লিভিং ইনসাইড

কোন সন্তানকে বেশি ভালোবাসে বাবা-মা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/03/2019


Thumbnail

সামনের মাসে বাবাকে নিয়ে ডাক্তারটা না দেখালেই নয়, দিন দিন তার বুকের ব্যথাটা বেড়েই যাচ্ছে, বাইপাসটা করাতেই হবে বিশাল খরচান্ত ব্যাপার। একার হাতে কীভাবে সামলাবে বুঝতে পারছে না নজরুল সাহেব। দুই ভাইবোনকে জানানো হলো। বড় ভাইটি কৌশলে এড়িয়ে গেলো, বললো আপাতত সামলে নিতে, পরে সে দেখবে। আর বাইরে থাকা ছোটবোনটি নানা অজুহাতে কেঁদেকেটে দায়িত্ব এড়িয়েই গেলো। অগত্যা একাই বাবার চিকিৎসার জন্য ছুটতে হবে। বাবা আবার মন খারাপ করে বললো বাকি দুই সন্তানকে কাছে না পেলে এতবড় চিকিৎসা সে করবে না! বাহ, যেই সন্তান তাকে নিয়ে খুব একটা বিচলিত হলো না, তাদেরই বাবা এত ভালোবাসলো! তার কোনো অবদান নেই তবে!

কোনো এক মা বা বাবাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার কোন সন্তানটি বেশি প্রিয়? কোনো উত্তর পাবেন না। কারণ বাবামায়ের কাছে তো সব সন্তানই সমান। ভালোবাসা, আদর, মমতা সবই সমান। এটা প্রকাশ করতে হয় না, সন্তানেরা আর চারপাশটা এমনি বুঝে নেয়।

তবে, ছোট হোক বা বড় হোক, সন্তানেরা অনেক সময় সময়েই একটা অভিযোগ তোলে। তার বাবা মা তার থেকে তার অপর কোনো সহোদরকে বেশি ভালোবাসে। কেন বেশি ভালোবাসে? তার কোনো উত্তর নেই। সর্বসাধারণ বলবে এটা একেবারেই ভুল কথা। বাবা-মায়ের চোখে সবাই সমান। কিন্তু বাস্তব হতে পারে আলাদা। কখনো কখনো কোনো পরিস্থিতিতে বাবা-মা সন্তানদের ভিন্ন চোখে দেখতে পারে।

কেন হয় এমন? উত্তর হতে পারে যে- কোনো সন্তান যদি বাবা-মাকে বেশি ভালোবাসে, তাদের বেশি খোঁজখবর রাখছে, দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখছে না এমন সন্তানদের বাবা-মা একটু আলাদা দৃষ্টি থাকতেই পারে। তাদের মনে হয় ইস, ছেলে বা মেয়েটা আমাকে নিয়ে কতোই না ভাবে। যে সন্তানটি একটু কম খোঁজ রাখছে, তাকেও ভালোবাসে। তবে হয়ত সামান্য হলেও কম। এমনটাই তো হওয়ার কথা যে বেশি দায়িত্ববান সন্তানই বাবা-মায়ের বেশি প্রিয় হবে।

কিন্তু পরিস্থিতি তো ভিন্ন হতেও পারে। যে সন্তানটি বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের যাবতীয় খোঁজ রাখছে, খরচাপাতি, অসুখবিসুখ, খাওয়াদাওয়া, ভালোলাগা আর মন্দলাগার তদারকি করছে- তাকেই যদি কম ভালোবাসা হয় সেটা কেমন হয়? এমনটাও কিন্তু বাস্তবে ঘটে। যে সন্তানটি বাবা-মাকে আগলে রাখে তার প্রতি ভালোবাসার প্রদর্শনটা কম হয়। বেশি হয় সেই সন্তানটির প্রতি যে কিনা বাবা-মায়ের প্রতিও ফরমাল হয়। এই যেমন দূরে বসে মাঝেমাঝে ফোনে খোঁজ নেওয়া, কর্তব্যের খাতিরে কিছু দায়িত্ব পালন পর্যন্তই শেষ। মজার ব্যাপার হলো, বাবা-মা যেন এই দূরে থাকা, দায়িত্ব এড়িয়ে চলা সন্তানগুলোকেই বেশি ভালোবাসে।

শুনতে কেমন লাগলেও এটা সত্যি। প্রশ্ন আসে কেন হয় এমন। এটাকে স্বার্থপরতাও বলা যায় না। মনস্তত্বও এটা নিয়ে বেশি দূর এগোতে পারেনি। এমনটা হতে পারে যে বাবা-মা হয়তো কাছের দায়িত্ববান সন্তানটির প্রতি একেবারে বেশি অভ্যস্ত হয়ে যায়। তারা তো জানেই এই সন্তান তাদের ছেড়ে যাবেনা কখনো। তাই তাদের কাছে বেশি ভালোবাসা দেখানোর কিছু নেই। যে সন্তান দূরে থাকছে, কম খোঁজ নিচ্ছে তাদের প্রতি ভালোবাসা বেশি আসে এক ধরনের আতঙ্কবোধ থেকে। আতঙ্কটা এখানেই যে, এই সন্তান যদি শেষ সময়ে কাছে না থাকে?

আমরা বরাবরই কাছে থাকা জিনিসটাকে কম মূল্য দিই, দূরের প্রতি কেমন একটা আকর্ষণ থাকে। যে সন্তান দূরে দূরে থাকে, তার প্রতি ভালোবাসা বেশি আসে তাই। মনে হয় সন্তানটাকে কতদিন কাছে পাই না, তার গলার স্বর কতদিন শুনি না, নিজের চোখে কতদিন দেখি না, কেমন করে না জানি দিন কাটাচ্ছে, কোনো সমস্যায় আছে কিনা- এগুলো ভাবতে ভাবতে চিন্তায় পড়তে হয়। আর দুশ্চিন্তার মাঝেই তো লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা।

যে সন্তানটি কাছে না থাকে, সে সাধারণত সুন্দর কথায় ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করে বাবা-মাকে। আর কাছে থাকা সন্তানটি হয়ত বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালনেই ক্লান্ত। তাই কোনো কথায় তাকে ভুলাতে হয় না। একটা বয়সের পর বাবা-মা এই কথাগুলোকেই মূল্যবান মনে করে, তাই ভালোবাসার বণ্টনটাও তেমনভাবে হয়।

আরেকটি বিষয় জরুরি। প্রতিটি বাবা-মা’ই একটা সময়ে এসে নির্ভরশীল হয়ে যায় সন্তানদের প্রতি। সেক্ষেত্রে দূরে, এড়িয়ে চলা সন্তানটি আদৌ তাদের দায়িত্ব পালন করবে কিনা তা নিয়ে সংশয় কাজ করে। এই সংশয়বোধ থেকেই মনে হয় তার সঙ্গে বেশি ভালো ব্যবহার করা হয়। যাতে সন্তানটি কোনোভাবে তাদের ভুলে না যায়। দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে কোনো দ্বিধা যাতে না করে।

এর প্রভাব আসে নানাভাবে। যে সন্তানটি প্রাণপণে বাবা-মায়ের জন্য খেটে মরে তার মনে তো ক্ষোভ আসতেই পারে। বাবা-মায়ের কাছে কি তাহলে আমার ভালোবাসার দাম থাকলো না? আপাতদৃষ্টিতে আমাদের মনে হবে যে দুষ্টুপ্রকৃতি বা বখাটে সন্তানগুলোর প্রতি ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বেশি টান থাকে, এটাও কি তেমন কোনো অনুভূতি? আমাদের চাওয়া ‘প্রতিটা সন্তান বাবা-মায়ের কাছে সমান’- এটা সবসময়ের জন্য সত্যি হওয়া।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭