেখাবে?

এছাড়া এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ধব্বংসের অন্যতম মূলহোতা হলমালিকদের খাই। ভালো ও নিয়মিত প্রডিউসাররা এই ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে যাওয়া ও সিনেমায় ইনভেস্ট না করার অন্যতম কারণ হল মালিকরা। একটা সিনেমা মুক্তি দিতে গেলে হল মালিকদের পদে পদে টাকা দিতে হয়। অথচ সিনেমা হিট হলে কোনো টাকার হিসেব তারা দেয়না, সব পকেটে ঢুকায়। উল্টো অমুক জায়গায় টাকা, তমুক জায়গায় টাকা দিতে হয় প্রডিউসারকেই। আর এভাবে ভর্তুকি দিতে দিতে প্রডিউসাররা ইন্ডাস্ট্রি থেকেই বিদায় হয়ে গেছে। ফলে এখন ভালো ছবিও হচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে মেশিন ভাড়া কেন প্রডিউসার দিবে? বুকিং করে হল মালিকরা, কিন্তু সেটার কমিশনের টাকা কেন প্রডিউসার দিবে? হলের ব্যানার, পোস্টার, সেটা দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানোর টাকা দিবে প্রডিউসার, হলে রিপ্রেজেন্টর রাখতে সেখানে টাকা দিতে হচ্ছে প্রডিউসারকে! সব জায়গায় টাকা দিতে হচ্ছে প্রডিউসারকে, তাহলে হলের দরকার কী! দিনে দিনে হলের অবস্থা গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে। এতো অর্থ লগ্নি করে সেখান থেকে প্রডিউসাররা কী পাচ্ছেন?

ভালো সিনেমা দেখতে দর্শক ভীড় করবে শিল্পকলা একাডেমিতেও। দেশের যেখানে যেখানে তাদের অডিটরিয়াম রয়েছে, সেখানে ছবি প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা যায়। ডিজিটাল এই যুগে গুদামঘরের কোন দরকার নেই।

অনলাইন এ যুগে সিনেমা দেখানোর অন্যতম বড় মাধ্যম হতে পারে ইউটিউব ও অনলাইনের নানা প্লাটফর্ম। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আইফ্লিক্স ভালো মানের কনটেন্ট প্রকাশ করছেন। যার মাধ্যমে তারা টাকাও আয় করছেন। দেশের সেরা নির্মাতারা এই মাধ্যমে কাজ করছেন। ভালো অভিনয়শিল্পীরা কদর পাচ্ছেন এখানে। ইউটিউবও সময়ের ব্যবধানে আর্থিক লাভবান করবে। ইতিমধ্যেই বিগ বাজেটের মিউজিক ভিডিও সেখানে প্রকাশ করা হচ্ছে। সেখানে বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। ক্রমে যদি অনলাইনে টিকিটিং সিস্টেম করা হয়। তাহলে একজন নির্মাতা ও প্রযোজকও জানতে পারলো তার সিনেমার রেসপন্স কি। তিনি আর্থিকভাবেও স্বচ্ছল থাকতে পারলেন। মধ্যম যে সুবিধাভোগি, তাদের উদয় হবে না।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭