নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 24/03/2019
একাত্তরের মার্চ মাস একদিকে যেমন আন্দোলন আর সংগ্রামের সাক্ষী, ঠিক তেমনি পাক শাসকদের নাটক, প্রহসন আর ষড়যন্ত্রেরও সাক্ষী হয়ে আছে এই মাস। মার্চের প্রতিটি দিনের মতো আজকের দিনেও ক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ সারাদেশ। একদিকে পাক শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে প্রহসনের আলোচনা চালাচ্ছিল। অন্যদিকে নির্বিচারে গণহত্যার জন্য ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ সব ধরনের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হচ্ছিল।
একাত্তরের আজকের দিনে পাক শাসকদের আলোচনার নামে প্রহসনে ক্ষুব্ধ বঙ্গবন্ধু পাক সামরিক জান্তার উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোন সমাধান না হলে বাঙালী নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে।’
এদিন করাচী থেকে সোয়াত নামের একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এতে ৫ হাজার ৬৩০ টন অস্ত্র আনা হয়। অস্ত্র নামাতে গিয়ে বাঙালী শ্রমিকরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাক হানাদার সামরিক অফিসারদের মুখের ওপর শ্রমিকরা অস্ত্র নামাতে অস্বীকৃতি জানায়। অবরুদ্ধ করে রাখে জাহাজটিকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুবরণ করে বেশ কয়েকজন স্বাধীনতাকামী শ্রমিক।
২৫ মার্চের হত্যাযজ্ঞের জন্য যখন চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র নামানো হচ্ছিল ঠিক তখন ইয়াহিয়ার পরামর্শকরা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সামরিক জান্তার পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন এম এম আহম্মদ, বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান। সকালে ও সন্ধ্যায় দু’দফা বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, ইয়াহিয়ার কাছে দাবি জানালে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। ‘বল এখন প্রেসিডেন্টের কোর্টে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একাত্তরের আজকের দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডির বাসভবনের সামনে সমাবেত হতে থাকে মুক্তিকামী জনতা। তাদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় বিরামহীনভাবে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোন সমাধান না হলে বাঙালীরা নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে। আমরা সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
এদিন ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে পাকিস্তান থেকে খান আবদুল কাইয়ুম ঢাকা আসেন। ঢাকা পৌছানোর পরপরই তিনি ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে তিনি সর্বদা নমনীয় ও আন্তরিক মনোভাব পোষণ করেন। পূর্ব পাকিস্তান বাস্তবিকই শোষণ ও বঞ্চনার শিকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু এমন বৈঠক আর আলোচনার আড়ালেই যে বিভীষিকাময় গণহত্যার ষড়যন্ত্র চলছিল, তা বাঙালী জাতির কাছে ছিল ধারণারও বাইরে।
একাত্তরের আজকের দিনে প্রহসনমূলক আলোচনার পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা একে একে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন। ভুট্টোর সফরসঙ্গী হয়ে ঢাকায় আসা ১৩ জনের ৭ জনই এদিন ঢাকা ত্যাগ করেন। ২৩ মার্চ রাত হতে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলগাড়ি, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালীদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে অন্তত ১০০ জন নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি আহত হয়।
এদিনও সারা বাংলার অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল। এমনকি ইস্ট বেঙ্গল পাকিস্তান রাইফেলসের যশোর ট্রাংক রোডের অফিসেও ওড়ানো হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের নিশান।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/এমআর
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭