লিভিং ইনসাইড

কিটি পার্টি: নারীদের এক অন্য ভূবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/03/2019


Thumbnail

বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই বিয়ে হয়ে যায় আজমেরীর। বিয়ের পর থেকেই দেখতে হচ্ছে স্বামীর সেই ব্যস্ততা। এর মাঝেই পড়াশুনা চালানো, সন্তানের জন্ম আর লালনপালন, সংসার দেখাশোনা, এরপর নিজে চাকরিতে ঢোকা- এভাবে সময় গড়িয়েছে অনেক। হঠাৎ করেই সামাজিক মাধ্যমে বেশি সক্রিয়তা হলো। সেখানে ধীরে ধীরে বন্ধুদের খুঁজে পাওয়া, সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা। হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে পেয়ে যোগাযোগ, একসঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ শুরু। কখনো কারও বাসায়, কখনো রেস্তোরাঁয় নিয়ম করে আজমেরীদের বসা হয়, আড্ডা হয়।

মেয়েদের এ ধরনের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ‘কিটি পার্টি’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো এই আড্ডাগুলোতে পুরুষ বা স্বামীরা থাকে না।

কিছুদিন আগের দিকেই ফিরে তাকাই। বাড়ির কর্ত্রীদের পুরোটা সময়ই স্বামী, সন্তান, শ্বশুরবাড়ি নিয়ে কেটে যেত। তাদের দেখভাল করে নিজেদের দেখার সময়টা প্রায় ছিলোই না। আর চাকরীজীবী নারীরা কাজের বাইরের পুরো সময় ঢেলে দিত পরিবারে। এই যে অন্যের জন্যে সব করা মানেই নিজের জন্য হতাশা ডেকে নিয়ে আসা, মনের মধ্যে অতৃপ্তি।

তবে বাইরে কাজ, চলাফেরার বদৌলতে আস্তেধীরে নারীরা নিজেদের বদলালো। পরিবারের বাইরে একটা জগৎ হতে শুরু করলো। দুচারটে সহকর্মী, পুরনো সহপাঠী, বন্ধু, প্রতিবেশী বা সন্তানের স্কুলের বন্ধুদের মায়েদের নিয়ে তৈরি হলো নারীদের ছোট ছোট দল। এই নারী দলের সদস্যরা কেউবা ৩০ বছরে, কেউ ৫০ বছরে এসে নিজেদের মেলে ধরার তাগিদ পেয়েছে, সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো রয়েছেই। নিয়মিত দেখা হওয়া, আড্ডা, সময় কাটানোটাও চলে বেশ।

কেমন হয় এই কিটি পার্টি

এর বিভিন্ন ধরন-গড়ন আছে। কখনো দুপুরের লাঞ্চ বা বিকেলের চা, কখনো আবার আয়োজন করে রাতের খাবারটাও একসঙ্গে সারছেন। সেটা কোনো এক রেস্তোরাঁয় বা কারও একজনের বাড়িতে। এ ধরনের আয়োজনের পুরোটা জুড়েই নারীদের দখল থাকে। এখানে পুরুষ বা স্বামী থাকে না কিন্তু।

খুব বেশি নেতিবাচকতা না থাকলে এটাকে বাঁকা চোখে দেখার কেউ নেই। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন সমাজে এ ধরনের সামাজিকীকরণ কখনো কখনো জরুরি।

কেন জরুরি

এ ধরনের মিথস্ক্রিয়া বা ইন্টারঅ্যাকশন একঘেয়েমি দূর করে। অনেকেই ভাবেন, নারীরা একসঙ্গে থাকা মানেই কেবল পরচর্চা বা পরনিন্দা। এটা তো সবসময়ে ঠিক নাও হতে পারে। আলাপের মাধ্যমে বরং অন্যদের সম্পর্কে জানা এবং নিজের সম্পর্কে জানিয়ে একধরনের বন্ধন গড়ে ওঠে। এ ধরনের গ্রুপে সৃজনশীল কাজগুলো সম্পর্কেও অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। আর এতে সর্বোপরি সমাজই উপকৃত হয়।

এ আয়োজন বাড়ির গণ্ডি পেরিয়ে এখন বাইরেও হচ্ছে। প্রত্যেক মানুষেরই তার নিজের জীবনকে উপভোগ করার অধিকার রয়েছে। একটা মেয়ে যত বেশি বাইরে যাবে আর ১০ জন মেয়ের সঙ্গে মিশলে সে তত সমৃদ্ধ হতে পারবে। খাওয়া-দাওয়ার বাইরে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনাও হয়। পারিবারিক অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সবার সঙ্গে পরামর্শ করা যায়। এতে একটা একতা থাকে। কোনো একটা উৎসব বা বিশেষ সবাই নিজেদের ফুটিয়ে তুলতে পারে। এর জন্য নিজের একটু বাড়তি যত্ন বা আয়োজনও তো কম নয়।

এ দলগুলোতে থাকলে একে অন্যের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসা সহজ হয়। এখানে এমন এক বন্ধন হয় যা একজন নারীকে চিন্তা করতে শেখায়, পরিবারের বাইরেও যে তার বড় আরেকটি পরিবার আছে এবং সে একা নয় সেটা সে বোঝে।

সংসার সামলানো, সবাইকে ম্যানেজ করে চলা, স্বামী, শাশুড়ি বা ননদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কৌশল, অফিস সামলানোর মতো বিষয়গুলোর সমাধান এই পার্টি থেকে উঠে আসতে পারে। নিজেদের মনের বিভিন্ন অনুভূতি নিয়েও আলাপ আলোচনা হয়।

এই পার্টিতে কেউ নিজের রান্না, নিজের কাজ, অর্জনগুলো নিয়ে হাজির হয়। এতে নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ তো হয়ই, আবার অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হয়। কোনো দল আবার বছরে অন্তত একবার বাইরে বেড়াতেও যায়। এতে বিভিন্ন কথার ভাজে থাকে নিজেদের দুঃখ-কষ্টের অনেক কথা। সঙ্গে থাকে অনেক হাসি আর খুনসুঁটি।

তবে এড়িয়ে চলুন কিছু বিষয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই মিথস্ক্রিয়া বেশি হলে ভালো হয়। তবে নিজেদের সৃজনশীলতার যাতে বিকাশ হয়, সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। নেতিবাচকতাগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি করে ভালো বিষয়ের চর্চা করতে হবে। চাকরিজীবী বা সংসারী যেকোনো নারীর সৃজনশীলতা এবং পারস্পরিক যোগাযোগে আস্থা রাখতে হবে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে নারীদের অন্য ভূবন। সেখানে কোনো সমালোচনা, কাউকে নিয়ে কটূক্তি, বিশ্বাস নষ্ট করার মতো কাজগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭