ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী শিক্ষকদের সফল হওয়ার ১০ উপায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/03/2019


Thumbnail

আপনি কি আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষক বুদ্ধিজীবি? আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষক বুদ্ধিজীবি হওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত কি আপনার শিকে কিছু জোটেনি? আপনি কি হতে পারেননি উপাচার্য কিংবা সরকারী কোন কমিশনের সদস্য? পাননি সরকারী কোন লাভজনক পদও? তাহলে আপনাকে শিখতে হবে আওয়ামী বুদ্ধিজীবি হয়ে কিভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। কিভাবে আপনি নীতি নির্ধারকদের নেক নজড়ে পড়বেন এবং কিভাবেই বা আপনি পেতে পারেন সফলতা। বাংলাদেশে এখন শিক্ষক বুদ্ধিজীবিদের কাছে সফলতা মানে হলো কোন পদ পদবি পাওয়া। ভিসি উপচার্য হওয়া অথবা কোন ব্যাংকের চেয়ারম্যান কিংবা কোন কমিশনের চেয়ারম্যান মেম্বার হওয়ার মত নানা রকম পদের সমাহার রয়েছে শিক্ষক বুদ্ধিজীবিদের জন্য। কিন্তু সবার ভাগ্যে জোটে না এ সমস্ত লাভজনক পদ। কিভাবে একজন শিক্ষক বুদ্ধিজীবি এ ধরনের লাভজনক পদ পেতে পারে? আসুন জেনে নিই তার কিছু কৌশল: 

১. আপনি যদি আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষক বুদ্ধিজীবি হোন, তাহলে আপনি সবসময় টকশোর দিকে নজড় রাখেবেন। সুযোগ পেলেই টকশোতে যাবেন। পারলে আপনি টকশোর যারা ব্যবস্থা করে তাদের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রাখবেন, সখ্যটা তৈরী করবেন। তাদের কাছে তদবির করবেন তারা যেন আপনাকে নিয়মিত টকশোতে হাজির করে। টকশোতে উপস্থিত না হতে পারলে আপনার ভাগ্যে কোন কিছু জোটার সম্ভাবনা খুবই কম।

২. এইসব টকশোতে গিয়ে আপনি সরকারের যেকোন কাজ, হোক না তা যত সমলোচিত কাজই। তার প্রশংসা করবেন। যেকোন মূল্যে টকশোতে আপনি বিরোধী দলকে সমলোচনা করবেন এবং সরকারের যেকোন কর্মকাণ্ডের প্রশংসার ফুলঝুরি ফুটাবেন।

৩. শুধু টকশো করলেই আজকাল কপাল খুলতে নাও পারে। কারণ এখন শিক্ষক তর্কবাগীশের সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক বেড়ে গেছে। সেই জন্য টকশোর পাশাপাশি আপনাকে কলাম লিখতে হবে। দেশের প্রথম শ্রেনীর জাতীয় দৈনিকগুলোতে (প্রথম আলো, ডেইলী স্টার বাদে) আপনি নিয়মিত কলাম লিখতে পারেন। তবে বিষয়ে আপনার খুব সীমাবন্ধ থাকতে হবে। এসব কলাম হতে হবে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশংসা সূচক, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গুণকীর্তণ করবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষীকি, ৭ মার্চ, ১৭ মে, ১৫ আগষ্টের মতো দিবসে লিখতে পারলে আরও ভালো।

৪. সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবেন। তাদের টেলিফোন নাম্বার নিজের মোবাইলে সেইভ করে রাখবেন। কারণে অকারণে তাদেরকে ফোন করবেন। তাদের কোন বক্তৃতা বিবৃতি দেখলে প্রশংসাসূচক টেক্সট মেসেজ পাঠাবেন। তাদের সঙ্গে গড়ে তুলবেন একটা নিবির সখ্যতা, যেন আপনার স্বপক্ষে তারা ভোট দেয়।

৫. শুধু সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলেই হবে না। এখন আমলারাও অনেক ক্ষমতাবান। তাই আমলাদের সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক রাখতে হবে। আমলাদেরও নেক নজরে থাকতে হবে। আমলাদেরও হাই হ্যালো করতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে। তাদের পরামর্শ এবং কথাবার্তা শুনতে হবে।

৬.বাংলাদেশে এখন আওয়ামী সমর্থক হাজারো পেশাজীবি সংগঠন রয়েছে। এসব পেশাজীবি সংগঠনগুলোর যদিও তেমন মূল্যবান নয়। তবে সরকারের নেক নজড়ে আসার জন্য এসব পেশাজীবি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা জরুরি। এসব পেশাজীবি সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে তুলবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যেমন নীল প্যানেল রয়েছে বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যেমন আওয়ামীপন্থী প্যানেল রয়েছে বা আওয়ামীপন্থী শিক্ষক বুদ্ধিজীবিদের যেমন বিভিন্ন সংগঠন আছে, সেগুলোর সঙ্গে সক্রিয়া এবং সম্পৃক্ত থাকতে হবে আপনাকে।

৭. আপনাকে এই পেশাজীবি সংগঠনের সঙ্গে শুধু যুক্ত হলেও চলবে না। এই পেশাজীবি সংগঠন থেকে আপনাকে জাতীয় প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটের মতো বিভিন্ন জায়গায় গোল টেবিল বৈঠক, আলোচনাসভার মত নানা রকম অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেন। সেই সমস্ত অনুষ্ঠানে সরকারের সাফল্য, সরকারের উন্নয়ন কীভাবে সংঘটিত হয়েছে, সরকার কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেই সম্পর্কে আপনাকে বিষদ তথ্য এবং গুণকীর্তন করতে হবে।

৮. আপনি যদি ভালো পদে অধিষ্ঠিত হতে চান তাহলে আপনাকে আরেকটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। শুধু কলাম বা টকশো নয় আপনাকে একটা গ্রন্থ লেখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। দু’চারজন ছাত্রকে দিয়ে আপনি যেকোনো একটা গ্রন্থের পটভূমি তৈরি করে ফেলুন। কি বিষয়ে গ্রন্থ লিখতে হবে সেটি আপনি নিশ্চই জানেন। আপনি লিখতে পারেন সরকারের গত দশ বছরের সাফল্য। সরকার গত দশ বছরে নিরাপদ সড়কে কি কি অর্জন করেছে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কি কি সাফল্য অর্জন করেছে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে ‘পূর্নাঙ্গ গবেষণা গ্রন্থ’ নাম দিয়ে গ্রন্থ লিখতে পারেন। অবশ্য চিন্তা করবে না, এজন্য আপনাকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে না। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থীরা আছে তাঁরাই আপনাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।

৯. বাংলায় একটি কথা আছে, শুধু নিজে ভালো করলেই সাফল্য আসে না, অন্যের খারাপ করতে হয়। এজন্য শিক্ষক বা বুদ্ধিজীবী হিসেবে আপনি যতই ভালো করুন না কেনো যারা বিভিন্ন পদে রয়েছে গোপনে গোপনে তাঁদের ক্ষতি করতে হবে, তাঁদের কর্মকান্ডের সমালোচনা করতে হবে। তাঁদের ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধাকদের মনে বিষ ঢালতে হবে। তাহলেই না সরকারের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হবে। টানাপোড়েন তৈরি না হলে আপনার জায়গা হবে কীভাবে?

১০. আপনি যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন, সেখানকার ছাত্রলীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখবেন। তাদের সকল দাবি আপনি মেটানোর চেষ্টা করবেন। এমনকি সেজন্য যদি আপনার শিক্ষক আদর্শকে জলাঞ্জলি দিতে হয়, তাতেও কার্পণ্য করবেন না। তাতেই খুলে যেতে পারে আপনার ভাগ্য।

আশা করি যে এই কৌশল অবলম্বন করলে যেকোনো আওয়ামী পন্থী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭