ইনসাইড আর্টিকেল

চলে যাওয়ার ৬ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/03/2019


Thumbnail

ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার ২০ মার্চ। বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের এইদিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি।১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবপুরে তাঁর জন্ম। জিল্লুর রহমানের পিতা মেহের আলী মিঞা ছিলেন একাধারে আইনজীবী, ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জিল্লুর রহমানকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের পর জিল্লুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলেই বাংলাদেশ গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে। ওই সময় তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা না রাখলে দেশের জনগণ গণতন্ত্র ফিরে পেত না।’ সত্যিই বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের জন্য জিল্লুর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য।দেশ ও জাতির জন্য আমৃত্যু তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, বাংলাদেশের ইতহাসের পাতায় তা স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে। দলমত নির্বিশেষে তিনি সবার আপন ছিলেন। নিজ কর্মদক্ষতা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে এভাবেই গড়ে তুলেছিলেন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে জিল্লুর রহমান কখনো বিচ্যুত্ হননি। ১৯৪৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিল্লুর রহমানের যে রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল আমৃত্যু সে থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত্ হননি। ১৯৪৬ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যয়নকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন তিনি। পাকিস্তান আমল থেকে এ দেশের ওপর অনেক ঘাত-প্রতিঘাতে জিল্লুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ট সৈনিক।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জিল্লুর রহমানের ছিল সক্রিয়া ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ১৯৫২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সমাবেশে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি ফজলুল হক হল ও ঢাকা হলের মধ্যবর্তী পুকুরপাড়ে যে ১১ জন ছাত্রনেতার নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তিনি ছিলেন অন্যতম।১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনিসংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণ-আন্দোলনে জিল্লুর রহমানের ছিল সক্রিয়া অংশগ্রহণ। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করে ২০ বছর কারাদণ্ড ও সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে।
জিল্লুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ১৯৭২ সালে জিল্লুর রহমান প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৭৪, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে ফের এ পদে নির্বাচিত হন। ৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর জিল্লুর রহমান চার বছর কারাভোগ করেন। তিনি ১৯৮৬, ৯৬ ও ২০০১ সালে সালে সাংসদ নির্বাচিত হন। ৮৬ সালে সাংসদ থাকার সময় কারাবরণ করেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানের মৃত্যুর পর অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়েছিলেন প্রয়াত এই রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এর মধ্যেও দলের হাল ছাড়েননি, যখনই সংকট এসেছে তখনই তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন দলের জন্য।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি আইন জারির পর ১৬ জুলাই রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হন।  সেই সময় তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দলের জন্য তার সে সময়ের ভূমিকা আওয়ামী লীগ কখনো ভুলবে না।  ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

এ মহান নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বনানীতে মরহুমের কবরস্থানে সকাল ৮টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মিলাদ মাহফিল কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বাদ আছর এই মরহুমের বাসভবনে (বাড়ি-২২, সড়ক-১০৮, গুলশান-২) মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। মাহফিলে আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহীদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

 

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭