ইনসাইড পলিটিক্স

মৃত্যুদণ্ডেই ঝুলে আছে তারেকের দেশে ফেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/03/2019


Thumbnail

আজ আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সঙ্গে দেখা করেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকশন। প্রথম সাক্ষাতেই আইনমন্ত্রী তারেককে ফেরত আনার বিষয়টি উপস্থাপন করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, তারেক জিয়াকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে আইনমন্ত্রী জানান যে, সরকারের পক্ষ থেকে যে অনুরোধপত্র দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার কি করলো? ওই সূত্র জানায়, নিক্সন বলেছেন,‘এটি একটি প্রকিয়াধীন বিষয়। এটার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই এর ফলাফল জানা যাবে।’ তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, নবনিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জানতে চান যে তারেক রহমান দেশে ফিরলে কি তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে? কারণ ব্রিটেনে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ। ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী অন্য দেশের কোন নাগরিক ব্রিটেনের আশ্রয় প্রাপ্ত হন এবং ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করা হলে সেই দেশে ফিরে গিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাকে সেদেশে ফেরানো হয় না। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারেক জিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। তাকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। সাধারণত নিম্ন আদালতে যদি যাবজ্জীবন দেওয়া হয় তাহলে উচ্চ আদালতে সেটা মৃত্যুদণ্ডে রুপান্তর সাধারণত হয় না। মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শাস্তি। উচ্চতর আদালত পুরো বিষয়টির ব্যাপারে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত না হলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে না। তবে আইনমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন, এটা আদালতের এখতিয়ারের বিষয়। সরকারের ইচ্ছে অনিচ্ছার কিছু নেই। সরকার তাকে দণ্ডিত করেনি। এটা করেছে আদালত এবং আইনমন্ত্রী এটাও বলেন যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখানে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ নেই। কাজেই আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিবে কি দিবে না এব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে না। একাধিক সূত্র বলছে, শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডের এই বিষয়টি নিয়েই তারেকের দেশে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। এনিয়ে তৃতীয়বারের মতো জানতে চাওয়া হলো তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সম্ভাবনা আছে কিনা। যদি তারেক জিয়ার মৃত্যুদণ্ডের নূন্যতম সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তবে বাংলাদেশ সরকার তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যে আবেদন করেছে এবং আবেদনের সঙ্গে তারেকের দুটি মামলার দণ্ড সংক্রান্ত আদালতের রায়ের কপি দেওয়া হয়েছে, সেই রায়ের কপির প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যে তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যে তারেক জিয়াকে ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৫ জুনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সেই জবাবের পর তারেক জিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয় বহাল থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে। যদি এটি প্রমাণিত হয় যে তারেক জিয়ার সঙ্গে জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা আছে এবং তারেক জিয়া অবৈধ অর্থ যুক্তরাজ্য বা অন্য কোনো দেশে রেখেছে, তাহলে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে। আবার যদি প্রমাণিত হয় যে তারেক জিয়া বাংলাদেশে ফিরে আসলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে তার দেশে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

উল্লেখ্য যে, তারেক জিয়ার কুশলীরাও লন্ডনে দেখাচ্ছেন যে, তারেক জিয়ার দেশে ফিরলে তার জীবননাশের আশঙ্কা রয়েছে, এবং এক্ষেত্রে তারা কাদের মোল্লার মামলার রায়ের উদাহরণ দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলেও পরে তা আপিল বিভাগের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। তারা বেগম খালেদা জিয়ার মামলারও উদাহরণ দিয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলাতে নিম্ন আদালত ৫ বছরের কারাদণ্ড দিলো, হাইকোর্ট তা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারেক জিয়া তার নিজেরও মানি লন্ডারিং মামলার উদাহরণ দিয়েছে। যেখানে নিম্ন আদালতে তারেক জিয়াকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল, উচ্চ আদালতে তাকে ৭ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কাজেই তারেক জিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদিও তারেক জিয়াকে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তারেক জিয়া যদি দেশে ফিরে আসেন তাহলে উচ্চ আদালতে যখন এই মামলা আপিলে যাবে তখন তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাতিল করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং এজন্যই তারেক জিয়া দেশে ফিরতে অনাগ্রহী বলে ব্রিটিশ সরকারকে জানিয়েছে। অবশ্য আজ ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তারা এই পুরো আইনগত প্রক্রিয়াটা দেখবেন। আইনগত প্রক্রিয়াতেই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রেখে, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে যা কিছু করার দরকার তারা করবে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭